প্রতীকী ছবি।
অর্থনীতি নড়বড়ে। রাজকোষে এমনই টান যে, কার্যত নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা। এই অবস্থায় ইসলামাবাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপরে প্রবল চাপ সামরিক বাহিনী ও পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের। সেনার বক্তব্য, জাতীয় নিরাপত্তা অটুট রাখার চাপ সামলাতে পারবে না ভঙ্গুর পাক অর্থনীতি। বরং কূটনৈতিক সূত্রে খবর, দ্রুত বদলে যাওয়া ভূ-অর্থনীতিতে ভারতের সঙ্গে আপাতত সমঝোতার রাস্তায় হাঁটাই কৌশলগত ভাবে শ্রেয় বলে মনে করছে তারা।
কয়েক সপ্তাহ আগে ‘অতীতকে মাটির তলায় পুঁতে’ ভারতের সঙ্গে নতুন পথ চলতে শুরু করার ডাক দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। তার পর থেকে কিছুটা নরম পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে সে দেশের ভারত-নীতিতে। বহাল হয়েছে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি। বুধবার তাজিকিস্তানে ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনের ফাঁকে সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “যদি অন্য সমাধান না-থাকে, সামরিক সমাধান না-থাকে, তা হলে আলোচনা ছাড়া আর এগোনোর পথ কী? আলোচনার উপযুক্ত পরিবেশ ভারত তৈরি করতে পারলে,... তারা এক পা এগোলে, আমরা দু’পা এগোব।”
আজ ‘পাকিস্তান ইকনমিক কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল’ ভারত থেকে তুলো ও চিনি আমদানির নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের প্রতিবাদে তা জারি করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু তার ধাক্কা আর পাকিস্তান সামলাতে পারছে না বলেই সূত্রের দাবি। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এর পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে বাজওয়ার চাপও।
আমেরিকায় রাজনৈতিক পালা বদলের পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন আফগানিস্তান নীতি রচনা করছেন। সেখানে ট্রাম্প সরকারের তুলনায় ভারতকে বেশি জায়গা দেওয়ার কথা দিল্লি এসে বলে গিয়েছেন তাঁর দূত আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক দশক আফগানিস্তানে সংঘর্ষ চলায় পাকিস্তান বিশ্বের বড় শক্তিগুলির সঙ্গে দর কষাকষির সুবিধা পেয়ে এসেছে। কিন্তু তাকে পাকাপোক্ত আর্থিক লাভে পরিণত করতে পারেনি। সেনা নেতৃত্বের বক্তব্য, অর্থনীতিতে পাল্লা দিতে না-পেরে কৌশলগত এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ভারতের তুলনায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে পাকিস্তান।
অতিমারিতে বদলে যাওয়া ভূকৌশলগত বাস্তবতায় চিনের সঙ্গে যুযুধান আমেরিকা। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের বহু বিজ্ঞাপিত ‘সর্ব আবহাওয়ার মৈত্রী’ ইসলামাবাদ তত ক্ষণই উপভোগ করতে পেরেছে, যত ক্ষণ ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্ক মধুর ছিল। আজকের পরিস্থিতিতে বাড়তি চিন-নির্ভরতায় পশ্চিমী দুনিয়ার রোষ বাড়বে। এ কথাও মাথায় রাখছেন পাক নেতৃত্ব। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেনাপ্রধান বাজওয়াকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পাকিস্তানকে শুধু চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের প্রিজ়ম দিয়ে দেখা ঠিক নয়।’ যা শুনে বিদেশ মন্ত্রকের মনোভাব অনেকটা—‘এ কি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে!’ অর্থাৎ, ভারতের বহু আপত্তি সত্ত্বেও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে যাওয়া এই করিডর (সিপিইসি) নিয়ে অপরিসীম উৎসাহ এত দিন দেখিয়েছে বেজিং এবং ইসলামাবাদ। ভারত বিরোধিতার অন্যতম অস্ত্র হিসেবে এত দিন একে ব্যবহার করছিল পাক সেনাও। এখন তার থেকে নিজেদের কিছুটা দূরত্বে রাখতে চাইছে পাক সেনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েক দশক ধরে ভারত বিরোধিতার প্রশ্নে পাকিস্তান আরব দেশ, আমেরিকা-সহ পশ্চিমী বিশ্ব এবং চিনের উপরে নির্ভর করে এসেছে। কিন্তু এখন আরব এবং পশ্চিমী দুনিয়া পাকিস্তানের উপরে ভারত-নীতি বদলানোর চাপ দিচ্ছে।
তবে ওয়াকবিহাল পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, পাক সেনা বা আইএসআই চাইলেও ভারত-বিরোধিতা এবং আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের চিরাচরিত অবস্থান থেকে চট করে সরে এসে আলোচনার টেবিলে বসা কঠিন। বাজওয়ার তত্ত্ব ইমরান সরকার মন থেকে মানেনি বলে অনেকের ধারণা। সে দেশের মৌলবাদী নেতারাও ভারতের সঙ্গে নতুন পথ চলার ডাকে শামিল হতে নারাজ। বিষয়টি নিয়ে সে দেশে অভ্যন্তরীণ বিতর্ক শুরু হয়েছে। পাক সেনার তত্ত্ব খারিজ করে বলা হচ্ছে, নিজেদের অক্ষমতা (সীমান্তে আধিপত্য বিস্তারে) ভূ-অর্থনৈতিক দুর্বলতার পর্দা দিয়ে ঢাকা যায় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy