সিকিমে ভয়াবহ বিপর্যয়। ছবি: পিটিআই।
মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে বুধবার ভোরে ফেটে গিয়েছিল উত্তর সিকিমের পাহাড়ি হ্রদ লোনক। একের পর এক ধ্বংসলীলা চালাতে চালাতে সেই জল হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে তিস্তায়। ফলে তিস্তার জলস্তর ১৫-২০ ফুট বেড়ে গিয়েছিল। আচমকা নদীতে হড়পা বান আসায় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে উত্তর সিকিমের বিস্তীর্ণ অংশ। কোথাও সড়ক নিশ্চিহ্ন, কোথাও সেতু ভেঙে গিয়েছে, কোথাও একের পর এক বাড়িঘর জলের তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
হড়পা বানে তিস্তায় জলের চাপ বেড়ে যাওয়ায় চুংথামে একটি বাঁধও ভেঙে যায়। ফলে বিপত্তি আরও বেড়েছে। ইতিমধ্যেই এই বিপর্যয়ে শতাধিক মানুষ নিখোঁজ। মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে সেনা এবং সিকিম সরকার। মাস দুয়েক আগে হিমালয়ের দুই রাজ্য হিমাচল এবং উত্তরাখণ্ডে যে দুর্যোগের ছবি ধরা পড়েছিল, এ বার সিকিমও সেই একই দুর্যোগের শিকার হল। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেন এই বিপর্যয়?
একটি সম্ভাবনা এবং অনুমান ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানী মহলে ঘোরাফেরা করছে। তবে সেই সম্ভাবনাকে একমাত্র কারণ হিসাবে এখনও স্বীকৃতি দিচ্ছেন না তাঁরা। গত মঙ্গলবার ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল নেপালে। এক বার নয়, ৫৪ মিনিটের ব্যবধানে পর পর চার বার কেঁপেছিল নেপাল। সেই কম্পনের উৎসস্থল ছিল উত্তরাখণ্ডে জোশীমঠের ২০৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের ২৮৪ কিলোমিটার উত্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ কিলোমিটার গভীরে। জোরালো মাত্রার ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছিল দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের কিছু অংশ, হরিয়ানার চণ্ডীগড় এবং রাজস্থানের জয়পুরে। তবে জোরালো কম্পনটি হয়েছিল নেপালেই। আর এখানেই একটি সন্দেহ বাড়ছে ভূবিজ্ঞানীদের। তা হলে কি সেই কম্পনের জেরেই সিকিমের এই ভয়ানক বিপর্যয়?
হায়দরাবাদের ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার বিপর্যয়ের পর লোনক হ্রদের একটি উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে। সেই উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই হ্রদের যা বিস্তৃতি ছিল, সেই ছবি পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। ফলে এই ছবি থেকেই মনে করা হচ্ছে, লোনক হ্রদ ফেটে গিয়েই বিপর্যয় ঘটেছে। মোট ১৬৮ হেক্টর এলাকা নিয়ে এই লোনক হ্রদ। সেই আয়তন কমে এখন ৬০ হেক্টরে ঠেকেছে। ১০০ হেক্টর এলাকার জল হ্রদ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এমনই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় জল কমিশনের এক শীর্ষ আধিকারিক। তাঁর দাবি, শুধু মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণেই যে এই বিপত্তি ঘটেছে, তা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। তবে একটি বিশেষজ্ঞ দল ওই এলাকাটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তাঁদের বিশ্বাস, মেঘভাঙা বৃষ্টি শুধু নয়, নেপালের ভূমিকম্পও এই বিপর্যয়ের নেপথ্য কারণ হতে পারে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, লোনক হ্রদের আয়তন ক্রমে বাড়ছিল। তার মধ্যে উষ্ণায়নের জেরে হিমবাহ গলে সেই জল ক্রমে হ্রদে জমছিল। বুধবার যখন ওই এলাকায় মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়, তাতে জলের চাপে হ্রদের দেওয়াল ফেটে যায় বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেই জল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নীচে নেমে আসে। সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তা হলে কি হ্রদের দেওয়াল আগে থেকেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল? নেপালের ভূমিকম্পের প্রভাব কি সেই দেওয়ালে ফাটল ধরিয়েছিল? এখন সেই উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy