Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Mohit Goel

২৫১ টাকায় স্মার্টফোনের সেই মোহিত গ্রেফতার ২০০ কোটির জালিয়াতিতে

এমবিএ পাশ করা মোহিতের উপর একাধিক মামলা ঝুলছে। তবে ২৫১ টাকায় স্মার্টফোনের স্বপ্ন দেখিয়ে গায়েব হয়ে যাওয়ার জন্যই তাঁকে চেনে গোটা দেশ।

মোহিত গোয়েল। —ফাইল চিত্র।

মোহিত গোয়েল। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:১৩
Share: Save:

মাত্র ২৫১ টাকায় স্মার্টফোনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সেই ব্যবসায়ী, মোহিত গোয়েলকে এ বার গ্রেফতার করল পুলিশ। ড্রাই ফ্রুট নিয়ে প্রতারণার মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় ২০০ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। স্মার্টফোন জালিয়াতি মামলায় আগেও গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। এ ছাড়াও একাধিক মামলা ঝুলছিল তাঁর নামে। কিন্তু আদালত গ্রেফতারিতে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় এতদিন জেলের বাইরেই ছিলেন তিনি। মোহিত এবং তাঁর সহযোগীদের কাছ থেকে অডি-সহ দু’টি গাড়ি, ৬০ কেজি ড্রাই ফ্রুট এবং বহু নথি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

রবিবার মোহিত ও তাঁর ৫ সহযোগীকে নয়ডার সেক্টর ৫১-র মেঘদূতানম পার্কের কাছ থেকে গ্রেফতার করে নয়ডা পুলিশ। অভিযোগ, ‘দুবাই ড্রাই ফ্রুটস অ্যান্ড স্পাইসেস হাব’ নামের একটি সংস্থা খুলে ড্রাই ফ্রুটের ব্যবসা করছিলেন মোহিত। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া দামে বিপুল পরিমাণ ড্রাই ফ্রুট কিনে রাজধানী এবং সংলগ্ন এলাকায় খোলা বাজারে তা আরও চড়াদামে বিক্রি করতেন। ব্যবসায়ীদের আস্থা জিততে প্রথম প্রথম অর্ডার হাতে পাওয়ার আগেই টাকা মিটিয়ে দিতেন। কিন্তু পরিচিতি তৈরি হতেই, নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ৪০ শতাংশ টাকা দিয়ে পুরো অর্ডার বাগিয়ে নিতেন। বাকি টাকার চেক লিখে দিতেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ওই চেক ভাঙাতে গেলে, তা বাউন্স করত।

দীর্ঘ দিন ধরে মেহিতের বিরুদ্ধে এমন প্রায় ৪০টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। জানা যায়, পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, দিল্লি, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং আরও একাধিক রাজ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জালিয়াতি করেছেন তিনি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সেক্টর ৬২-এর কোরেন্থামের কাছে মাসিক ৩ লক্ষ টাকায় একটি অফিস ভাড়া নিয়ে আরও ৩-৪ জনের সঙ্গে মিলে ব্যবসা চালান মোহিত। সেখানে কর্মীদের মধ্যে তিন বিদেশি নাগরিককেও নিয়োগ করেছিলেন তাঁরা, যাঁরা মূলত ফ্রন্ট অফিসের কাজকর্ম চালাতেন।

আরও পড়ুন: নতুন ২ কৃষি আইনই স্থগিত করে দিল সুপ্রিম কোর্ট, রফার খোঁজে কমিটি​

সেই মতো মোহিত এবং তাঁর সহযোগীদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালাচ্ছিল পুলিশের একটি দল। শেষমেশ রবিবার মেঘদূতানম পার্কের কাছ থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। নয়ডার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (আইন শৃঙ্খলা) লভ কুমার জানিয়েছেন, অধিকাংশ সময় প্রতারিত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেই অপরাধ আইনে ভুয়ো মামলা ঠুকতেন মোহিতরা। সাজানো ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং অন্যান্য শীর্ষ আধিকারিকদের দিয়ে হুমকিও দেওয়াতেন।

মোহিতের সঙ্গে মিলে ওই সংস্থাটি চালাতেন সুমিত যাদব, প্রবীণ সিংহ নির্বাণ, রাজীবকুমার ওরফে মুরসাফিল লস্কর নামের চার যুবক। মালিক সাজানো হয়েছিল ওমপ্রকাশ জাঙ্গির নামের এক ব্যক্তিকে। তাঁকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেক্টর ৬১-র রোহিত মোহন নামের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ডিসেম্বরে ড্রাই ফ্রুট ব্যবসায় জালিয়াতি নিয়ে মোহিতের সংস্থার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগটি দায়ের হয়।

এমবিএ পাশ করা মোহিতের উপর একাধিক মামলা ঝুলছে। তবে ২৫১ টাকায় স্মার্টফোনের স্বপ্ন দেখিয়ে গায়েব হয়ে যাওয়ার জন্যই তাঁকে চেনে গোটা দেশ। ২০১৬ সালে ‘রিংগিং বেল’ নামের একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তার আওতায় প্রত্যেক দেশবাসীর হাতে ২৫১ টাকায় সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘ফ্রিডম ২৫১’ স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দিয়ে তা নিয়ে ফলাও করে বিজ্ঞাপনও ছাপান তিনি। পেটিএম এবং অনলাইনে অগ্রিম টাকা জমা নিতে শুরু করে দেন। কিন্তু টাকা নিয়েও আজও ওই ফোন সরবরাহ করতে পারেননি উনি।

আরও পড়ুন: কোভিড টিকা কারা, কী ভাবে পাবেন, আনন্দবাজার ডিজিটালে পড়ে নিন​

এই ‘রিংগিং বেল’ জালিয়াতি কাণ্ডে ২০১৭-য় মোহিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জামিনে বেরিয়ে ‘মাস্টার ফ্রিডম কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সে বার ২ হাজার ৩৯৯ টাকায় স্মার্টফোন এবং ৯ হাজার ৯০০ টাকায় এলইডি টিভির প্রতিশ্রুতি দেন। সে বারও টাকা দিয়ে ফোন-টিভি পাননি বহু মানুষ। নয়ডা, গাজিয়াবাদ, জলন্ধর, পানিপত, গোরক্ষপুরের মতো জায়গা থেকে ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা হয় তাঁর নামে। ২০১৮ সালে মনোজ কাদিয়াঁর সঙ্গে মিলে ‘ফ্যামিলি অব ড্রাই ফুডস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করলে, বরেলীতে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআরটি দায়ের হয়। তার পরেও ‘শ্রী শ্যাম ট্রেডিংস ড্রাই ফুডস’ এবং ‘আয়ুর্বেদিক কমোডিটিজ’ নামে দু’টি সংস্থা তৈরি করেন মোহিত এবং তাঁর সহযোগীরা। সেক্টর ৫৮-য় ওই সংস্থার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের হয়।

সোমবার সূর্যপুর আদালতে মোহিতকে তোলা হলে, আদালত চত্বরের বাইরে ভিড় করেন প্রতারিত ব্যবসায়ীরা। মোহিতের বিরুদ্ধে সমস্বরে স্লোগান দেন তাঁরা। আদালতে বাঘা বাঘা আইনজীবী মোহিতের হয়ে সওয়াল করতে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়নি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy