ছবি: পিটিআই
লখনউয়ে দাঁড়িয়েও লখিমপুরে কৃষক মৃত্যুর প্রসঙ্গে নীরব রইলেন নরেন্দ্র মোদী! তুললেনই না ওই প্রসঙ্গ।
যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে মোদী সরকারের মন্ত্রী-পুত্রের বিরুদ্ধে কৃষকদের গাড়িতে পিষে মারার অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরে আজ উত্তরপ্রদেশের মাটিতে পা দিয়েও প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করলেন না। কৃষকদের মৃত্যু নিয়ে শোক প্রকাশ করেও কিছু বলেননি তিনি।
কংগ্রেস, এসপি থেকে শুরু করে সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লখনউ যেতে পারলে, সেখান থেকে শ’দেড়েক কিলোমিটার দূরের লখিমপুরে যাচ্ছেন না কেন? কেনই বা তিনি নিহত কৃষকদের পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না? লখিমপুর যাওয়ার কোনও কর্মসূচি অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর গোড়া থেকেই ছিল না। তিনি আজ লখনউয়ে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব ও কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিজেপির ‘গরিব-দরদি’ সরকারের হয়ে প্রচার করলেও, লখিমপুরের ঘটনা নিয়ে কোনও কথা বলেননি।
বিরোধী নেতারা বলছেন, এটি মোদীর পুরনো কৌশল। যখনই কোনও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাঁর সরকারের দিকে প্রশ্ন ওঠে, কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়, তখন তিনি সেই বিষয়ে নীরব থাকার কৌশল নেন। সমস্যা থেকে নিজের দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করেন। যেমন, লাদাখে চিনের ভারতীয় সেনার জমি দখল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে প্রধানমন্ত্রী কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে ব্যর্থতার অভিযোগ ওঠার সময়েও প্রধানমন্ত্রীর মুখে তা নিয়ে টুঁ শব্দটি ছিল না। অনেক পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি মুখ খুলেছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, নয়া নাগরিকত্ব আইন হোক বা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন— সমস্ত কিছু নিয়েই প্রধানমন্ত্রী অনেক পরে মুখ খুলে পাল্টা আক্রমণে গিয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রথম দিকে বরাবরই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
কৃষকদের মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অমৃত মহোৎসবে যোগ দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন সমাজবাদী পার্টির (এসপি) প্রধান অখিলেশ যাদব। তাঁর বক্তব্য, ‘‘উত্তরপ্রদেশ কৃষকদের হত্যা নিয়ে শোকগ্রস্ত। এটা মহোৎসবের সময় নয়।’’ মোদী লখনউ পৌঁছনোর আগেই কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিলেন, ‘‘আপনি লখিমপুর আসুন। আমাদের অন্নদাতাদের কষ্ট বুঝুন। তাঁদের সুরক্ষা দেওয়া তো আপনার ধর্ম।’’
রবিবার লখিমপুরের ঘটনার পরেই লখনউয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে বিরোধী নেতাদের ঘরবন্দি করে ফেলা হয়েছিল। সোমবার রাতে লখিমপুরের ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে। যাতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তা ধরে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করে যাওয়া কৃষকদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলের গাড়ি পিছন থেকে এসে পিষে দিচ্ছে। তাতে আরও উত্তেজনা ছড়ায়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত লখনউ যাবেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী লখনউ গিয়েছেন। কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে এক মঞ্চে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী এমন ভাব করেছেন, যেন কিছুই হয়নি।
লখিমপুর যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে আটক প্রিয়ঙ্কা আজ ভিডিয়ো-বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেছেন, ‘‘শুনলাম আপনি স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করতে লখনউ আসছেন। আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনি কি এই (গাড়ি চাপা দেওয়ার) ভিডিয়ো দেখেছেন? দেশকে বলুন, কেন এই মন্ত্রীকে এখনও বরখাস্ত করা হয়নি? কেন গ্রেফতার করা হয়নি?’’
আজ শিবসেনার রাজ্যসভার দলনেতা সঞ্জয় রাউতও প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেন, ‘‘যদি কৃষকদের প্রতি আপনার ভালবাসা থাকে, তা হলে কথা বলুন।’’ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী কুমার বলেন, ‘‘আশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী অন্তত শোক প্রকাশ করবেন, নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাবেন। তা হল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy