প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই এ বার কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন আরএসএসের শীর্ষ নেতৃত্ব। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত এক নৈশভোজ-বৈঠকে আরএসএস নেতারা মোদীকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী একাই সরকার চালাচ্ছেন। মন্ত্রী বা দলের নানা স্তরে যথেষ্ট আলোচনা করা হচ্ছে না, এমন একটা ধারণা মানুষের মনে তৈরি হয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এটা মোটেই ভাল লক্ষণ নয়। আরএসএস নেতারা মনে করছেন, এখনও বছর খানেক সময় আছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বেশি করে সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করুন।
সঙ্ঘ-নেতাদের দ্বিতীয় গুরুতর অভিযোগটি হল—গত চার বছরে নানা প্রকল্প শুরুর ঢক্কানিনাদ শোনা গেলেও বাস্তবে সেগুলির যথাযথ রূপায়ণ দেখা যাচ্ছে না।
আরএসএস নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হয়েছে বিলক্ষণ বুঝেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরেই সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবতের কাছে এই নৈশভোজের প্রস্তাব দেন তিনি। অমিত শাহ নিজে নাগপুরে গিয়ে সরসঙ্ঘচালকের সঙ্গে দেখা করেন। ভাগবত নিজে না-এলেও সংগঠনের শীর্ষ প্রতিনিধিদেরই পাঠান তিনি।
গত চার বছরে পরিস্থিতি যে প্রতিকূল হয়ে উঠেছে। সে কথাও প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করছেন। অখিলেশ-রাহুল গাঁধী-মায়াবতী একজোট হওয়ায় উত্তরপ্রদেশে উদ্বেগ বেড়েছে। অন্য রাজ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে, বিরোধীরা জোট বাঁধছে। তাই ২০১৯-এর আগে রাজ্যে রাজ্যে সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠনের সহায়তা চান মোদী। এ দিনের বৈঠকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও হাজির ছিলেন। আরএসএস নেতারা বলেন, তাঁরা চান ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদীই ফের জিতুন। কিন্তু গত চার বছরে বিজেপি সরকারের কাজকর্ম সম্পৰ্কে তাঁরা সুকৌশলে সমালোচনাও করেন।
মোদীর অনেক প্রশংসা, সরকারের কিছু ভাল কাজের উল্লেখ করেও ঘুরিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মোদীকে। আরএসএস নেতাদের মোদী বলেছেন, এই নেতিবাচক ধারণা বদলাতে তিনি সচেষ্ট হবেন। তবে তিনি মনে করেন, এটা মিডিয়ার বানানো ধারণা!
বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও নানা কারণে সঙ্ঘের সঙ্গে সরকারের বিরোধ বাধে। আডবাণী সেই সময়ে বাজপেয়ীর বাড়িতে ঠিক এই রকম একটি বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠকেও আরএসএস নেতারা তাদের ক্ষোভের কথা সবিস্তার ব্যাখ্যা করেন। এ বারেও আরএসএস নেতাদের অভিযোগ, নীতি প্রণয়নে সরকার তাঁদের যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কাশ্মীরে কঠোর অবস্থানকে লঘু করে হুরিয়তদের কাছে টানাটা মোটেই ঠিক পথ বলে মনে করছে না সঙ্ঘ।
সঙ্ঘের সাহায্য নিয়ে যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও করছেন মোদী। আদিত্যনাথ কোনও দিনই মোদীর পছন্দের লোক ছিলেন না। আরএসএস এর প্রার্থী হিসাবে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন যোগী। এখন নিজেকে হিন্দুত্বের মুখ হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন যোগী। কিন্তু রাজ্যে নানা ফ্রন্টে ব্যর্থতা, নির্বাচনী বিপর্যয়, এমনকি খাস গোরক্ষপুরে ভোটের ফলে ক্ষুব্ধ হন মোদী-শাহ। এখন আরএসএসের মধ্যস্থতায় পারস্পরিক বিবাদ মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। ভাগবত সম্প্রতি দিল্লিতে যোগীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বৈঠকে ভাগবত আসেননি। আরএসএস সূত্র বলছে, সঙ্ঘ বার্তা দিতে চেয়েছে— সরসঙ্ঘচালক ক্ষমতার কুর্সির কাছে আসেন না। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী আসবেন নাগপুরে। এটা পুরনো কমিউনিস্ট পার্টির মতো অবস্থান। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা আসতেন আলিমুদ্দিনে। প্রমোদ দাশগুপ্ত থেকে অনিল বিশ্বাস, বা বিমান বসুরা মহাকরণে যেতেন না।
তবে ভাগবতের আগের সরসঙ্ঘচালক কে সুদর্শন বা রজ্জুভাইয়ারা কিন্তু বাজপেয়ীর কাছে আসতেন। তবে ভাগবতের অনুপস্থিতিতে আরএসএস নেতারা পরোক্ষ ভাবে হলেও মোদী ও তাঁর সরকারের যে সমালোচনা করলেন, সেটা ভাগবতেরই মত। কারণ তাঁরা ভাগবতের প্রতিনিধি হয়েই বৈঠকে এসেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy