সদ্যোজাত শিশু সন্তানের মৃতদেহ হাতে হাসপাতালের সামনে বাবা। ছবি পিটিআই।
সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে বিনোদ আর জ্যোতি ভেবেছিলেন এ বারে নতুন করে জীবন শুরু করবেন। এর আগে দুই সন্তানকে হারিয়েছিলেন তাঁরা। একবার গর্ভপাত হয়ে গিয়েছিল, দ্বিতীয় বার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে পেটেই মারা যায়। এ বার সদ্যোজাত ছেলেকে কোলে তাই আনন্দ ধরছিল না স্বামী-স্ত্রীর। তবে সেই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হল না। দিল্লির বিবেক বিহারে সেই অভিশপ্ত ‘বেবি কেয়ার নিউ বর্ন’ হাসপাতালে আগুনে পুড়ে যে সাতটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে বিনোদের ছেলেও।
আজ আদালতে হাজির করানো হয়েছিল দিল্লির বেসরকারি হাসপাতালটির মালিক ও ঘটনার সময়ে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসককে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিবেক বিহার থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৩৬ নম্বর ধারা (মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা বিপন্ন করা), ৩০৪এ ধারা (গাফিলতির জেরে মৃত্যু), ৩০৪ নম্বর ধারা (অনিচ্ছাকৃত খুন) ও ৩০৮ নম্বর ধারায় (অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টা) মামলা দায়ের হয়েছে। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিধি গুপ্ত আনন্দ হাসপাতাল মালিক চিকিৎসক নবীন খিচি এবং অন-ডিউটি চিকিৎসক অক্ষকে তিন দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন। গত কাল আরও দু’জন চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অভিযোগ, পূর্ব দিল্লির বিবেক বিহারের হাসপাতালটি বেআইনি ভাবে চালানো হচ্ছিল। হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। তার মধ্যে দমকলের ছাড়পত্রও ছিল না হাসপাতালের কাছে। ২৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা ছিল হাসপাতালে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, হাসপাতালের বিদ্যুতের তারে কোনও ভাবে শর্ট সার্কিট হয়। সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলি হাসপাতালের রিসেপশন ও গেটের সামনে রাখা ছিল। আগুন ছড়াতেই পরপর পাঁচটি সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে।
যে সাতটি শিশু আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে, তাদের বয়স ছিল এক দিন থেকে ২৫ দিনের মধ্যে। কারও প্রথম সন্তান ছিল, কারও আবার বহু প্রতীক্ষার পরে পাওয়া উপহার। বিবেক ও জ্যোতি যেমন। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল বলে সদ্যোজাত সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন।সুস্থ করে ঘরে নিয়ে যাওয়ার বদলে এখন দেহ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন বাবা-মা।
অনেক পরিবার আবার অগ্নিকাণ্ডের খবর পাননি। হাসপাতাল থেকে সন্তানকে বাড়ি নিয়ে যাবেন বলে এসে দেখেন দুঃস্বপ্নের মতো দাঁড়িয়ে আধপোড়া হাসপাতাল ভবন। ভিতরে কেউ নেই। কাছেই অন্য একটি নিওনেটাল কেয়ার সেন্টারে কিছু শিশুর চিকিৎসা চলছিল। বাকিদের দেহ শোয়ানো ছিল গুরু তেগ বাহাদুর (জিটিবি) হাসপাতালের মর্গে।
বিবেক বিহার কলোনির সি ব্লক ও ডি ব্লকে ধন্দ আরও বাড়ে, যখন দেখা যায় কিছু শিশুকে ইস্ট দিল্লি অ্যাডভান্সড নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ‘নিখোঁজ’ সন্তানকে সেখানে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন মা-বাবারা। যেমন নাজ়িম চৌধরি ও তাঁর ছোট ভাই আঞ্জার। আঞ্জারের ১২ দিনের মেয়ের সন্ধান মিলছিল না। পাগলের মতো মেয়েকে খুঁজছিলেন তিনি। এক সময়ে পুলিশ জানায়, জিটিবি হাসপাতালের মর্গে যেতে।
শ্বাসকষ্ট-সহ নানা ধরনের সংক্রমণে জন্য শিশুগুলিকে বিবেক বিহারের হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়েছিল। আঞ্জারের মা আমরুন খাতুন বলেন, ‘‘ডাক্তার বলেছিল এখানে ভর্তি করাতে। আমরা দ্বিতীয় বার ভাবিনি। কারণ ওদের আগের সন্তানও পাঁচ বছর আগে এ রকমই এক ঘটনায় মারা গিয়েছিল।’’ আক্ষেপ করে আমরুন বলেন, ‘‘পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে, এখনও আগের ক্ষত সারেনি। ফের এ রকম হল। কেন আমাদের সঙ্গে বারবার এমন ঘটছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy