—ফাইল চিত্র।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার মধ্যেই জিডিপি-র সঙ্কোচন। আবার সীমান্তে রক্তচক্ষু দেখাচ্ছে চিনও। তা নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণ। সেই পরিস্থিতিতেই সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু হতে চলেছে। কিন্তু সেখানে প্রশ্নোত্তরের জন্য বরাদ্দ সময় বাতিল করে দেওয়া হল। অর্থাৎ সেখানে সরকারকে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন না বিরোধীরা।
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সম্প্রতি ফোন করে সমস্ত সাংসদকে এই কথা জানিয়েছেন। প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলে, যে মন্ত্রীকে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তাঁর পরামর্শদাতা আধিকারিকদেরও সংসদে উপস্থিত থাকতে হয়। তাতে সংসদ ভবনে লোকসংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে, করোনা পরিস্থিতিতে যা একেবারেই কাম্য নয়। তাই প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিরোধীদের জানিয়েছেন রাজনাথ।
প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল করা হলেও, জিরো আওয়ার থাকবে বলে বিরোধী নেতাদের আশ্বস্ত করেন রাজনাথ। আগে থেকে স্পিকারকে নোটিস দিয়ে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি তুলে ধরতে পারবেন বিরোধীরা। কিন্তু সেই জিরো আওয়ারের সময়সীমা কমিয়ে ৩০ মিনিট করা হয়েছে। অর্থাৎ বিরোধী নেতাদের ওই ৩০ মিনিটের মধ্যেই যা বলার বলে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন: ফের এক দিনে আক্রান্ত বৃদ্ধি ৭৮ হাজার, মোট মৃত্যু ছাড়াল ৬৬ হাজার
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। অতিমারিকে অজুহাত বানিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বুধবার টুইটারে ডেরেক লেখেন, ‘‘প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য ১৫ দিন আগে থেকে প্রশ্ন জমা দিয়ে রাখতে হয় সাংসদদের। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে অধিবেশন শুরু হচ্ছে, অথচ সেই প্রশ্নোত্তর পর্বই বাতিল? বিরোধীদের কাছ থেকে সরকারকে প্রশ্ন করার অধিকারই কেড়ে নেওয়া হল। ১৯৫০-এর পর এই প্রথম। সংসদের কাজকর্মের সময়সীমা আগের মতোই রয়েছে, তাহলে শুধুমাত্র প্রশ্নোত্তর পর্বই বাতিল করা হল কেন? অতিমারিকে অজুহাত বানিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে।’’
সংসদের অধিবেশনের ৫০ শতাংশ সময় বিরোধীদের জন্য এবং বাকি ৫০ শতাংশ সময় সরকারের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বিজেপি সরকার দেশের সংসদকে ‘এম অ্যান্ড এস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর পরিণত করতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে এর আগে একটি সংবাদমাধ্যমেও লেখেন ডেরেক।‘এম অ্যান্ড এস প্রাইভেট লিমিটেড’ বলতে তিনি আসলে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে নিশানা করেছেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সরকারকে প্রশ্ন করার অধিকার সংসদীয় গণতন্ত্রকে মজবুত করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে মোদী সরকার নিজেদের মর্জি মতো চলছে বলে অভিযোগ করেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। তিনি বলেন, ‘‘চার মাস আগেই বলেছিলাম, অতিমারিকে অজুহাত বানিয়ে গণতন্ত্র ও বিরোধী কণ্ঠস্বর রোধ করবেন শক্তিশালী নেতারা। এমনিতেই দেরিতে অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তার উপর বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হল, প্রশ্নোত্তর পর্বই থাকবে না। নিরাপত্তার দোহাই দিলেও এটা কখনও যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।’’
আরও পড়ুন: লাদাখে ফের অনুপ্রবেশের চেষ্টা চিনের, বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী
তারুর আরও বলেন, ‘‘সরকারকে প্রশ্ন করার অধিকার সংসদীয় গণতন্ত্রকে অক্সিজেনের জোগান দেয়। বর্তমান সরকার সেই অধিকারকে খর্ব করে সংসদকে একটা নোটিস বোর্ডে পরিণত করতে চায়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে নিজেদের ইচ্ছে মতো বিল পাশ করিয়ে নিচ্ছে। তা সত্ত্বেও এত দিন একটা মাত্র দায় ছিল তাদের। তা-ও আর থাকছে না।’’ প্রশ্নোত্তর পর্ব বাতিল করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যেই লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy