বাঁ দিকের উপরে, দেবব্রত মাইতি, বাঁ দিকের নীচে অনিন্দ্য দাস। ডান দিকের উপরে, দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়, ডান দিকের নীচে, বাসুদেব দাসগুপ্ত।
পুরস্কার ২০২২ সালের। কিন্তু ঘোষিত হল প্রায় এক বছর পরে। সোমবার শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার প্রাপকদের যে-তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে সাতটি বিভাগে ১২ জনের মধ্যে চার জনই বঙ্গসন্তান।
যে চার বাঙালির আলোয় এ বারের ভাটনগর পুরস্কার উজ্জ্বল, তাঁরা রসায়নে আইআইটি বম্বের দেবব্রত মাইতি, পদার্থবিদ্যায় বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের (আইআইএসসি) অনিন্দ্য দাস ও টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের বাসুদেব দাশগুপ্ত এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়।
দীর্ঘদিন ধরেই অনাক্রম্যতা (ইমিউনোলজ়ি) বিষয়ে গবেষণা করছেন দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়। তাতে বিশেষ ভাবে ছিল অটোইমিউন ডিজিজ়। সাম্প্রতিক কালে কোভিডে অনাক্রম্যতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কী ভাবে প্রভাব ফেলেছিল, সেটি নিয়েও গবেষণা করেন তিনি। কোভিডে প্লাজ়মা থেরাপির পরীক্ষামূলক গবেষণাও করেছেন। সেই সমস্ত কাজের স্বীকৃতি হিসেবেই এই পুরস্কার পেয়েছেন দীপ্যমান। ভারত সরকারের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (সিএসআইআর) প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল শান্তিস্বরূপ ভাটনগরের নামাঙ্কিত এই পুরস্কার চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনও বাঙালি অনেক বছর পরে পেলেন। এ দিন পুরস্কার ঘোষণার খবরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে দীপ্যমানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
দেবব্রতের গবেষণা কার্বন এবং হাইড্রোজেন পরমাণুর পারস্পরিক রাসায়নিক বন্ধন নিয়ে।সন্ধিগত মৌলের অনুঘটন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে জীবনদায়ী ওষুধ থেকে কীটনাশক পর্যন্ত বিভিন্ন কিছুর উদ্ভাবনে দিশা দিচ্ছে তাঁর কাজ। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দেবব্রতের পড়াশোনা পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের শ্রীরামপুর গ্রামের স্থানীয় কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়ে। পুরস্কারপ্রাপ্তির পরে এ দিন ফোনে তিনি বলেন, ‘‘বাবা-মা অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বড় করে তুলেছেন। তার পরে স্নাতক স্তরের পড়াশোনার জন্য চলে যাই বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে।’’ তার পরে বম্বে আইআইটি থেকে স্নাতকোত্তর। আমেরিকার জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিট অব টেকনোলজিতে গবেষণা সেরে দেশে ফিরে ২০১১ সালে বম্বে আইআইটিতে শিক্ষকতায় যোগদান।
পদার্থবিদ্যায় পুরস্কার প্রাপক অনিন্দ্য দাসও বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে তাঁর সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন, জানান দেবব্রত। বর্তমানে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকতার পাশাপাশি সেখানকার কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্ট ল্যাবরেটরির প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর অনিন্দ্য।
পদার্থবিদ্যায় পুরস্কার প্রাপক আর এক বাঙালি মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের (টিআইএফআর) বাসুদেব দাশগুপ্ত। ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার স্নাতক স্তরের ছাত্র ছিলেন তিনি। তার পরে টিআইএফআর থেকে স্নাতকোত্তর এবং গবেষণা। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার এই গবেষকের অনুসন্ধিৎসা নিউট্রিনো কণা এবং ডার্ক ম্যাটার বিষয়ে।
এ ছাড়াও পুরস্কার প্রাপকেরা হলেন জীববিদ্যায় চণ্ডীগড়ের ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোবিয়াল টেকনোলজির অশ্বিনী কুমার ও হায়দরাবাদের সেন্টার ফর ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং ডায়গনস্টিকসের মদ্দিকা সুব্বা রেড্ডি। রসায়নে দেবব্রতের সঙ্গে পুরস্কার পেয়েছেন বেঙ্গালুরুর আইআইএসসি-র অক্কট্টু টি বিজু। ভূবিজ্ঞানে পুরস্কার প্রাপক গান্ধীনগর আইআইটির বিমল মিশ্র ২০০৫ সালে খড়্গপুর আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর। প্রকৌশল বিজ্ঞানে পুরস্কার পেয়েছেন দিল্লি আইআইটির দীপ্তিরঞ্জন সাহু এবং মাদ্রাজ আইআইটির রজনীশ কুমার। গণিতে পুরস্কার পেয়েছেন বেঙ্গালুরু আইআইএসসির অপূর্ব খরে এবং বেঙ্গালুরুর মাইক্রোসফট রিসার্চ ল্যাবরেটরির নীরজ কয়াল। নীরজের বড় হয়ে ওঠা এবং পড়াশোনা মূলত অসমের গুয়াহাটিতে।
১৯৫৮ সাল থেকে প্রতি বছর ২৬ সেপ্টেম্বর, সিএসআইআর-এর প্রতিষ্ঠা দিবসে শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। প্রথম বারের জন্য ব্যতিক্রম ঘটেছিল গত বছর। সোমবার সিএসআইআর-এর একটি কর্মসূচির অনুষ্ঠানে, কিছুটা হঠাৎই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা এন কালাইসেলভি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংেহর উপস্থিতিতে সেই পুরস্কারই ঘোষণা করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy