করদাতাদের অধিকার এবং দায়িত্ব নিয়ে তৈরি সনদ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
স্বাধীনতার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করে স্বেচ্ছায় আয়কর জমা করার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
স্বাধীনতা দিবসের দু’দিন আগে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী করদাতাদের অধিকার এবং দায়িত্ব নিয়ে তৈরি সনদ প্রকাশ করেছেন। এ দেশে এই ধরনের সনদ এই প্রথম। একই সঙ্গে আয়কর দফতরের অফিসারদের হাতে সাধারণ করদাতাদের হেনস্থা কমাতে নতুন মোড়কে ‘ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট’ (ব্যক্তিরহিত মূল্যায়ন) ব্যবস্থাও তিনি ঘোষণা করেছেন— যে ব্যবস্থায় আয়করের হিসেবনিকেশ করতে সাধারণ নাগরিককে আয়কর অফিসারদের মুখোমুখিই হতে হবে না। কিন্তু ১৩০ কোটির দেশে মাত্র দেড় কোটি মানুষ আয়কর মেটান জানিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, “নিজের আত্মাকে প্রশ্ন করুন। দু’দিন বাদেই ১৫ অগস্ট। স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেওয়া মানুষদের স্মরণ করুন। তখন আপনাদেরও মনে হবে, ‘আমাকেও কিছু করতে হবে’।” তবে কি আয়কর আদায়েও এ বার জাতীয়তাবাদ ভরসা মোদীর? প্রশ্ন বিরোধীদের।
আরও পড়ুন: এ বার সংক্রমিত সেই নৃত্যগোপাল
আরও পড়ুন: ফাটল রয়েই গেল রাজস্থান কংগ্রেসে
তবে গত ছ’বছর ধরেই আয়কর আদায় ব্যবস্থাকে ‘সিমলেস’ (মসৃণ), ‘পেনলেস’ (নির্ঝঞ্ঝাট) ও ‘ফেসলেস’ (ব্যক্তিরহিত) করার চেষ্টা চলছে বলে আজ দাবি করেছেন মোদী। বলেছেন, কর আইনে জটিলতা কমেছে, করের হার কমেছে, মামলা কমেছে। তার ফলে আয়কর রিটার্নের সংখ্যা আড়াই কোটি বেড়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ মানুষই শূন্য অঙ্কের রিটার্ন জমা করছেন। প্রধানমন্ত্রীকে সেই কারণেই দেশপ্রেমের ধুয়ো তুলে আয়কর জমা করার ডাক দিতে হয়েছে।
করদাতাদের সনদ
আয়কর দফতর করদাতাদের কাছে ১৪টি ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে
• আয়কর দফতর করদাতাদের ভদ্রতা, পেশাদারিত্বের সঙ্গে দ্রুত পরিষেবা দেবে
• সন্দেহের কারণ না-থাকলে করদাতারের সৎ ধরে নিয়েই আচরণ করবে
• আয়কর দফতরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য করদাতাদের নিরপেক্ষ ব্যবস্থা থাকবে
• আইন অনুযায়ী প্রাপ্য করই আদায় করা হবে
• করদাতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হলেও পরিচয় গোপন রাখা হবে
• আইনের অনুমোদন না-থাকলে করদাতাদের দেওয়া তথ্য গোপন রাখা হবে
• আয়কর দফতরের কাছে অফিসারেরা দায়বদ্ধ থাকবেন
• করদাতারা নিজের প্রতিনিধি বাছাই করতে পারবেন
• করদাতাদের অভিযোগ জানানোর ও তার সমাধানের ব্যবস্থা থাকবে
• নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ ভাবে কর সংক্রান্ত বিবাদ মেটানো হবে
• নির্দিষ্ট সময় অন্তর আয়কর দফতর পরিষেবার খতিয়ান জানাবে
• আয়কর আদায়ের খরচ কমানো হবে
• করদাতাদের ঠিক ও সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাবে
• আয়কর দফতর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে কোনও সিদ্ধান্ত জানাবে
করদাতাদের কী দায়িত্ব, তাঁদের কাছে কী প্রত্যাশা
• সততার সঙ্গে আয়কর জমা করবেন, আয়ের বিষয়ে সমস্ত তথ্য জানাবেন
• করদাতা তাঁদের দেয় করের বিষয়ে অবহিত থাকবেন, দরকারে আয়কর দফতরের সাহায্য চাইবেন
• সমস্ত নথি ঠিকমতো রাখবেন
• তাঁর প্রতিনিধি কী নথি জমা করছেন, কত টাকা কর মেটাচ্ছেন, সেই সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন
• কিছু জানতে চাওয়া হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তথ্য জমা করবেন
• নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দেবেন
‘ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট’
কী ভাবে কাজ করবে এই ব্যবস্থা?
• আয়করের হিসেবনিকেশ বা অ্যাসেসমেন্টের জন্য আয়কর অফিসারদের সঙ্গে করদাতার মুখোমুখি দেখা হবে না
• আয়করদাতাদের আয়কর অফিসে যেতে হবে না
• তথ্য-পরিসংখ্যান ঘেঁটে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’-এর মাধ্যমে করদাতা বাছাই হবে
• করদাতা কলকাতার বাসিন্দা হলে, কলকাতা বাদে অন্য কোনও শহরের অফিসারেরা অ্যাসেস করবেন, স্ক্রুটিনি ও রিভিউ আবার অন্য শহরে হবে
• কোন করদাতার অ্যাসেসমেন্ট কোথায় হবে, তা কম্পিউটার ঠিক করবে
• যে কোনও আয়কর নোটিস কেন্দ্রীয় ভাবে জারি হবে, প্রতিটি নোটিস চিহ্নিত করতে আলাদা নম্বর থাকবে
• আয়কর অফিসারেরা আলাদা ভাবে কাজ না করে দল হিসেবে কাজ করবেন
ব্যতিক্রম ঘটবে যে সব ক্ষেত্রে
• বড় মাপের জালিয়াতি • বড় অঙ্কের কর ফাঁকি
• বেনামি সম্পত্তি • আন্তর্জাতিক কর
• কালো টাকার অভিযোগ
বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়কর ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট জটিল। সেই কারণেই বহু মানুষ স্বেচ্ছায় কর জমা করতে চান না। অন্য দিকে, অর্থ মন্ত্রক রাজস্ব আদায়ের চড়া লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করায় আয়কর অফিসারেরা কড়া হতে বাধ্য হন। কী ধরনের আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে তাঁরা কর আদায়ের নোটিস নিয়ে হানা দেবেন, তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
আজ আয়করদাতাদের ‘সততাকে সম্মান’ জানানোর ব্যবস্থা চালু করে মোদীর দাবি, এতে ‘ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট’, ‘ফেসলেস আপিল’ ও করদাতাদের সনদের মতো সংস্কার করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকেই ‘ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট’ ও করদাতাদের সনদ চালু হয়েছে। ‘ফেসলেস আপিল’ চালু হবে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিন ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে।
সনদে আয়কর দফতরের ১৪ দফা দায়বদ্ধতা ও করদাতাদের ৬ দফা দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যালের মস্তিষ্কপ্রসূত এই সনদের কথা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশের সময় ঘোষণা করেছিলেন। ‘ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট’-এর প্রস্তাবনাও ২০১৭ সালে করেছিলেন মোদী। ২০১৯-এর অক্টোবরে তা চালু হয়। আজ তা পুরোপুরি ‘ফেসলেস’ করার উপরে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শিল্পমহলের হেনস্থার অভিযোগ দূর করতে চেয়েছেন বলে সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা।
বণিকসভা সিআইআই-এর সভাপতি উদয় কোটাক বলেন, “এতে শিল্পমহলের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। কর অফিসারদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের জায়গা, কর ব্যবস্থায় অস্পষ্টতা দূর হবে।” শিল্পমহলের মতে, এ বার আয়কর রিফান্ড ও পুরনো বিবাদ মেটানোর দিকে নজর দেওয়া দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy