প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
শুধু দেশ নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্ব বেজে উঠল একেবারে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরেও। বাজল দেশের প্রতিটি রাজভবনে, বিজেপি দফতরে, বিজেপি নিয়ন্ত্রিত সব সংস্থার দফতরে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও শততম পর্ব নিয়ে আবেগ চেপে রাখলেন না। কিন্তু তার পরেও দিনের শেষে প্রশ্ন উঠল, এত কথা, এত আড়ম্বরেও দেশবাসীর ‘মনের কথা’ কি সত্যিই বললেন মোদী?
কংগ্রেসের পবন খেরা থেকে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র বা নেট নাগরিকদের একাংশের বক্তব্যে সেই ‘মনের কথা’ই ধরা পড়ল নানা ভাবে। প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইস্তক কোনও সাংবাদিক বৈঠক করেননি মোদী। তার বদলে ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে রেডিয়োয় প্রতি মাসের শেষ রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে নানা কথা বলেন। সেই অনুষ্ঠানই আজ পা দিল শততম পর্বে।
এ দিন রেডিয়ো-বার্তার শুরুতেই ‘জনগণকে ধন্যবাদ’ দিয়ে মোদী জানান, তাঁর কাছে জনতাই ঈশ্বর। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে ‘মন কি বাত’ অন্যদের শ্রেষ্ঠত্বের পুজো করার মাধ্যম। তাঁদের গুণের আধারে অঞ্জলি দেওয়ার মাধ্যম।’’ তিনি দাবি করেন, জনতার হাত ধরেই তাঁর মনের কথা হয়ে উঠেছে গোটা দেশবাসীর মনের কথা। মোদী জানিয়েছেন, ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান,’ ‘ক্যাচ দ্য রেন’, ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ বা ‘হর ঘর তিরঙ্গা’র মতো গণআন্দোলন মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে তাঁর এই রেডিয়ো অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের সামাজিক পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ‘মন কি বাত’ একটি জপমালার সুতোর মতো।’’
আর এখানেই উঠল প্রশ্ন। নিজের চালু করা নানা শব্দবন্ধ, নানা পরিকল্পনার কথা বললেও তাতে বেকারত্ব, দুর্নীতির মতো জনতার সঙ্গে সরাসরি সংযোগের বিষয়গুলি নিয়ে ‘মনের কথা’ কোথায়? এ পর্যন্ত সে সব নিয়ে কিছু বলেননি মোদী। শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে তাঁর ‘সম্পর্ক’ নিয়ে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণেও মৌনই থেকেছেন। আর সেটাকেই অস্ত্র করে কংগ্রেস নেতা পবন খেরা মোদীকে ‘ফেকু মাস্টার’ বলে বর্ণনা করে বললেন, ‘‘চিন, আদানি, আর্থিক বৈষম্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি, জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা, মহিলা কুস্তিগিরদের অসম্মান, কৃষক সংগঠনগুলিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন না করা, কর্নাটকের মতো তথাকথিত ডাবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্যগুলিতে দুর্নীতি, বিজেপি নেতাদের সঙ্গে প্রতারকদের যোগাযোগের মতো বিষয়গুলি নিয়ে এটা ‘মৌন কি বাত’ হয়ে রয়ে গেল।’’ মনে রাখা যেতে পারে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে এক সময় ‘মৌনমোহন’ বলে কটাক্ষ করতেন মোদী। আজ সেই ‘মৌন’ তকমাই ফিরে এল তাঁর দিকে।
এ দিনের বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মহিলা ক্ষমতায়ন এবং স্টার্ট-আপ-সহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ‘মন কি বাত’ মহিলাদের ক্ষমতায়নের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি আনন্দিত যে ‘মন কি বাত’ মহিলাদের ক্ষমতায়নের বাস্তব ছবিকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরে।’’ তাঁর এই বক্তব্য নিয়েও ধেয়ে এসেছে আক্রমণ। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র কটাক্ষের সুরে এই অনুষ্ঠানের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘মোদীজি, ‘মন কি বাত’-এর ১০০তম পর্বটি রাষ্ট্রপুঞ্জে সম্প্রচারিত হবে। আমাদের দয়া করে বলুন, (১) আমাদের মহিলা ক্রীড়াবিদদের কেন বিজেপির দানবদের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না, (২) সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সময়সীমা মেনে আদানির ব্যাপারে সেবি-র তদন্ত কেন শেষ হচ্ছে না?’’
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য মোদীর মনের কথার ঢালাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে আসরে নেমেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী নিজে? শততম পর্বের সম্প্রচার মিটতেই মোদী ছুটলেন কর্নাটকে। বিজেপির হয়ে বিধানসভা ভোটের প্রচার আছে যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy