যমুনা নদীর কাছে জলমগ্ন আন্ডারপাসে আটকে রয়েছে গাড়ি। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির লোহাপুলে। ছবি: পিটিআই।
লালকেল্লার কাছে হাঁটুজল। সিভিল লাইনে দামি আবাসনের সামনে পৌঁছতে পৌঁছতে তা কোমর ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পানীয় জলের সঙ্কট নিয়ে চিন্তা বাড়ছে রাজধানী দিল্লিতে। আর ঘোলা জলে মিশছে রাজনীতির রঙ। এ সবের মধ্যেই ফ্রান্স থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনাকে ফোন করে পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন। আজ রাত ১১টার পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের টুইটার হ্যান্ডলে সেই খবর দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় জল কিছুটা নামতে পারে বলে জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে।
তবে, সেই টুইটের ঘণ্টা দুয়েক আগে, রাত ৯টা নাগাদ বিজেপি নেতা অমিত মালবীয় টুইটে দাবি করেন, ইন্দ্রপ্রস্থ মেট্রো স্টেশনের কাছে দিল্লি জল বোর্ডের দীর্ঘ দিন মেরামত না-হওয়া ‘রেগুলেটর’ ভেঙে পড়েছে। মেরামতির চেষ্টা কাজে আসছে। এমনটা চললে মথুরা রোড ছাড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যমুনার জল চলে যেতে পারে। রাতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মথুরা রোড ও ভগবান দাস রোডের কিছু অংশে জল দাঁড়িয়েও যায়। দিল্লির আম আদমি পার্টির সরকারের মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, হরিয়ানার বিজেপি সরকার ইন্দ্রপ্রস্থ বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ করে। তার পাঁচটি গেট আটকে আছে। বলেন, ‘‘ওয়াজিরাবাদের দিক থেকে দিল্লিতে চলে আসা জল ইন্দ্রপ্রস্থ বাঁধ দিয়ে বেরোতে পারছে না। তাই জলস্তর বেড়ে চলেছে।’’
দিল্লিতে ভারী বৃষ্টি এখন আর হচ্ছে না। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিন হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। চলতি বন্যা-পরিস্থিতির অনেকটাই হরিয়ানার হাথনিকুণ্ড বাঁধ থেকে ছাড়া জলের জের। সেই জল ছাড়া যথাসম্ভব কমানোর জন্য কেজরী চিঠি লেখেন শাহকে। আজ কেন্দ্রের জবাব, বাঁধের অতিরিক্ত জল ছাড়তেই হবে। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত আজ একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, কেজরীওয়াল নিজের দোষ ঢাকতে আর রাজনীতি করার উদ্দেশ্য নিয়ে ওই চিঠি দিয়েছিলেন। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘‘দিল্লির এই অবস্থার জন্য অন্যদের দায়ী করাটা ঠিক নয়।’’ বিজেপির অভিযোগ, কেজরীওয়াল ক্ষমতায় আসা ইস্তক যমুনা থেকে এক বারও পলি তোলা হয়নি। আট বছর নিকাশি সাফাই হয়নি। কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতেও দিল্লির বিপর্যয়ের জন্য কেজরীর দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, এটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, মানুষের তৈরি করা। এর পিছনে নর্দমা সাফাই না হওয়া এবং জবরদখলের মতো বিভিন্ন কারণের কথা বলছেন তিনি।
যমুনার জল পঁয়তাল্লিশ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল গত কালই। আজ পূর্বাভাস ছাপিয়ে সকাল ৮টা নাগাদ তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২০৮.৪৮ মিটারে। বিকেল ৫টা নাগাদ হয় ২০৮.৬৫ মিটার। রাত ১০টা নাগাদ সামান্য কমে হয়েছে ২০৮.৬৩ মিটার। সারা বছর ক্ষীণ স্রোতে বয়ে যাওয়া দূষণক্লিষ্ট নদীটিতে জল এখন বিপদসীমার তিন মিটার উপর দিয়ে বইছে। কেন্দ্রীয় জল কমিশন বলছে, ‘চূড়ান্ত পরিস্থিতি’।
সকালেই ওয়াজিরাবাদ, চন্দ্রাবল এবং ওখলার তিনটি শোধনাগার বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হয়। দিল্লিতে সরবরাহ হওয়া জলের সিকি ভাগ ওই তিনটি শোধনাগার থেকেই আসে। ফলে জলসঙ্কটের শঙ্কা দেখা দিতে শুরু করেছে। আজ কেজরীওয়াল ওয়াজিরাবাদ শোধনাগার পরিদর্শনে যান। জানা গিয়েছে, জলস্তর নামলে পাম্প চালু করার আগে শুকনো করতেই এক বেলার বেশি সময় লেগে যাবে। মজনু কা টিলার কাছে কাশ্মীরি গেট বন্ধ। চলছে নৌকা। কেজরীওয়ালের বাসভবনের পাঁচশো মিটারের মধ্যে রিং রোডের একাংশ ভাসছে। ওই সব এলাকায় বাড়ির ভিতরে জল ঢুকতে শুরু করেছে। যমুনা ব্যাঙ্ক মেট্রো স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। জল জমে রয়েছে আরও কিছু স্টেশনে ঢোকার মুখে। যার প্রভাব পড়েছে মেট্রো ও ট্রেন চলাচলে। উত্তর রেল ১৪০টি ট্রেন বাতিল করেছে।
কেজরীওয়াল জানান, আগামী রবিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে সমস্ত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্য সমস্ত সরকারি দফতরের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হচ্ছে। বেসরকারি দফতরগুলিকেও বাড়ি থেকে কাজের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পানীয় জলের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়ে তিনি দিল্লিবাসীকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন। জানিয়েছেন, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বড় যানবাহনগুলিকেই শুধু দিল্লিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। বিপর্যয় মোকাবিলার ১২টি দল সক্রিয় রয়েছে দিল্লিতে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার বাসিন্দাকে উদ্ধার করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জলবায়ুর হালচাল অনুযায়ী দিল্লি শুকনো জায়গা। নিকাশি ব্যবস্থাও গড়ে উঠেছে সেই মতো করে। আবহাওয়ার পরিবর্তিত মেজাজে, সম্প্রতি অতিবৃষ্টির বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গিয়েছে, সেই চাপ সহ্য করার ক্ষমতা ওই নিকাশির নেই। রাজধানীর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘১৯৭৮ সালের বন্যার সময় আমার বয়স ছিল পাঁচ বছর। এখন পঞ্চাশ বছর চলছে। এই পরিস্থিতি দুর্ভাগ্যের। সরকারের দায়িত্ব নেওয়া দরকার।’’
হিমাচলপ্রদেশে সাম্প্রতিক বৃষ্টির জেরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯০। তার মধ্যে, গত চার দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। উত্তরাখণ্ডে ধসের জেরে তিনশোরও বেশি রাস্তা বন্ধ। স্বাভাবিক জনজীবন থেকে চারধাম যাত্রা, সবই বিঘ্নিত হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে গত২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
বুধবার হরিয়ানার ঘগ্গর নদীর বানে বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক ঈশ্বর সিংহ। দৃশ্যত ক্ষুব্ধ এক মহিলা ‘‘এখন কেন এসেছেন’’ বলে তাঁকে চড় মারছেন, এমন ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। বিধায়ক পরে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি কিছু মনে করেননি। ওই মহিলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কতটা-কী করা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy