প্রতীকী চিত্র।
দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে ফোনে আড়ি পাতার অনুমতি সরকারের জন্য আইনে রয়েছে। কিন্তু তা বলে মোবাইল ফোন হ্যাক করার অনুমতি রয়েছে কি? আইনজীবী, বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, সেই ছাড়পত্র নেই। তাই পেগাসাস স্পাইওয়্যারের সাহায্যে মন্ত্রী, বিরোধী নেতা, আমলা থেকে শুরু করে সাংবাদিক— যে কারও মোবাইল হ্যাক করার নির্দেশ যদি সরকার দিয়ে থাকে, তা হলে তা বেআইনি। তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিগ্রাফ আইনে ফোনে আড়ি পাতার অনুমতি থাকলেও, হ্যাক করার ছাড়পত্র নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী করুণা নন্দী বলেন, ‘‘পেগাসাসের সাহায্যে ফোন হ্যাকিং আইনত অপরাধ। কেউ যদি বিশ্বাস করেন যে, করদাতাদের অর্থ অপচয় করে রাজনৈতিক নেতাদের উপরে নজরদারি করা আইনসম্মত, তা হলে বলতে হয়, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৪৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সরকারও কারও ফোন হ্যাক করতে পারে না। মোবাইল বা কম্পিউটারের ক্ষতি করতে পারে না। সেখান থেকে তথ্য চুরিও করতে পারে না। দেশের নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, তদন্তের স্বার্থে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯ নম্বর ধারায় শুধুমাত্র ফোনে আড়ি পাতা, নজরদারি ও ডিক্রিপশন বা সাঙ্কেতিক বার্তা পড়ার অনুমতি দেওয়া রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আড়ি পাতার ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে টেলিগ্রাফ আইনের ৫ নম্বর ধারাতেও।’’ কিন্তু তা বলে মোবাইলে স্পাইওয়্যার ইনস্টল করে তথ্য চুরি আইনত অপরাধ বলে তাঁর যুক্তি।
পেগাসাস-কাণ্ডে মঙ্গলবার সংসদ ফের ভণ্ডুল হওয়ার দিনে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, সারা দেশে এত ফোনে নজরদারির টাকা (ফোন পিছু প্রায় এক কোটি) এল কোথা থেকে? কেন করদাতাদের টাকার এই অপচয়? বিরোধী শিবিরের কটাক্ষ, ফোন হ্যাক করার খরচ জোগাড় করতেই পেট্রল-ডিজেলের উপরে চড়া হারে কর বসিয়ে রেখেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এই কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরেই কংগ্রেস, শিবসেনার মতো বিরোধী দল যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) তদন্ত দাবি করেছে। কংগ্রেস আজ আরও এক ধাপ এগিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুলেছে। আজ দিনভর বারবার সংসদ অচল হয়েছে পেগাসাস নিয়ে। লোকসভায় স্লোগান উঠেছে, ‘গণতন্ত্রের হত্যা বন্ধ করো’। রাজ্যসভায় কোভিড নিয়ে আলোচনা হলেও, লোকসভা সারাদিন অচল ছিল। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, সব বিরোধী দলই অনড় যে, পেগাসাস নিয়ে সরকার সব প্রশ্নের জবাব না-দিলে, সংসদ চলতে দেওয়া হবে না।
কংগ্রেসের অভিযোগ, পেট্রল-ডিজেলে কর বসিয়ে সাধারণ মানুষের থেকে বিপুল অঙ্ক উসুল করে মোদী সরকার সেই টাকায় পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনে বিরোধীদের ফোন হ্যাক করছে। ২০১৯ সালে যখন প্রথম এর সাহায্যে আড়ি পাতার অভিযোগ ওঠে, তখন বিশেষজ্ঞদের অনুমান ছিল, ওই স্পাইওয়্যার লাইসেন্স কিনতে ৭০-৮০ লক্ষ ডলার খরচ হয়। ইজ়রায়েলের সংস্থা এনএসও কখনও পেগাসাস বিক্রির চুক্তি খোলসা করেনি। কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ১০ জনের ফোন হ্যাক করতে প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ, প্রতি ফোনে প্রায় এক কোটি।
কালই কেন্দ্র সংসদে জানিয়েছে, ২০২০-২১ সালে জ্বালানি তেলে কর বসিয়ে তারা ৩.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা আয় করেছে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘গোয়েন্দাগিরির খরচ জোগাতেই সরকারকে পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়াতে হচ্ছে।’’ বিরোধীদের প্রশ্ন, কেন্দ্র বা কোনও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা কি ইজ়রায়েলের এনএসও-র কাছ থেকে পেগাসাস কিনেছে? নাকি কেনেনি? সরকার সংসদের ভিতরে-বাইরে এই প্রশ্ন এড়িয়ে চলেছে। এনএসও অবশ্য আগেই জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র সরকারি সংস্থাকেই পেগাসাস বেচেছিল। এখনও পর্যন্ত মোদী সরকারের অবস্থান হল, বেআইনি ভাবে কারও ফোনে আড়ি পাতা হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রই মোবাইল ফোন হ্যাক করার ছাড়পত্র দিয়েছিল কি না, সে বিষয়ে সরকার মুখ খুলতে নারাজ।
২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ প্রথম জানিয়েছিল, ওই অ্যাপের মাধ্যমে ১,৪০০ জনের ফোন হ্যাক করার চেষ্টা হয়েছে। আর এক মেসেজিং অ্যাপ সিগনাল-এর কর্তৃপক্ষ আজ মনে করান, কেন্দ্র বিরোধী থেকে সাংবাদিকদের ফোনে নজরদারি করছে। কাকতালীয় হল, সরকার আগে এ রকম অ্যাপের ‘এনক্রিপশন’ (যে সাঙ্কেতিক কোডের মোড়কে সেখানে বার্তা আদান-প্রদান সুরক্ষিত থাকে) দুর্বল করার পক্ষে সওয়াল করছিল। হোয়াটসঅ্যাপ, সিগনালের মেসেজ ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড’ থাকে। সমস্ত বার্তা সাঙ্কেতিক কোডে রূপান্তরিত করা হয়। যা ফোনে আড়ি পেতে চট করে দেখা যায় না। ভুয়ো খবর রুখতে কোনও মেসেজ প্রথমে কে পাঠিয়েছে, তা জানার জন্য মোদী সরকার হোয়াটসঅ্যাপের এই ব্যবস্থা কিছুটা শিথিলের দাবি তুলেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy