Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Chhattisgarh

Chhattisgarh: ৮০ ফুট নীচে কুয়োয় আটকে থাকা রাহুলকে জাগিয়ে রাখতে ১১৭ ঘণ্টা টানা কথা বলে গেলেন অনিল

অনিল বলেন, “কেন জানি না বার বার মনে হচ্ছিল, ওই বাচ্চাটিও যেন আমায় বলছিল, যদি তুমি চেষ্টা কর, আমাকে বাঁচাতে ঠিক পারবেই!”

কুয়োয় পড়ে যাওয়া সেই কিশোর রাহুল সাহু।

কুয়োয় পড়ে যাওয়া সেই কিশোর রাহুল সাহু।

সংবাদ সংস্থা
রাইপুর শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ১৭:১৬
Share: Save:

রাহুল ওঠো… রাহুল জেগে আছ?... রাহুল, তোমার জন্য কলা এনেছি…টানা প্রায় পাঁচ দিন ধরে উপুড় হয়ে শুয়ে এই কথাগুলোই ৮০ ফুট কুয়োয় পড়ে যাওয়া কিশোরকে বলে যাচ্ছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-র সদস্য বি অনিল কুমার।

বছর এগারোর রাহুল কানে শোনে না, কথাও বলতে পারে না। ফলে তাঁর কাছে এই বার্তা পৌঁছনো যে কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল, সেই মুহূর্তগুলির কথা স্মরণ করতে করতেই বিষণ্ণ হয়ে পড়েন অনিল। তিনি বলেন, “রাহুলকে অনবরত ডেকে গিয়েছি। গলার আওয়াজের যে কম্পন, সেটা রাহুলের কাছে পৌঁছচ্ছিল। ঈশ্বরের অশেষ কৃপা যে, আমার সেই ডাকে সাড়াও দিচ্ছিল সে।”

রাহুলের অবস্থান জানতে দড়ির সাহায্যে কুয়োর ভিতের ক্যামেরা পাঠানো হয়েছিল। অনিল বলেন, “সেই ক্যামেরার মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করছিলাম, রাহুল ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে। প্রথমে মনে একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে, ছেলেটি বেঁচে আছে তো? কিন্তু ক্যামেরায় ওর নড়াচড়া দেখার পরই মনে জোর পেয়েছিলাম। নিজেকে বার বার বলছিলাম, বাচ্চাটিকে বাঁচাতেই হবে।”

অনিল আরও বলেন, “কেন জানি না বার বার মনে হচ্ছিল, ওই বাচ্চাটিও যেন আমায় বলছিল, যদি তুমি চেষ্টা কর, আমাকে বাঁচাতে ঠিক পারবেই!” উদ্ধারকারী হিসেবে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। চোখের সামনে অনেক মর্মান্তিক ঘটনা দেখেও চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে না। অন্তর ফেটে যায়। কেন না, উদ্ধারকারীদের কঠোর হতে হয়। এমনটাই জানিয়েছেন অনিল। তাঁর কথায়, “সে কারণেই বাচ্চাটির পরিস্থিতি দেখে কান্না পেলেও কাঁদতে পারিনি। কেন না, ভেঙে পড়া আমাদের কাজ নয়। যে করেই হোক প্রাণ বাঁচানোই আমাদের কাজ। তাই যত বারই রাহুল আমার ডাকে সাড়া দিয়েছে, গলা বুজে এলেও কাঁদতে পারিনি।”

শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত টানা বুকের উপর ভর দিয়ে শুয়ে কুয়োর ভিতরে থাকা ছেলেটির শারীরিক অবস্থার উপর নজর রাখছিলেন অনিল। তার শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিক চলছে কি না, কুয়োয় পাঠানো যন্ত্রের সাহায্যে শুনতে পাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, “রাহুলকে উদ্ধারের জন্য যখন ড্রিল মেশিন দিয়ে বড় বড় পাথর কাটা হচ্ছিল, তখন তার হৃদ্‌স্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল। শ্বাসপ্রশ্বাস জোরে জোরে চলছিল। চিৎকার করে সেই ড্রিল বন্ধ করতে বলেছিলাম। কারণ ভয়ে ছেলেটির যে কোনও মুহূর্তে হার্টফেল হতে পারত।”

অনিল বলেন, “রাহুলের নাম ধরে ডাকা শুরু করেছিলাম। তাঁকে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছি অনবরত। তার ভরসা এবং বিশ্বাস জুগিয়েছি প্রথমে। ছেলেটি কাঁদছিল। ওর কাছে কলা এবং এক প্যাকেট ফলের রস পাঠিয়েছিলাম। খেয়েওছিল সে।” তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যে, তাঁর ডাক শুনে কী ভাবে রাহুল সাড়া দিল। কেন না ছেলেটি কানেও শোনে না, কথাও বলতে পারে না। এই ঘটনাটিকে ‘চমৎকার’ই বলে দাবি করেছেন অনিল।

তাঁর কথায়, “রাহুলকে দেড় ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে দিইনি। আমার লক্ষ্য ছিল, যে ভাবেই হোক ওকে জাগিয়ে রাখতে হবে। একটা সময় রাহুলের গলা পর্যন্ত জল উঠে গিয়েছিল। তখন ঈশ্বরকে ডাকছিলাম, আর কিছুটা সময় দাও যাতে ছেলেটিকে বাঁচাতে পারি।” অনিল জানান, শিরদাঁড়া দিয়ে হিমশীতল স্রোত বয়ে গিয়েছিল যখন তিনি দেখতে পান রাহুল একা নেই ওই গর্তে, ওর সঙ্গে একটি সাপও রয়েছে। তাঁর কথায়, “সাপটি বিষধর না কি বিষধর নয়, তা ঠাওর করার চেষ্টা করছিলাম। যখন বুঝতে পারলাম সেটি বিষধর নয়, একটু স্বস্তি পেয়েছিলাম।”

অন্য বিষয়গুলি:

Chhattisgarh Borewell child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE