ছবি: পিটিআই।
মহাকাশে গোয়েন্দাগিরি!
১৯ তারিখ ফিজির রাজধানী সুভাতে ১৪টি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রের নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, এই সব অঞ্চলে ভারতের ‘স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং স্টেশন’ তৈরির বিষয়ে চূড়ান্ত কথাবার্তা হবে। ট্র্যাকিং স্টেশনের অর্থ, সেখানকার কৃত্রিম উপগ্রহের কক্ষপথে অন্য রাষ্ট্রের (এ ক্ষেত্রে চিন) ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত খবর এবং অন্যান্য মহাকাশ-গতিবিধি নজরদারির মধ্যে আনা। পাশাপাশি এই অঞ্চলটিকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ঢাল হিসেবে গড়ে তোলা (যাতে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারতের উপর কোনও হামলা হলে তা ঠেকানো যায়) এবং সেখানে ভারতীয় নৌ-সেনার বহর বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে।
কয়েক বছরে এই অঞ্চলে চিনের অতিসক্রিয়তা দিল্লির উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আর তাই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ভারতের কৌশলগত ঘাঁটি বানিয়ে এই ‘পাল্টা’-র উদ্যোগ। ফিজি ছাড়া যে সব দ্বীপরাষ্ট্রের নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন, তার মধ্যে রয়েছে সলোমন দ্বীপ, পাপুয়া নিউ গিনি, তাভুলা, কিরিবাটি, টোঙ্গা দ্বীপ।
৩৩ বছর পরে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ফিজি সফরে যাচ্ছেন। বিদেশমন্ত্রক জানাচ্ছে, এই ‘আউট অব দ্য বক্স’ সফরটি নিয়ে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করেছেন মোদী। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি ভারতের বিদেশনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। ফিজির মোট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং সেখানকার দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায় হিন্দু। ফলে রাজনৈতিকভাবে এই অঞ্চলের প্রতি মোদী সরকারের নজর পড়া স্বাভাবিক। তবে সেটা নেহাতই কূটনৈতিক মোড়ক। নয়াদিল্লির প্রকৃত লক্ষ্য, মহাকাশ দখলের লড়াইয়ে এই অঞ্চলে একটি ঘাঁটি বানানো। ভৌগোলিক দিক থেকে এই সব দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ ভারতের কাছে কৃত্রিম উপগ্রহ কেন্দ্র তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে চিনের মহাকাশ-অভিযানের কার্যকলাপ সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। এ ছাড়া, রিমোট সেন্সিং-প্রযুক্তির মাধ্যমে চিন সীমান্তের সামরিক পরিকাঠামো সংক্রান্ত তথ্যও সাউথ ব্লকের কাছে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মোদীর এই বৈঠকের ঠিক আগে বিষয়টি আঁচ করতে কাল ফিজিতেই দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বৈঠক করছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং! সরকারি সূত্রের বক্তব্য, কয়েক বছরে প্রায় নিঃশব্দে ফিজি-সহ এখানকার বিভিন্ন দ্বীপের উপরে প্রভাব বাড়িয়েছে বেজিং। বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রকল্পে অঢেল অর্থ ঢালা হয়েছে চিনের পক্ষ থেকে। ২০০০-এ ফিজিতে সামরিক অভ্যুত্থান হওয়ায় আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড ফিজির উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তখন বিরাট আর্থিক ঝুলি নিয়ে দ্বীপে পা রেখেছিল চিন। বিনিময়ে এখানকার কৃত্রিম উপগ্রহ কক্ষপথ (অরবাইটাল স্লট) ব্যবহারের অনুমতিও আদায় করে নিয়েছিল সহজেই।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মহাকাশে চিনের প্রভাব এবং আধিপত্য বাড়ার বিষয়টি ভারতের সামরিক এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে যথেষ্ট উদ্বেগের। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য পিপল্স লিবারেশন আর্মির কাছে যায় বলে খবর। ভারতীয় সীমান্তে বিভিন্ন সময় চিনা আগ্রাসনের উপাদান হিসেবেও সেটি ব্যবহার করা হয়েছে। ভারত-চিন সীমান্তে এবং অন্যান্য এলাকায় ভারতীয় সেনার পরিকাঠামো, অবস্থান সম্পর্কে তথ্য ও ছবি বেজিং পায়, যা অনেক সময় হাতবদল হয়ে পাকিস্তানের কাছেও চলে গিয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা।
ফিজি এবং সংলগ্ন দ্বীপগুলোতে তাই পাকাপাকিভাবে ‘স্ট্র্যাটেজিক হাব’ বা ‘কৌশলগত ঘাঁটি’ বানাতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এখান থেকে যেমন নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে, তেমনই এখানে একটি ঘাঁটি থাকলে অন্য দেশের (চিন) ‘স্পাই স্যাটেলাইট’-এর গতিবিধিও আগাম আন্দাজ করতে পারা যাবে। এখানে ভারতীয় নৌ-সেনার ঘাঁটি তৈরি করা সম্ভব কিনা তা নিয়েও কথা হবে। ফিজিকে বছরে এক লাখ পঁচিশ হাজার ডলার অনুদান দেয় ভারত। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে সেটিকে বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া, সে দেশের শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রেও সহযোগিতার হাত দরাজ ভাবে বাড়িয়ে দেবে নয়াদিল্লি।
একযোগে কাজের প্রস্তাব
সন্ত্রাসবাদ বা মাদক পাচারের মতো অপরাধ রুখতে ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করা উচিত বলে মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মায়ানমারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রজাকের সঙ্গে দেখা করার সময়েই আশিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস্) দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজের কথা বলেন মোদী। তিনি জানান, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার গোয়েন্দাদের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করে এক ভারতীয় অপরাধীকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy