ছিপছিপে গড়ন। মধ্যবয়সি পান্নালাল দেওঘরের চিত্রকূট পাহাড়ের রোপওয়ের মেরামতের কাজ করেন। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ রোপওয়েতে সমস্যা দেখা দেয়। যার জেরে পঞ্চাশেরও বেশি পর্যটক নিয়ে শূন্যে ঝুলতে থাকে ট্রলিগুলি।
দেওঘরের পান্নালালেল নাম এখন সকলের মুখে মুখে ঘুরছে।
হঠাৎ ঘড়ঘড় করে একটা শব্দ। তার পরই জোর ঝটকা। বিপদ আঁচ করতে পেরেছিলেন পান্নালাল। তত ক্ষণে বেশ কয়েকটি ট্রলি রোপওয়ের মাঝে আটকে গিয়েছিল। কিছু ট্রলি কেবল বেয়ে কিছুটা এগিয়েছিল। পান্নালাল বুঝেছিলেন, আর দেরি করা ঠিক নয়। বড় বিপদ ঘটে যাবে। গ্রামবাসীদের জুটিয়ে কাছে থাকা ট্রলিগুলি থেকে একের পর এক লোক নামিয়ে আনেন আটকে থাকা আরোহীদের।
নিজের জীবনের পরোয়া না করে দড়ি বেয়ে কাছের ট্রলিগুলির কাছে পৌঁছে যান তিনি। চারটি ট্রলি থেকে পর্যটকদের নিরাপদে নামিয়ে আনেন। নিজে একাই দশ পর্যটককে উদ্ধার করেছেন। তাঁদের কাঁধে নিয়ে হাসপাতালেও পৌঁছে দিয়েছেন। সেই পান্নালালই এখন সকলের ‘হিরো’।
ছিপছিপে গড়ন। মধ্যবয়সি পান্নালাল দেওঘরের চিত্রকূট পাহাড়ের রোপওয়ের মেরামতের কাজ করেন। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ রোপওয়েতে সমস্যা দেখা দেয়। যার জেরে পঞ্চাশেরও বেশি পর্যটক নিয়ে শূন্যে ঝুলতে থাকে ট্রলিগুলি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এক মুহূর্ত দেরি করেননি পান্নালাল। তিনি বলেন, “রোপওয়ের মেরামতির কাজ করার সুবাদে উদ্ধারকাজের প্রশিক্ষণও নিয়েছিলাম। সেটাই কাজে লেগে গেল।”
পান্নালাল তাঁর সঙ্গীরা দ্রুত দড়ি জোগাড় করে পর্যটকদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। তত ক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। কিন্তু তাতে থেমে থাকেননি পান্নলাল এবং তাঁর সঙ্গীরা। দড়ির মধ্যে চেয়ার বাঁধেন। সেই চেয়ারে করে দু’টি ট্রলি থেকে ছয় পর্যটককে নামিয়ে আনেন। তাঁদের হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে আসেন।
কাছাকাছি থাকা দু’টি ট্রলি থেকে পর্যটকদের উদ্ধার করলেও, রোপওয়ের মাঝপথে থাকা ট্রলির পর্যটকদের নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছিল। প্রায় দু’হাজার ফুট উচ্চতায় ঝুলছিল ট্রলিগুলি। পান্নালাল জানিয়েছেন, অন্ধকারের মধ্যে রোপওয়ের তার ধরে ঝুলতে ঝুলতে ১০০ ফুট দূর পর্যন্ত যান তিনি। সেখানে আটকে থাকা একটি ট্রলিতে জল, খাবার পৌঁছে দেন। তার পর ফিরে আসেন। সোমবার সকাল হতেই সেনার উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তাঁদের দেখে এগিয়ে আসেন পান্নালাল। সেনার সহযোগিতায় নিজের কোমরে দড়ি বেঁধে ৪০ ফুট উঁচুতে থাকা একটি ট্রলি থেকে চার পর্যটককে নামিয়ে আনেন।
রবিবার ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের রোপওয়ে দুর্ঘটনার ৪৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয় ট্রলিতে আটকে থাকা পর্যটকদের। ঘটনার দিনই এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। সোমবার উদ্ধারকাজ চলার সময় এক পর্যটক সেনা হেলিকপ্টারের দড়ি থেকে হাত ফস্কে নীচে পড়ে যান। তাতে মৃত্যু হয় তাঁর। মঙ্গলবারও উদ্ধারকাজের সময় এক মহিলা হাত ফস্কে পড়ে যান। গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যু হয় তাঁরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy