প্রচারে মোদী। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে নয়াদিল্লির রোহিণী এলাকার নির্বাচনী সভায়। ছবি: পিটিআই
বিরোধ যতই থাক, রাজনীতিতে সৌজন্যও বলেও তো কিছু থাকে! তাই এই পড়তি শীতে রাজধানীর ভোটের উত্তাপেও প্রতিপক্ষ অরবিন্দ কেজরীবালকে ভোলেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৫০১ টাকা চাঁদা দিয়েছেন আম আদমি পার্টির তহবিলে!
শুধু কি মোদী? প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতের অতিথি হয়ে সবে এক হপ্তা হল নিজের দেশে ফিরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দিল্লির ভোটে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিপক্ষের কথা মনে রেখেছেন তিনিও। গত কাল সেই বারাক হুসেন ওবামাও আপকে ২০১ টাকা চাঁদা দিয়েছেন আমেরিকা থেকে!
আরও আছে। কেজরীবালের মুখ চেয়ে টাইম মেশিনে সওয়ার হয়ে নিজের ভাঁড়ার থেকে এক টাকা চাঁদা দিয়েছেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী! ভোট বাজারে আপের প্রতি এই বদান্যতার তালিকায় বিরোধী দলের নেতাদের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
এ সব হজম করতে যদি বিষম খেতে হয়, তা হলে এক বারের জন্য চোখ বোলাতে হবে আপের ওয়েবসাইটে। গত কাল আপ তহবিলে চাঁদা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ ওঠার পরই রাজধানীর প্রচার-কাজিয়া এখন এই সব দান-কাহিনিকে ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে। ওই ওয়েবসাইট ঘেঁটে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চোখ ধাঁধানো তথ্য। দল চালানোর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিয়ে বড়াই করে কেজরীবাল দাবি করেন, তাঁদের দলে সব টাকা চেকে নেওয়া হয়। যিনি টাকা দিচ্ছেন, তাঁর সমস্ত গতিবিধি পরখ করেই। যদি তাই হয়, তা হলে ভুয়ো সংস্থা মারফত ২ কোটি টাকা কোন যুক্তিতে জমা নিল আপ? মোদী, ওবামা মায় গাঁধীর নামেও কী ভাবে জমা পড়ছে চাঁদা?
আপ নেতারা বলছেন, এ সবই বিরোধীদের চক্রান্ত। তদন্ত হবে।
কিন্তু ভোট-যুদ্ধের চিঁড়ে তদন্তে ভেজে না। দিল্লিতে ভোটের আর চার দিন বাকি। জনমত সমীক্ষায় পিছিয়ে পড়ে বিজেপি নেতৃত্ব এখন কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ নিয়ে তেড়েফুঁড়ে নেমেছেন কেজরীবালের বিরুদ্ধে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ তাঁর জনসভায় কেজরীবালের নাম না করে কটাক্ষ করেন, “সুইস ব্যাঙ্কে কার কোন অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেই নম্বর পকেটে নিয়ে যিনি ঘুরে বেড়ান, তিনি নিজের অ্যাকাউন্টেরই খবর রাখেন না! মধ্য রাতে কালো টাকার কারবার! মিথ্যা বেশি দিন চলে না। রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধেও এক সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধেও। কিন্তু বেশি খেসারত দিতে হয়েছিল রাজীবকে, কারণ তিনি এ ভাবে নিজেকে ‘মিস্টার ক্লিন’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। মানুষ ভুল মাফ করে দেয়, ধোঁকাবাজকে নয়।”
আজও কেজরীবালের দলের প্রাক্তন সদস্য গোপাল গয়াল ভুয়ো সংস্থার দু’টি ব্ল্যাঙ্ক চেক দেখিয়ে ফের প্রমাণের চেষ্টা করেন, কী করে কালো টাকা ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে সাদা করেন কেজরীবাল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকাকে সাদা করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন কেজরীবাল।” ভোটের মুখে নিজের ভাবমূর্তিতে এমন ধাক্কা সামলাতে কেজরীবাল সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, “গোটা সরকারিতন্ত্র দিয়ে তদন্ত করুক এনডিএ সরকার। বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশ করে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে।”
কেজরীবালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মোদী যখন আপের থেকে হাওয়া কেড়ে নিতে চাইছেন, একই প্রশ্নে কংগ্রেস কিন্তু নিশানা করছে আপ-বিজেপি দুই শিবিরকেই। কেজরীবালকে বিঁধে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মা আজ বলেন, “সততার প্রতীকদের সব মুখোশ একে একে খুলে যাচ্ছে! স্বচ্ছ প্রশাসনের দাবিতে এক সময় যাঁরা পথে নেমেছিলেন এখন দেখা যাচ্ছে তাঁরাই হাওয়ালায় চাঁদা তুলছেন। কালো টাকা সাদা করছেন।”
একই সঙ্গে কিরণ বেদীর বিরুদ্ধেও পুরনো অনিয়মের অভিযোগ খুঁচিয়ে তুলছে কংগ্রেস। আনন্দ শর্মা বলেন, “বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীও ধোয়া তুলসী পাতা নন। তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান। দেখা গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিমন্ত্রণে তিনি যখন সফরে গিয়েছেন, তখন ভুয়ো বিল দেখিয়ে আয়োজকদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করেছেন। রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত হওয়ায় কিরণ এয়ার ইন্ডিয়ার ইকনমি শ্রেণির টিকিট ৭৫ শতাংশ কম দামে পান। অথচ কম দামে টিকিট কেটে সেই বাবদ তিনি আয়োজকদের কাছ থেকে দশ গুণ টাকা নিয়েছেন। মাইক্রোসফটের ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান তছরুপের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশে কিরণ বেদীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কিন্তু দু’মাস আগে কেন সেই মামলা দিল্লি পুলিশ বন্ধ করে দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
আপকে বিঁধলেও কিরণকে কেন এ দিন মূল নিশানা করল কংগ্রেস? দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, আপের চাঁদা কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস হতেই বিজেপি তা নিয়ে মুখর হয়েছে ভোটে ফায়দা তুলতে। কংগ্রেসের লক্ষ্য বিজেপিকেও ঠেকানো। তাই আপ-বিজেপি উভয়ের দিকেই আঙুল তুলে দুর্নীতি-বিরোধী পরিসরে কংগ্রেসের অবস্থান শক্ত করতে চাইছেন অজয় মাকেন। যে কারণে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে দিয়েও এ বার খুব বেশি প্রচার করায়নি কংগ্রেস। এমনিতেই শীলা-মাকেন সমীকরণটা মোটে মসৃণ নয়, তার উপরে শীলা বেশি প্রচার করলে তাঁর জমানার কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতির প্রসঙ্গ ফের খুঁচিয়ে তুলতে পারে আপ ও বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy