ফাইল চিত্র।
চিন নিয়ে চুপ। নিশানায় ফের নেহরু।
আটান্ন বছর আগে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু প্রয়াত হয়েছেন। আজ লোকসভায় দাঁড়িয়ে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে কটাক্ষ করলেন। নেহরুর ‘অপরাধ’, লাল কেল্লা থেকে বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, কোরিয়ার লড়াই বা আমেরিকায় কোনও সমস্যা হলে এ দেশের মূল্যবৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়েন। দু’হাত উপরে তুলে মোদী দেখিয়েছেন, নেহরু নাকি ঠিক এই ভাবেই মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা থেকে হাত তুলে নিয়েছিলেন।
বিরোধীদের অনেকেই নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ‘অম্বানী-আদানির সরকার’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এই দু’জনের হাতেই অর্থনীতির সব কিছু তুলে দেওয়া হচ্ছে। তার জবাব দিতে গিয়েও নেহরুকে টেনেছেন মোদী। বলেছেন, নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীর সরকারকেও ‘টাটা-বিড়লার সরকার’ বলা হত।
কোভিড-বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে দেশের মানুষের সামনে এখন মূল সমস্যা দু’টি। এক, মূল্যবৃদ্ধি। দুই, বেকারত্ব। লোকসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বিতর্কে বিরোধীরা এই দুই নিয়েই মোদী সরকারকে নিশানা করেছিলেন। তার সঙ্গে তৃতীয় বিষয় ছিল, লাদাখে চিনের অনুপ্রবেশ ও ভারতের জমি দখল।
আগেও দেশের ‘পিছিয়ে থাকা’-র জন্য মোদী নেহরুকে দায়ী করেছেন। আজ জবাবি বক্তৃতাতেও মূল্যবৃদ্ধি সমস্যার প্রশ্নে নেহরুকে টেনে এনেছেন তিনি। কিন্তু বেকারত্বের সমস্যা নিয়ে একটি শব্দও ব্যয় করেননি। বেসরকারি হিসেবে, কোভিডের প্রথম ঢেউয়ে প্রায় ১২ কোটি মানুষ রুটিরুজি হারিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ১ কোটি। সে প্রসঙ্গে না গিয়ে মোদী শুধু বলেছেন, তাঁর সরকার পরিকাঠামোয় যে খরচ করছে, আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প রূপায়ণ করছে, বস্ত্র,
ছোট-মাঝারি শিল্পকে সাহায্য করছে, সেখান থেকেই রোজগারের সুযোগ তৈরি হবে।
চিন নিয়ে অবশ্য একটি কথাও প্রধানমন্ত্রী উচ্চারণ করেননি। কথায় কথায় পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিতে অভ্যস্ত নরেন্দ্র মোদী কেন চিনের সেনা ভারতে ঢুকে পড়লেও নীরব থাকেন, সেটাই রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধীদের প্রধান প্রশ্ন ছিল। মোদীর বক্তৃতার সময়েও বিরোধীদের বেঞ্চ থেকে ‘বেকারত্ব, চিনের অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা বলুন’ বলে দাবি উঠেছে। মোদী অবশ্য নীরবই থেকেছেন। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, ‘‘রাজামশাই ২০২০-র ২০ জুন বলেছিলেন, দেশে কেউ ঢোকেনি। আজ সংসদে নিজের শক্তির বড়াই করেছেন। বাস্তবে লাদাখে চিনের জমি দখল নিয়ে ১৪ বার বৈঠক করেও লাভ হয়নি।’’
প্রধানমন্ত্রীর গদিতে সাত বছর কাটিয়ে ফেলা নরেন্দ্র মোদী আজ তাঁর দেড় ঘণ্টার বক্তৃতার সবথেকে বেশি সময় ব্যয় করেছেন কংগ্রেসকে নিয়ে। নেহরু-গান্ধী পরিবারকে নিয়ে। কংগ্রেসের ব্যর্থতা বোঝাতে নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে কংগ্রেস শেষ কবে ক্ষমতায় এসেছে, আজ প্রধানমন্ত্রী তার পরিসংখ্যান দিয়েছেন। কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘আমার কখনও কখনও ওঁদের কাজকারবার দেখে মনে হয়, ওঁরা একশো বছর ক্ষমতায় আসব না বলে মনস্থির করে ফেলেছেন। তাই আমিও মনস্থির করে ফেলেছি।’’
রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদজ্ঞাপন প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কে রাহুল বলেছিলেন, বিজেপি-আরএসএসের ভাবনা অনুযায়ী ভারত ‘এক রাষ্ট্র’ নয়, ‘রাজ্যসমূহের সঙ্ঘ’। জবাব দিতে গিয়ে নাম না করে রাহুলকে ‘কংগ্রেসের এক সাংসদ’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। নেহরুকে উদ্ধৃত করে বলছেন, ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’-তে নেহরু ভারতকে রাষ্ট্র বলেছিলেন। নাম না করে বলেছেন, রাহুলের কথার কেউই কিছু বোঝেননি। সেই সঙ্গে আঙুল তুলেছেন, সংবিধানে রাষ্ট্র শব্দ নেই বলে এর অপমান করা হয়েছে। ব্রিটিশদের মতো ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’-এর নীতি নিচ্ছে কংগ্রেস। বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতায় উস্কানি দিচ্ছে। কংগ্রেস এখন ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর নেতা হয়েছে। অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী কেন সংবিধানের মৌলিক কর্তব্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে মৌলিক অধিকারকে লঘু করতে চাইছেন?
কংগ্রেস নেতাদের উদ্দেশ্যে রসিকতা করে বলেছেন, ‘‘আপনারা বলেন, আমি নেহরুর কথা বলি না। আজ শুধু নেহরুজি আর
নেহরুজি। আপ মজে লো। শুধু ভাবুন, নেহরুর সময়ে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা
কত গভীর ছিল যে তাঁকে হাত তুলে নিতে হয়েছিল। বলেছিলেন, কোরিয়ায় লড়াই হলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। আমেরিকায়
কিছু হলে দামে প্রভাব পড়ে। কংগ্রেস এখন ক্ষমতায় থাকলে
করোনার উপরে মূল্যবৃদ্ধির দায় চাপিয়ে দিত।’’
নিজে বার বার নেহরুর নাম করার পরে মোদী কংগ্রেস নেতাদের বলেছেন, ‘‘আপনারা কেন মোদী, মোদী করেন? এক মুহূর্ত মোদীকে ছাড়া থাকতে পারেন না। মোদীই আপনাদের প্রাণশক্তি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy