প্রতীকী চিত্র।
করোনা কালে লক্ষ্য ছুঁতে ব্যর্থ অনলাইনে শিক্ষা। শহরে অনলাইনের মাধ্যমে কিছুটা পড়াশোনা হলেও বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে চূড়ান্ত ব্যর্থ অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি। অবিলম্বে তাই স্কুল খোলার দাবি তোলা হয়েছে বেসরকারি সংস্থার করা সমীক্ষা রিপোর্টে। বস্তুত কয়েকটি রাজ্যে স্কুল খোলা হয়েছে। পুজোর পরে করোনা পরিস্থিতি দেখে পশ্চিমবঙ্গে স্কুল খোলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
করোনা সংক্রমণের ভয়ে স্কুলের মাধ্যমে পঠনপাঠন ভারতে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। বিকল্প হিসেবে চালু রয়েছে অনলাইনে শিক্ষা। সেই শিক্ষা আদৌ পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক ‘স্কুল চিলড্রেন্স অনলাইন অ্যান্ড অফলাইন লার্নিং (স্কুল)’ নামে একটি সমীক্ষা চালায় দেশে।
অসম, বিহার, দিল্লি, গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গ-এমন প্রায় ১৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১,৩৬২টি পরিবারের উপরে ওই সমীক্ষা চালানো হয়। পরিবারগুলিকে বেছে নেওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল যে ওই পরিবারের এক জনকে হয় প্রাইমারি (প্রথম-পঞ্চম শ্রেণি) কিংবা আপার প্রাইমারি (ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণি)-র পড়ুয়া হতে হবে। সেই সমীক্ষালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে আজ ‘লকড আউট, এমারজেন্সি রেসপন্স অন স্কুল এডুকেশন’ নামে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। ওই রিপোর্ট প্রস্তুতিতে যে সমন্বয় দল কাজ করেছে তাতে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজও।
রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, স্কুলের দৈনন্দিন ক্লাসের পরিবর্তে অনলাইনে শিক্ষা দেওয়া শুরু হলেও তা কখনওই স্কুলের পঠনপাঠনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। গ্রামীণ এলাকায় দেখা গিয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। সেখানে ৩৭ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইনে শিক্ষার ধার কাছে যায়নি। যার অন্যতম কারণ হিসেবে রিপোর্টে বলা হয়েছে অনলাইন শিক্ষার সকলের কাছে পৌঁছতে না পারা। ওই ব্যর্থতার কারণে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ২৪ ও ৮ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইন ক্লাস নিয়মিত ভাবে করেছে। অনলাইন শিক্ষা পৌঁছতে না পারার পিছনে পরিবারে স্মার্ট ফোনের অভাব একটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। তেমনই দেখা গিয়েছে পরিবারে স্মার্ট ফোন থাকলেও নিয়মিত ভাবে শহরে ও গ্রামীণ এলাকায় ক্লাস করেছে যথাক্রমে ৩১ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ পড়ুয়া। বাকিদের স্মার্ট ফোন থাকলেও তা লেখাপড়ার কাজে ব্যবহৃত হয়নি। যার একটি বড় কারণ হল মনোযোগের অভাব।
অল্প বয়সি পড়ুয়াদের পক্ষে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে পড়াশোনায় মন বসানো একটি বড় মাপের সমস্যা বলে ব্যাখ্যা করেছেন। পড়ুয়ার বাবা-মায়েদের মতে, স্কুল বন্ধ থাকায় তাঁদের সন্তানদের পড়া ও লেখার দক্ষতার মান আরও নিম্নমুখী হয়েছে। তাই অধিকাংশ বাবা-মায়েরাই চাইছেন দ্রুত খুলে দেওয়া হোক স্কুল। রিপোর্টেও দ্রুত স্কুলের পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে বড় ক্লাসের পাশাপাশি ছোট ক্লাস খোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে ওই একই আবেদন জানিয়েছেন ৫৫ জন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিদ।
স্কুল বন্ধ থাকা ভবিষ্যতে শিশুদের একাংশের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলেই বিগত কিছু সময় ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন বেশ কয়েক জন স্বাস্থ্যবিদ। কারণ দেশের শিশুদের বড় অংশ দিনের এক বেলা খাবারের জন্য সরকারি মিড ডে মিলের উপরেই মূলত নির্ভরশীল ছিল। সেই রান্না করা খাবার বন্ধ হয়ে যাওয়া শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে প্রভাব ফেলার পূর্ণ আশঙ্কা রয়েছে।
রিপোর্টে দেখা গিয়েছে স্কুল থেকে রান্নার চাল ডাল বা নগদ টাকা পেয়েছেন যথাক্রমে শহর ও গ্রামের ৮০ শতাংশ ও ৮৬ শতাংশ পরিবার। তেমনই শহরে ও গ্রামে প্রায় ২০ শতাংশ ও ১৪ শতাংশ পরিবার পড়ুয়া পিছু খাবার বা নগদ টাকা পায়নি। যাঁরা খাবারের পরিবর্তে নগদ টাকা পেয়েছে বা যাঁরা খাবার বা টাকা কিছুই পায়নি সেই পরিবারের সন্তানদের আগামী দিনে পুষ্টির অভাবে ভোগার পূর্ণ আশঙ্কা রয়েছে বলেই মত স্বাস্থ্যবিদদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy