Advertisement
৩১ জানুয়ারি ২০২৫
Nitish Kumar

বিজেপির সঙ্গী হয়ে রবিতে ফের মুখ্যমন্ত্রিত্বে শপথ নীতীশের? ভাঙতে পারে কংগ্রেসও! জল্পনা বিহারে

পশুপতি পারসের ‘রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টি’, চিরাগ পাসোয়ানের ‘লোক জনশক্তি পার্টি(রামবিলাস)’ এবং জিতনরাম মাঝিঁর ‘হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা’ও নতুন সরকারে সামিল হতে পারে।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং নীতীশ কুমার।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং নীতীশ কুমার। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪৪
Share: Save:

জোট বদলে আবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন নীতীশ কুমার? গত এক দশকে এই নিয়ে চতুর্থ বার! প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে জল্পনা আগামী রবিবার (২৮ জানুয়ারি) এনডিএ-র নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে পারেন জেডিইউ প্রধান। তাঁর সঙ্গেই বিহারের নতুন উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারে বিজেপি নেতা সুশীল মোদী। বিহার রাজনীতিতে যিনি, ‘নীতীশ ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত।

জেডিইউ-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত পেলেই বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়ে ফের এনডিএ-তে যোগ দেবেন নীতীশ। তবে জাতীয় স্তরের বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না। বিজেপি এবং জেডিইউর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পশুপতি পারসের ‘রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টি’ (আরএলজেপি) এবং প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের সাংসদ-পুত্র চিরাগের দল ‘লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)’ এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঝিঁর ‘হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা’ (হাম)-ও নতুন সরকারে শামিল হতে পারে বলে জল্পনা।

যদিও জিতনরাম এবং বিহারের এনডিএর আর এক শরিক ‘রাষ্ট্রীয় লোক জনতা দল’ (আরএলজেডি)-র নেতা উপেন্দ্র কুশওয়াহার সঙ্গে নীতীশের সম্পর্ক মসৃণ নয়। চিরাগও নীতীশের ‘কট্টর সমালোচক’ বলেই পরিচিতি। তবে জামুইয়ের ওই তরুণ সাংসদ বৃহস্পতির রাতেই দিল্লি গিয়েছেন। সূত্রের খবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার তলবেই চিরাগের দিল্লি যাত্রা। এমনকি, বিহারের ১৯ জন কংগ্রেস বিধায়কের মধ্যে ১২ জন দল ভেঙে নয়া সরকারের সমর্থন করতে পারে বলে কানাঘুষো চলছে।

ওই সূত্রের দাবি, নীতীশই প্রথম জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোটে যে ভাবে তাঁকে গুরুত্বহীন করে রাখা হয়েছিল, তা মোটেই ভাল ভাবে নেননি। সূত্রের মতে, নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে নীতীশ তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। জেডিইউয়ের একাংশও দীর্ঘ দিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছিল নীতীশের উপরে।

২০২০ সালে বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে লড়ে জিতলেও ২০২২ সালের অগস্টে এনডিএ ছেড়ে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের সমর্থন নিয়ে ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার গড়েছিলেন নীতীশ। কেন আবার তিনি বিজেপির সঙ্গী হতে চাইছেন? জেডিইউ-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, ‘ইন্ডিয়া’ সম্পর্কে মোহভঙ্গ হয়েছে তাঁর। তাই আবার ফিরতে চান এনডিএতে। এ প্রসঙ্গে উঠে আসছে তিনটি ‘কারণ’।

প্রথমত, দেশের সব রাজ্যে ঘুরে ঘুরে জোটের পটভূমিকা তৈরি করেছিলেন নীতীশ। জোটের প্রথম বৈঠকও হয়েছিল তাঁরই ব্যবস্থাপনায় পটনায়। কিন্তু পরে বেঙ্গালুরু, মুম্বই ও দিল্লিতে জোটের বৈঠকে তাঁকে সে ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ করাতেও তাঁর আপত্তিকে অগ্রাহ্য করা হয়। একই সঙ্গে নীতীশ নিজেই বিরোধী জোটের আহ্বায়ক হতে আগ্রহী হলেও কয়েকটি শরিক দলের আপত্তিতে তা কার্যকর হয়নি।

দ্বিতীয়ত, ৭৯ বিধায়কদের দল আরজেডি বেশ কিছু দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাপ দিচ্ছে তাঁকে। লালু চান তাঁর পুত্র তথা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীর হাতে পটনার কুর্সি তুলে দিতে। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১২২ বিধায়কের সমর্থন। নীতীশের দলের বিধায়ক সংখ্যা মাত্র ৪৫। ফলে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে হলে বিজেপির ৭৮ বিধায়কের সমর্থন তাঁর প্রয়োজন।

সূত্রের মতে, লোকসভার আগে নীতীশের এনডিএ অন্তর্ভুক্তিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিশেষ কোনও আপত্তি নেই। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের ফের এক বার নীতীশের হাত ধরতে সমস্যা নেই। কারণ তাঁরা মনে করেন, এতে ওই রাজ্যে দলের ফল ভাল হবে। যদিও সম্রাট চৌধুরী, গিরিরাজ সিংহের মতো বিহার বিজেপির কট্টর নেতারা নীতীশের অতীত বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তাঁকে এনডিএ-তে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু লোকসভা ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে তাতে বেশি আমল দিতে নারাজ মোদী-শাহেরা।

তৃতীয়ত, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোটে ১৭টি আসনে লড়াই করে ১৬টিতে জয় পেয়েছিলেন নীতীশ। বিজেপি ১৭টিতে লড়ে সবগুলি এবং প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি) ছ’টিতে লড়ে সবগুলি জিতেছিল। ৪০টি আসনের মধ্যে বিরোধী জোটের একমাত্র কংগ্রেস একটি আসনে জিতেছিল। লালুর দলের ঝুলি ছিল শূন্য! স্বাভাবিক ভাবেই নিজেদের দখলে থাকা ১৬টি আসন ছাড়তে চান না নীতীশ। কিন্তু সেই ১৬টির মধ্যে এমন ৪-৫টি আসন রয়েছে, যা দাবি করছে আরজেডি এবং বামেরা!

বস্তুত, নীতীশ যে ইন্ডিয়া জোট ছাড়তে পারেন, সেই আশঙ্কা ছিলই কংগ্রেস শিবিরের। আগামী ৩০ জানুয়ারি বিহারের পূর্ণিয়াতে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার জনসভা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সমাবেশে নীতীশকে আমন্ত্রণ জানানো হলে, তিনি জানিয়ে দেন, ওই দিন পটনায় সরকারি সভা রয়েছে। সেই কারণে তিনি রাহুলের পূর্ণিয়ার সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না। কিন্তু ৩ ফেব্রুয়ারি বিহারের বেতিয়াতে নরেন্দ্র মোদীর যে সভা রয়েছে, তাতে নীতীশ থাকতে পারেন বলে জেডিইউ সূত্রের খবর।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে বিজেপির সঙ্গে নীতীশের হাত মেলানোর সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করা হচ্ছে। সেটা বুঝেই রাহুলের এ দফার যাত্রা শুরু হওয়ার আগে নীতীশকে ইন্ডিয়া জোটের আহ্বায়ক পদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাতে রাজিও হয় অধিকাংশ দল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় সর্বসম্মতিতে ওই প্রস্তাব পাশ হওয়া আটকে যায়। কেন মমতার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও তাঁর নাম প্রস্তাব করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ক্ষুব্ধ নীতীশ। পাশাপাশি নীতীশের পক্ষ থেকে আরজেডি এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে লোকসভার সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তাবও আসে। কিন্তু আরজেডি ও কংগ্রেস সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। ফলে ক্ষোভ বাড়ে তাঁর।

অন্য বিষয়গুলি:

bihar cm Bihar Nitish Kumar Sushil Kumar Modi JDU BJP Mahagathbandhan INDIA Alliance Anti BJP Alliance NDA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy