আশ্বাস মিলল না মোদীর মনের কথায়।
বলেছিলেন, ৫০ দিনে দুর্ভোগ না কমলে জনতার দেওয়া যে কোনও শাস্তি মাথা পেতে নেবেন।
সেই ৫০ দিন পূর্ণ হতে আর বাকি মাত্র পাঁচ দিন। বছরের শেষ রেডিও বার্তাতেও স্পষ্ট করে বলতে পারলেন না, দুর্ভোগ কবে কমবে! শাস্তির কথা এ দিন অবশ্য আর বললেন না।
তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নোট বাতিলের পনেরো দিনের মাথায় যিনি নিজেই একটি সমীক্ষা করে দাবি করেছিলেন, দেশের ৯০ শতাংশের বেশি লোক দু’হাত তুলে তাঁকে আশীর্বাদ করছেন। আজ, ৫০ দিনের মেয়াদ ফুরনোর ৫ দিন আগে সেই মোদী কার্যত স্বীকার করে নিলেন, ছবিটা তা নয়! নোট বাতিলের পরের ছবিটা যে ভাল নয়, সেটা বেশ কিছু দিন ধরেই বুঝতে পারছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই তাঁর এই স্বীকারোক্তি নতুন নয় বলেই দাবি বিরোধীদের। আর এটাকে সামনে রেখেই ৩০ ডিসেম্বরের পর দেশজুড়ে আন্দোলনে নামতে চাইছে কংগ্রেস। এ নিয়ে আগামিকাল বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করবেন রাহুল গাঁধী।
৮ নভেম্বর নোট-বাতিলের ঘোষণার পর মোদী একটি অনলাইন সমীক্ষা করেছিলেন। সেই ফল প্রচার করে তাঁর দাবি ছিল, ৯০ শতাংশের বেশি মানুষের এতে সমর্থন আছে। আর আজ, রেডিও বার্তা ‘মন কি বাত’-এ প্রধানমন্ত্রী কার্যত কবুল করে নিলেন, গত দেড় মাসে আমজনতাকে বিপুল ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে। মোদীর কথায়, ‘‘নোট বাতিলের ফলে তৈরি হওয়া কষ্ট এবং ভোগান্তি সহ্য করার জন্য আমি জনসাধারণকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’
কিন্তু শুধু দুর্ভোগের কথা মেনে নেওয়া বা অভিনন্দনে যে ক্ষোভ মিটবে না, তা বিলক্ষণ জানেন প্রধানমন্ত্রী। তাই এ দিনও ফের জোর গলায় বললেন, তাঁর এই লড়াই আসলে দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য। এর পরের ধাপে বেনামি সম্পত্তির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবেন।
‘মাই গভ’ ও ‘নমো’— এই দু’টি অ্যাপে গত ক’দিনে অসংখ্য মতামত জমা পড়েছে। এ দিন সেই প্রসঙ্গ তুলে ‘মন কি বাত’-এ মোদীর দাবি, ওই সব মতামতের ৮০-৯০ ভাগই নোট-বাতিল নিয়ে। এক পক্ষ লিখেছে অসুবিধার কথা। আর এক পক্ষ লিখেছে, কী কী ভাবে নতুন নোটেও দেদার দুর্নীতি চলছে। তৃতীয় একটি পক্ষ আছে, যারা কষ্ট সহ্য করেও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। এই পরিস্থিতিতে জনতার ভোগান্তির সমব্যথী হতে চেয়ে মোদীর বক্তব্য, এই দুঃখ তাঁর ‘নিজের দুঃখ’। বিরোধীরা বলছেন, চেষ্টা করেও মোদীর এ দিনের বক্তব্যে বরাবরের চেনা আত্মবিশ্বাস দেখা যায়নি। বরং রক্ষণাত্মক হয়ে বারবার নিয়ম বদলের যুক্তি সাজিয়ে বলেছেন, মানুষের সমস্যা কমাতে এবং নতুন নতুন পন্থায় দুর্নীতি ঠেকাতেই এত বার নিয়ম বদল করা হয়েছে।
এ দিন মোদী বলেন, গত কয়েক দিনে ডিজিটাল লেনদেন ২০০-৩০০ শতাংশ বেড়েছে। সরকারি ভাবে ডিজিটাল ব্যবস্থাকে উৎসাহ দিতে ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ীদের জন্য কর ছাড় ও লাকি ড্র চালু করেছেন। আজ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য ‘ডিজি ধন ব্যাপার যোজনা’ ও ‘লাকি গ্রাহক যোজনা’ চালু করেছেন মোদী।
নোট বাতিলের পর থেকেই ‘ক্যাশলেস’ ব্যবস্থা চালু করার জন্য লাগাতার সওয়াল করে চলেছেন মোদী এবং তাঁর মন্ত্রীরা। এ নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষও করছেন। এ দিন মোদীর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, ‘ক্যাশলেস মানে লেস ক্যাশ ( কম নগদ), ক্যাশ লেস (নগদহীন) নয়’।
নোট বাতিলের দুর্ভোগ-পর্বে তাঁর সরকারের ব্যর্থতার কথাও এ দিন কবুল করেছেন মোদী। এত দিন মোদী সরকার দাবি করছিল, সরকারিতন্ত্রের মাধ্যমেই দুর্নীতিগ্রস্তরা ধরা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজ তিনি ‘গোপন’ কথাটি জনতাকে জানিয়ে বললেন, আমজনতার কাছ থেকেই নতুন নতুন দুর্নীতির খবর বেশি আসছে। গত ক’দিন ধরে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে কালো টাকাকে সাদা করা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা নিয়ে মুখ খুলে বললেন, আইন সকলের জন্যই সমান। কিন্তু এই পথ বন্ধ করতে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি।
নোট বাতিলের পর থেকে প্রতিটি অনুষ্ঠানেই সাহসী মুখ দেখিয়ে মোদী নানা অভয়বাণী দিয়েছেন। এ দিনও তা-ই করেছেন। কিন্তু দুর্ভোগ কবে কমবে, বলতে পারেননি। ৫০ দিনের সময়সীমা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক দিন ধরে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকেও বলা শুরু হয়েছে, আরও অন্তত ২-৩ মাস লাগবে অবস্থা স্বাভাবিক হতে। এই অবস্থায় মোদীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগ এনে ‘ব্র্যান্ড মোদী’কে সরাসরি বিঁধে রাহুল দ্রুত বিরোধী জোটের মুখ হয়ে উঠতে চাইছেন। এ জন্য সব বিরোধী দলকে এক ছাতার তলায় আনতেও সক্রিয় কংগ্রেসের সহ-সভাপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy