সমস্ত নথি জমা করেও ভবিষ্যত অনিশ্চিত কয়েক লক্ষের। ছবি: পিটিআই
গোটা দিন প্রলাপের মতো একই কথা বলে চলেছেন ৪৫ বছর বয়সি মীনা হাজারিকা, ‘‘আমি কি বাংলাদেশি নাকি? এবার কি আমাদের আত্মহত্যা করতে হবে!’’ প্রথম এবং দ্বিতীয় তালিকায় নাম থাকলেও তৃতীয় এনআরসি তালিকায় তাঁর নাম নেই। নেই তাঁর দুই মেয়ে বর্ণালী ও মিঠুর নামও।
মীনার দাবি, এনআরসি প্রক্রিয়ার জন্য বৈধ সমস্ত কাগজপত্র জমা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। গাঁটের কড়ি খসিয়ে সেবাকেন্দ্রে ছুটেছেন দু’দিন অন্তর। ব্রিটিশ আমল থেকে অসমের বাসিন্দা মীনার পরিবারের তবুও শেষ রক্ষা হল না। এনআরসি কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছেন, নামের বানান বিভ্রাটের কারণে তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে। ধরা গলায় সংবাদংমাধ্যমকে মীনা বলছেন, ‘‘এই কাগজপত্র তৈরি করা, তা সেবাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া, এসব করতে করতে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছি। কর্তৃপক্ষ বলছেন, সংশোধনীর জন্যে ৭ তারিখ যেতে। ততদিন আমি এই দেশের নাগরিক নই!’’
আরও পড়ুন:এনআরসি তালিকায় ‘দেশহীন’ ১৯ লক্ষ মানুষ, খুশি নয় কোনও দলই
আরও পড়ুন:‘স্বামীই চলে গেলেন, ডিটেনশন শিবিরে থাকলেই বা কী হবে!’
শুধু মীনা হাজারিকাই নন, গোটা অসমে থিকথিক করছে এমন অসংখ্য ক্ষুব্ধ মানুষ। ছোটগুমার বাসিন্দা আসিনা বেওয়ার নিজের নাম রয়েছে তালিকায় অথছ নেই তার তিন ছেলে, বৌমা, নাতির নাম। ২০ বছর ধরে গুয়াহাটিতে থাকেন বক্সার সৈয়দ রাজু কাজি। স্ত্রীর নাম থাকলেও তাঁর এবং সাত বছরের ছেলের রাজমুন কাজির নাম বাদ পড়েছে। ২৭ বছর বয়সি স্বাতী সিংহেরও মাথায় হাত। তাঁর ও তাঁর মায়ের নামও বাদ পড়েছে তালিকা থেকে। অভিযোগ ওই এক, বৈধ কাগজপত্রই জমা দিয়েছিলেন, অথচ তালিকায় নাম নেই। এখন সংশোধনের জন্যেও বিস্তর ঝক্কি পোহাতে হবে। কবে সংশোধনপর্ব মিটবে, তা-ও কেউ জানেন না।
তৃতীয় এনআরসি তালিকায় নাম না থাকা নাগরিকদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে বলা হয়েছে ১২০ দিনের মধ্যে। এই সময়সীমা আগে ছিল ৬০ দিন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আশ্বাস দিয়েছে, এই বিষয়ে শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে। ইতিমধ্যেই ১০০ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খোলা হবে। কিন্তু তৃতীয় দফায় এক ধাক্কায় নাম বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ লোকের। সংশোধনের জন্যে যাঁরা আবেদন করছেন, সেই সংখ্যাটাও কয়েক লক্ষ। সুতরাং বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও যারা অনাগরিক হয়ে গেলেন রাতারাতি, ঠিক কবে তাঁদের সুদিন ফিরবে, বলতে পারছেন না কেউই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy