সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে (সিএএ) মুসলমানদের গণ্ডির বাইরে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে এবং সিএএ-র পরে যখন এনআরসি আসবে, তখন তা থেকে বাদ পড়া মুসলিমদের আর কিছু করার থাকবে না বলে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ তুললেন মামলাকারীরা। সিএএ ও তার বিধিনিয়মে স্থগিতাদেশ চেয়ে তাঁদের অভিযোগ, সিএএ-তে মুসলিমদের প্রতি অবিচার হচ্ছে। অসমে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জিতে ১৯ লক্ষ মানুষ বাদ পড়েছেন। যার মধ্যে মুসলিম এবং অমুসলিম উভয়েই আছেন। এর পরে সারা দেশে এনআরসি-তে যখন মুসলিমরা বাদ পড়বেন, তখন তাঁদের প্রতি অবিচার হবে বলে তাঁদের অভিযোগ।
২০১৯ সালে মোদী সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে সিএএ পাশ করানোর পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলতেন, সিএএ-র পরেই সারা দেশে এনআরসি চালু হবে। চার বছর পরে এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই আইনের বিধিনিয়ম জারি করে সিএএ কার্যকর করতে চাইছে। কিন্তু শাহ এখন বলছেন, সিএএ-র সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই। আজ সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রও একই যুক্তি দিয়ে বলেছে, এনআরসি-র এর সঙ্গে সম্পর্কই নেই। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “কয়েক বছর আগে আদালতের বাইরে ঠিক এই চেষ্টাই করা হয়েছিল। সিএএ-র পরে এনআরসি হবে এবং দেশ থেকে মানুষকে উৎখাত করা হবে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। কিন্তু এনআরসি-র কোনও প্রসঙ্গই আদালতের সামনে আসেনি।” কিন্তু মামলাকারীদের আইনজীবী নিজাম পাশার যুক্তি, সিএএ ও এনআরএসি একই ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সিএএ-র বিধিনিয়মে স্থগিতাদেশ চেয়ে যাবতীয় আর্জি ৯ এপ্রিল শোনা হবে। সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারীদের আর্জি ছিল, আগামী শুনানি পর্যন্ত কাউকে সিএএ অনুযায়ী নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না বলে আদালতে বিবৃতি দিক কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্র এমন কোনও বিবৃতি দিতে রাজি হয়নি। সে ক্ষেত্রে আদালত এ বিষয়ে নির্দেশ জারি করুক বলে মামলাকারীরা দাবি তোলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ তাতে রাজি হয়নি। নাগরিকত্বের আবেদন খতিয়ে দেখার কমিটি, পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে কি না জেনে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, এখনও নাগরিকত্বের মঞ্জুরি দেওয়ার কমিটি, পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি। তবে কাউকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলে তার বিরোধিতা করে মামলাকারীদের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার রাস্তা খোলা থাকছে বলে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন। কেন্দ্রের তরফে মেহতা যুক্তি দিয়েছেন, “সিএএ-তে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না।”
২০১৯ সালে সংসদে সিএএ পাশ হওয়ার পরেই সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা জমা পড়েছিল। অভিযোগ ছিল, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাকি প্রায় সব ধর্মকে রেখে বাদ দেওয়া হচ্ছে মুসলিমদের। তাই এই আইন সংবিধান বিরোধী। এখনও পর্যন্ত মোট ২৩৭টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে একটি বাদে ২৩৬টিই সিএএ-র বিরুদ্ধে। যাবতীয় মামলা ঝুলে রয়েছে। ১১ মার্চ আইন পাশের ৪ বছর ৩ মাস পরে মোদী সরকার সিএএ-র বিধিনিয়ম কার্যকর করে। সেই বিধিনিয়মেই স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন মামলাকারীরা।
কেন্দ্র স্থগিতাদেশের দাবির বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিতে চার সপ্তাহ সময় চেয়েছিল। যুক্তি ছিল, সিএএ-র বিরুদ্ধে ২৩৬টি মামলা হয়েছে। সিএএ বিধিনিয়মে স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০টি আবেদন জমা পড়েছে। সুপ্রিম কোর্ট তিন সপ্তাহ সময় দিয়ে ৯ এপ্রিল শুনানি হবে বলে জানিয়েছে। মামলাকারীদের তরফে কপিল সিব্বল, ইন্দিরা জয়সিংহরা দাবি তোলেন, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত যেন কাউকে সিএএ-তে নাগরিকত্ব দেওয়া না হয়। হয় কেন্দ্র এই আশ্বাস দিয়ে বিবৃতি দিক, না হলে সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে নির্দেশ জারি করুক। কারণ, এ নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। কেন্দ্র নিজেই আইনের বিধিনিয়ম জারি করতে চার বছর তিন মাস সময় নিয়েছে। যেখানে তিন মাসের মধ্যে বিধিনিয়ম জারি হওয়ার কথা। কিন্তু সলিসিটর জেনারেল জানিয়ে দেন, তিনি এমন কোনও বিবৃতি দেবেন না।
সিব্বলরা বলেন, এক বার কাউকে নাগরিকত্ব দিলে, আর তা ফেরত নেওয়া যাবে না। জয়সিংহ বলেন, সে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বলুক যে, নাগরিকত্ব দিলেও তা আদালতের রায়ের উপরে নির্ভর করবে। বালুচিস্তান থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু নাগরিকদের হয়ে আইনজীবী রঞ্জিত কুমার যুক্তি দেন, “কেউ বালুচিস্তান থেকে উৎপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে এসে নাগরিকত্ব পেলে, অন্যের অধিকার কী ভাবে খর্ব হয়?” জয়সিংহের যুক্তি, এঁরা ভোটাধিকার পেয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মতে, এটি শুধু নাগরিকত্বের প্রশ্ন নয়, এর সঙ্গে সংবিধানের প্রশ্নও জড়িত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy