Ness Wadia, former boyfriend of Preity Zinta is also Muhammad Ali Zinnah's descendant dgtl
ness wadia
সম্পর্কে জিন্নার নাতির ছেলে হন, মা মৌরিনের জন্যই প্রীতির কাছ থেকে সরে যান নেস?
ধনকুবের শিল্পপতির সঙ্গে নায়িকার বিয়ের জন্য যখন বলিউড দিন গুনছে, তখনই জানা গেল, তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে চুরমার। ২০১৪ সালে নেসের বিরুদ্ধে প্রীতি যৌন হেনস্থা, হুমকি-সহ একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে। তবে তার অনেক আগে থেকেই সম্পর্কে ঘুণ ধরেছিল বলে খবর ছড়িয়েছিল।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১১:৫৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ঐতিহাসিক পরিবারে জন্ম। পারিবারিক ধারা অনুসরণ করে হাল ধরেছিলেন ব্যবসার। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের মধ্যে তিনি এক জন। বলিউড নায়িকার ‘প্রাক্তন প্রেমিক’ ছাড়াও আরও অনেক পরিচয় লুকিয়ে আছে নেস ওয়াদিয়ার জীবনের আনাচেকানাচে।
০২২০
মুম্বইয়ের প্রাচীন পার্সিদের মধ্যে অন্যতম ওয়াদিয়া পরিবার। এই পরিবারের তরুণ নেভিল ওয়াদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন মহম্মদ আলি জিন্নার একমাত্র সন্তান দিনা। দিনার মা রত্তনবাঈ ছিলেন সাবেক বম্বের আর এক নামী পার্সি পরিবার পেতিতদের সন্তান। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বয়সে ২৪ বছরের বড় জিন্নাকে তিনি বরণ করেছিলেন জীবনসঙ্গী হিসেবে।
০৩২০
ভিন ধর্মের প্রেমিককে বিয়ে করায় নিজের পরিবার ও পার্সি সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়েছিলেন রত্তনবাঈ। কিন্তু জিন্নার সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য ছিল স্বল্পস্থায়ী। বাবা মায়ের দাম্পত্য দ্বন্দ্বে দিনার শৈশব ছিল ক্ষত বিক্ষত। মাত্র ১০ বছর বয়সে মারা যান মা রত্তনবাঈ। দিনা বড় হন তাঁর পিসি ফতিমার কাছে। পরবর্তীতে দিনাও তাঁর মায়ের মতো পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করেন অন্য ধর্মের প্রেমিককে।
০৪২০
দিনার স্বামী নেভিল তরুণ বয়সে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। পরে আবার পার্সি সমাজে ফিরে আসেন ধর্মান্তরিত হয়ে। তিনি ১৯৩৮ সালে বিয়ে করেছিলেন জিন্নার একমাত্র মেয়ে দিনাকে। এবং মা রত্তনবাঈয়ের মতো দিনার বিয়েও অটুট ছিল মাত্র কয়েক বছরের জন্য। ৫ বছর পরে বিচ্ছেদ হয়ে যায় নেভিল-দিনার। তবে তাঁদের দুই সন্তান নুসলি এবং ডায়ানা বড় হন ‘ওয়াদিয়া’ পদবি-সহ পার্সি ধর্মবিশ্বাসেই।
০৫২০
নেভিল-দিনার ছেলে তথা জিন্নার একমাত্র দৌহিত্র নুসলি বিয়ে করেন বিমানসেবিকা মৌরিনকে। তাঁদের বড় ছেলে নেসের জন্ম ১৯৭১ সালের ৩০ মে। মুম্বইয়ের দ্য ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুলের পরে তাঁর পড়াশোনা হিমাচল প্রদেশের লরেন্স স্কুলে। এর পর ইংল্যান্ডের মিলফিল্ড স্কুলের পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেন বস্টনের টাফ্টস ইউনিভার্সিটিতে। ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্টে এমএসসি করেন ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটি থেকে।
০৬২০
পেতিত, জিন্না এবং ওয়াদিয়া— এই তিন প্রাচীন পরিবারের মূল ব্যবসা ছিল বস্ত্র শিল্প। সেই ঐতিহ্য ও ধারা আজও বহমান। সেই স্রোতে শামিল হয়ে নেস ১৯৯৩ সালে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসাবে যোগ দেন ওয়াদিয়া গোষ্ঠীর মূল ব্যবসা ‘বম্বে ডাইং’-এ। মাঝে তিনি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কয়েক বছর দূরে ছিলেন ব্যবসা থেকে। ফিরে এসে তিনি আগের থেকে আরও অনেক উঁচু পদে যোগ দেন নিজেদের সংস্থায়।
০৭২০
২০০৫ সালে নায়িকা প্রীতি জিন্টার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন নেস। দু’জনে তাঁদের সম্পর্কের কথা স্বীকারও করতেন। অভিষেক-ঐশ্বর্যার বিয়েতে একসঙ্গে উপস্থিতি থেকে প্রীতির জন্মদিনে নেসের দেওয়া রাজকীয় পার্টি। ক্রমে তাঁরা হয়ে উঠছিলেন বলিউডের রূপকথার মতো জুটি।
০৮২০
প্রীতি জিন্টা ও ব্যবসায়ী মোহিত বর্মনের সঙ্গে মিলে ২০০৮ সালে আইপিএলে ‘কিংস ইলেভেন পঞ্জাব’ দল কেনেন নেস। কিন্তু পরে আইপিএল টুর্নামেন্টই হয়ে ওঠে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার মূল অনুঘটক।
০৯২০
নেস-প্রীতি ছিলেন বলিউডের অন্যতম পাওয়ার কাপল। তবে শোনা যায়, প্রথম থেকেই সম্পর্কের বিরোধিতায় করেছিলেন নেসের মা মৌরিন। বলেছিলেন, “নেস যদি একটা জেব্রাকে বিয়ে করে তাতেও আমার কিছু এসে যায় না!”
১০২০
ধনকুবের শিল্পপতির সঙ্গে নায়িকার বিয়ের জন্য যখন বলিউড দিন গুনছে, তখনই জানা গেল, তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে চুরমার। ২০১৪ সালে নেসের বিরুদ্ধে প্রীতি যৌন হেনস্থা, হুমকি-সহ একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে। তবে তার অনেক আগে থেকেই সম্পর্কে ঘুণ ধরেছিল বলে খবর ছড়িয়েছিল।
১১২০
২০০৯ সালে একটি পার্টিতে প্রীতিকে প্রকাশ্যে নেস চড় মেরেছিলেন বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। ঘনিষ্ঠ মহলে খবর, এর পরই প্রীতি সম্পর্ক থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক অটুট আছে। কিংস ইলেভেন পঞ্জাব দলের অংশীদার মালিকানার ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে সৌজন্যমূলক সম্পর্ক বজায় আছে এখনও। তবে সব সময় কেজো ব্যবসায়িক সম্পর্কে সৌজন্য থাকেনি।
১২২০
২০১৩ সালে পুলিশের দ্বারস্থ হন প্রীতি। তাঁর অভিযোগ ছিল, প্রকাশ্যে তাঁকে অপদস্থ করেছেন নেস। সহকর্মী, বন্ধু এবং পরিজনদের সামনে নেসের জন্য তাঁকে লজ্জায় পড়তে হয়েছে। দাবি প্রীতির। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তাঁকে নাকি নেস বলেছিলেন, এক জন সামান্য অভিনেত্রী হয়ে প্রীতি তাঁর মতো ক্ষমতাবান শিল্পপতির কিছুই করতে পারবেন না। সকলের সামনে এই কথা শুনে অপমানিত প্রীতি নাকি মানসিক দিক থেকে অত্যন্ত ভেঙে পড়েন।
১৩২০
এই তিক্ত পর্বের কথা পরে অনেকেই স্বীকার করেছেন। সে দিন ওয়াংখেড়েতে ম্যাচ চলাকালীন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাগের মথায়া উত্তেজনার বশে প্রীতির হাত বলপূর্বক ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন নেস। সকলের সামনে অশ্রাব্য ভাষায় অপমানিত হয়েও প্রীতি অপেক্ষা করেছিলেন প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার। শুধু অভিযোগ জানিয়েছিলেন বিসিসিআই আধিকারিকদের কাছে।
১৪২০
প্রীতি চেয়েছিলেন আইপিএল নির্বিঘ্নে হয়ে যাক। তার পর তিনি পুলিশের কাছে নেসের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। তবে প্রীতির সবথেকে খারাপ লেগেছিল যে বিষয়ে সেটা হল, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে এক জনও সে দিন প্রতিবাদ করেননি। তাঁর পাশে দাঁড়াননি।
১৫২০
তিনি এই নিয়ে পরে ফেসবুকে একটি মর্মস্পর্শী পোস্টও শেয়ার করেন। লেখেন, দেড় দশক সুনামের সঙ্গে অভিনয় করার পরে প্রকাশ্যে এ ভাবে অপমানিত হওয়া তাঁর কাছে অভাবনীয়।
১৬২০
তবে একা প্রীতিই নন। রগচটা নেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে অন্যখানেও। ২০১৬ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান গাড়িচালক ধীরেন্দ্র মিশ্র। মুম্বইয়ের পারেল থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্য অবধি ১০ মিনিটে পৌঁছে দিতে না পারায় নেস নাকি তাঁর গায়ে হাত তুলেছিলেন বলে অভিযোগ ধীরেন্দ্রর। নেসের বেতনভুক এই কর্মচারীর অভিযোগ ছিল, একাধিক ঘটনায় তাঁর গায়ে হাত তুলেছেন নেস।
১৭২০
জিন্নার দৌহিত্রের ছেলে নেসের সেলেব-জীবনে বিতর্ক এসেছে অন্য সূত্রেও। ২০১৯ সালে জাপানে ছুটি কাটানোর সময় তাঁর পকেট থেকে ২৫ গ্রাম নিষিদ্ধ মাদক পাওয়া গিয়েছিল।
১৮২০
প্রীতির সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া নিয়ে নেস কোনও দিন সংবাদমাধ্যমের কাছে সে ভাবে মুখ খোলেননি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন নেসের মুখপাত্র। ব্যক্তিগত জীবনে নেস এখনও সিঙ্গল। অন্য দিকে প্রীতি ২০১৬ সালে বিয়ে করেছেন আমেরিকার নাগরিক জেন গুডএনাফকে। জেন পেশায় ফিনান্সিয়ার অ্যানালিস্ট। বলিউড থেকে দূরে স্বামীর সঙ্গে নতুন জীবন উপভোগ করছেন প্রীতি।
১৯২০
ঘনিষ্ঠ মহলে কান পাতলে শোনা যায়, নায়িকা প্রীতিকে কোনও দিন পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেননি নেসের মা মৌরিন। ছেলের প্রেমিকা হিসেবে কোনও দিন স্বীকৃতি দেননি প্রীতিকে। অন্য দিকে, আর এক ছেলে জাহাঙ্গিরের স্ত্রী সেলিনাকে নিয়ে মৌরিন সবসময়েই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অন্দরমহলের খবর, মা মৌরিনের জন্যই প্রেমিকা প্রীতির থেকে দূরে সরে এসেছিলেন নেস।
২০২০
ওয়াদিয়া পরিবারের মন জয় করার জন্যেও নাকি নিজেকে একটু একটু করে পাল্টাচ্ছিলেন প্রীতি। পোশাক থেকে শুরু করে জীবনযাত্রা, সব কিছুতেই পরিবর্তন এনেছিলেন। জিন্স টি শার্টে স্বচ্ছন্দ টম বয় ভাবমূর্তি ছেড়ে তিনি ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন ফর্মাল সাজরীতিতে। কিন্তু তার পরেও কোনও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি না হওয়ায় প্রীতির মতো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন তরুণী তা মেনে নিতে পারেননি। নেসের অভব্য আচরণ এবং তাঁর পরিবারের তরফে উন্নাসিকতাই নাকি প্রীতিকে সম্পর্ক থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এমনটাই দাবি ‘মিশন কাশ্মীর’-এর নায়িকার ঘনিষ্ঠ মহলের।