মিজ়োরামের মুখ্যমন্ত্রী লালডুহোমা মায়ানমারের দুই যুযুধান জঙ্গি সংগঠনকে আইজ়লে এনে সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষর করানোর পরে এ বার মিজ়োরামের সাংসদ কে ভানলালভেনা উত্তর-পশ্চিম মায়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন চিনল্যান্ড কাউন্সিলের দফতরে গিয়ে তাঁদের ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, ভারতের অংশ হওয়ার আহ্বান জানালেন। পরিস্থিতি যা, তাতে মিজ়োরাম সরকার ভারতের মায়ানমার সংক্রান্ত কূটনীতিতে সমান্তরাল ভূমিকা পালন করছে, কারণ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানানো হয়, মিজ়োরামের মুখ্যমন্ত্রী বা সাংসদ যা করছেন তা আইবিকে জানিয়েই করছেন।
সূত্রের খবর, মায়ানমারের ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলির নিয়ন্ত্রণ এখন চলে গিয়েছে চিনল্যান্ড কাউন্সিলের হাতে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর, চিন প্রদেশের দুটি গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী চিনল্যান্ড কাউন্সিল (সিসি) ও তাদের সশস্ত্র শাখা চিন জাতীয় সেনাবাহিনী (সিএনএ) এবং অন্তর্বর্তীকালীন চিন জাতীয় পরামর্শদাতা কাউন্সিল (আইসিএনসিসি) ও তাদের সশস্ত্র শাখা চিন ব্রাদারহুড (সিবি) লালডুহোমার মধ্যস্থতায় আইজলে এসে পারস্পরিক বিভেদ মিটিয়ে এক হয়ে গিয়েছে। দুই গোষ্ঠীর শান্তি চুক্তির পরে তৈরি হয়েছে চিন জাতীয় কাউন্সিল (সিএনসি)। এর পরেই মিজোরামের সাংসদ ভানলালভেনা ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে চিনল্যান্ড কাউন্সিলের ক্যাম্প এবং অফিস পরিদর্শন করেন। তিনি চিন বিদ্রোহীদের ভারত ইউনিয়নে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেন, যেহেতু মায়ানমারে এখন কার্যত কোনও সরকার নেই এবং সীমান্তের উভয় পাশেই একই জনগোষ্ঠীর বাস, তাই মিজ়ো-চিন এক হয়ে গেলেই ভাল।
উল্লেখ্য আমেরিকা সফরে গিয়ে লালডুহোমা মায়ানমার, বাংলাদেশ, মণিপুরের জ়ো-কুকি-চিন গোষ্ঠীদের এক ছাতার তলায় এনে পৃথক প্রশাসনের কথা বলায় বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল। তিনি অবশ্য পরে বলেন, যা করার ভারতীয় সংবিধানের আওতায় থেকেই করা হবে। প্রশ্ন উঠেছে, সেই পথে হেঁটেই কী তাঁর সরকার এ ভাবে মায়ানমারের একটি অংশকে ভারতের সঙ্গে জোড়ার পরিকল্পনা করছে? তাতে কী নীরব প্রশ্রয় রয়েছে কেন্দ্রের? মিজ়োরামের রাজ্যপাল হিসেবে প্রাক্তন সেনাপ্রধানকে পাঠানোও কেন্দ্রের মায়ানমার-নীতি কার্যকর করার সুচিন্তিত পদক্ষেপ বলেই মনে করা হচ্ছে। মায়ামমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সীমান্ত নীতি, বিদেশ নীতির প্রোটোকলের তোয়াক্কা না করে আইজ়লে এনে শান্তি চুক্তি করানো নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ভানলালভেনা জানান, তিনি রাজ্যপাল তথা অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ এবং আসাম রাইফেলসকে জানিয়েই মিজোরাম থেকে পায়ে হেঁটে মায়ানমারে চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ও চিন ন্যাশনাল আর্মির সামরিক সদর দফতর ক্যাম্প ভিক্টোরিয়া গিয়েছিলেন।
তাঁর কথায়, “আমি চিন কাউন্সিল সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার জন্য দেখা করেছি, কারণ চিন প্রদেশের সমস্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীই রক্তের সম্পর্কে মিজ়োদের সঙ্গে জড়িত। গত ছয় মাস ধরে মিজ়োরাম সীমান্তবর্তী মায়ানমারের অঞ্চলগুলি তারাই নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করছে।” মিজ়ো সাংসদের মতে, তারা সকলে মায়ানমারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করলেও সে দেশে এখন কোনও সরকারই নেই। তাই নিজেদের মঙ্গলের জন্য তাদের ভারতের অংশ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
অন্য দিকে, নাগাল্যান্ড বিধানসভা ভারত-মায়ানমারের মধ্যে মুক্ত চলাচল ব্যবস্থা (এফএমআর) এবং সুরক্ষিত এলাকা পারমিট (পিএপি) পুনঃপ্রবর্তন করা নিয়ে আলোচনা চালালো। মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও প্রস্তাব দেন বিধানসভা সদস্যরা ও ইএনপিও প্রতিনিধিরা এফএমআর ও পিএপি নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে আবেদন জানাবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)