Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ভর্তুকি ছাড়ুন গ্যাসে, আর্জি মোদীর

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দিতে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার বোঝা বইতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। কিন্তু এই বিপুল ভর্তুকির চার ভাগের মাত্র এক ভাগ যাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও গরিবদের কাছে! কেরোসিনে ভর্তুকির পরিমাণ ৮০০০ কোটি টাকা, কিন্তু রেশনে বরাদ্দ কেরোসিনের খুব কমই পান গরিবরা। আর্থিক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এলেও নরেন্দ্র মোদী সরকার কিন্তু ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারছে না। তাই সরকারের তরফে চালু হয়েছে ‘অনুরোধের আসর’!

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দিতে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার বোঝা বইতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। কিন্তু এই বিপুল ভর্তুকির চার ভাগের মাত্র এক ভাগ যাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও গরিবদের কাছে! কেরোসিনে ভর্তুকির পরিমাণ ৮০০০ কোটি টাকা, কিন্তু রেশনে বরাদ্দ কেরোসিনের খুব কমই পান গরিবরা।

আর্থিক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এলেও নরেন্দ্র মোদী সরকার কিন্তু ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারছে না। তাই সরকারের তরফে চালু হয়েছে ‘অনুরোধের আসর’! আজ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মোদী বলেন, “যাদের ভর্তুকি দরকার নেই, যারা ভর্তুকি ছাড়াই চালিয়ে নিতে পারবেন, তারা এই আন্দোলনে যোগ দিন। নিজে থেকেই বলুন, গ্যাসের ভর্তুকি প্রয়োজন নেই। এতে দীর্ঘ মেয়াদে গরিব মানুষের লাভ হবে।”

মোদী ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই আশা করেছিলেন, ভর্তুকির বহর কমানোর ক্ষেত্রে সাহসী সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। কিন্তু দু’টি বাজেটে সেই সাহস দেখাতে পারেননি মোদী, অরুণ জেটলি। চলতি বছরের বাজেটে রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ কমেছে ঠিকই, কিন্তু তার কারণ ভর্তুকি ছাঁটাই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমা।

কেন্দ্রের আর্থিক সমীক্ষা বলছে, যাদের ভর্তুকি দরকার, তাদের খুব সামান্য অংশের কাছেই ভর্তুকি যাচ্ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, আয়ের নিরিখে নীচের দিক থেকে ৫০% পরিবার মাত্র ২৫% ভর্তুকিতে দেওয়া এলপিজি ব্যবহার করেন। বাকি ৭৫% ভর্তুকির সিলিন্ডার ব্যবহার করেন উঁচুতলার ৫০% পরিবার। কেরোসিনের ভর্তুকি দেওয়া হয় একেবারে গরিব মানুষের জন্য। কিন্তু রেশনের কেরোসিনের ৪১% বণ্টন ব্যবস্থার মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। বাকি কেরোসিনের ৪৬% প্রকৃত গরিবরা ব্যবহার করেন।

সরকারি সূত্রের খবর, অদূর ভবিষ্যতেও ধনী বা উচ্চবিত্তদের জন্য রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি তুলে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের। যারা সর্বোচ্চ হারে আয়কর দিচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রেও রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি দিয়ে যাওয়া হবে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক এখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই ভর্তুকি দিচ্ছে। কাজেই একটি নির্দিষ্ট আয়ের উপরের মানুষদের চিহ্নিত করে তাদের ভর্তুকি তুলে দেওয়া কঠিন নয়। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে তার ফল কী হবে, সেই ভেবেই ওই ঝুঁকি নিচ্ছে না সরকার। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “যদি আমরা ঠিক করি মাসিক ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় হলে ভর্তুকি দেব না, তা হলে ৪৯ হাজার টাকা আয় হলে ভর্তুকি পাবেন। কিন্তু ৫১ হাজার হলে পাবেন না। এঁরাই ক্ষুব্ধ হবেন।”

বাধ্য হয়েই তাই ভর্তুকি কমানোর জন্য পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক ‘অনুরোধের আসর’ শুরু করেছে। প্রথমে বিজ্ঞাপন দিয়ে সচ্ছল পরিবারের কাছে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছাড়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তার পর পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান নিজে টেলিফোন করে মন্ত্রী, সাংসদ, সরকারি পদস্থ কর্তাদের এই ভর্তুকি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে এক জনকে ফোন করছেন তিনি। ধর্মেন্দ্রর অনুরোধে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগির মতো অনেকেই ভর্তুকি ছেড়ে দিয়েছেন। জেটলি ও অন্য সাংসদদেরও একই পথে হাঁটার অনুরোধ করেছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy