Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ধরে দেখান সনিয়াকে, উস্কে দিলেন কেজরী

দক্ষিণে মোদী। আর উত্তরে সনিয়া। দেশের দু’প্রান্ত থেকে কাল দুই দলের দুই নেতা একে অন্যের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন। আজ দুই নেতাকেই এক সারিতে এনে মাঠে নামলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সনিয়া গাঁধীর গত কালের পথ ধরেই তিনি আজ হাজির দিল্লির যন্তর-মন্তরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

দক্ষিণে মোদী। আর উত্তরে সনিয়া। দেশের দু’প্রান্ত থেকে কাল দুই দলের দুই নেতা একে অন্যের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন। আজ দুই নেতাকেই এক সারিতে এনে মাঠে নামলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সনিয়া গাঁধীর গত কালের পথ ধরেই তিনি আজ হাজির দিল্লির যন্তর-মন্তরে। কপ্টার-দুর্নীতির প্রসঙ্গে সনিয়াকে বেঁধার পাশাপাশি তিনি উস্কে দিতে চাইলেন নরেন্দ্র মোদীকেও। তাঁর বক্তব্য, মোদী সনিয়াকে ভয় পান। তাই দু’বছরেও কপ্টার-ঘুষ কাণ্ডের তদন্ত এক চিলতেও এগোয়নি। সনিয়াকে গ্রেফতার করে জেরার হিম্মতও নেই মোদীর। উভয়ের মধ্যে সমঝোতা এটাই, নরেন্দ্র মোদীর ‘ভুয়ো’ ডিগ্রি নিয়ে চুপ থাকবেন সনিয়া। আর শুধু তদন্তের কথা বললেও মোদীও সনিয়াকে গ্রেফতার করবেন না। উভয়েই দুর্নীতির শরিক।

দুর্নীতিতে কংগ্রেস-বিজেপি ‘ভাই ভাই’— কেজরীবালের এই তত্ত্ব নতুন নয়। তৃণমূলও প্রকাশ্যে অন্তত দুই দলের থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে এ ধরনের অবস্থান নিয়ে চলছে। কিন্তু কেজরীবাল এ দিন পথে নেমে এটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চাইলেন। জাতীয় রাজনীতিতে নিজের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার একটা চেষ্টা চালালেন ফের। জবাবে দিনের দিনই মুখ খুলেছে দুই শিবির। কংগ্রেস-বিজেপি উভয়েরই প্রশ্ন, কেজরীবাল নিজের দায়িত্ব পালনে কী করেছেন?

বিজেপির তথা সরকারের তরফে কেজরীকে জবাব দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর বলেন, ‘‘কেজরীবালের উচিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে সিবিআইয়ে আসা। আয়কর দফতরের অফিসার থাকতে ক’জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন— আগে তার জবাব দিন।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র রাগিনী নায়ক বলেন, ‘‘দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে তো তিনি শীলা দীক্ষিতকেও জেলে পাঠাবেন বলেছিলেন। ক্ষমতায় এসে চুপ!’’

আপ-এর তরফে তরজায় নেমে আশুতোষ মনে করান, কেজরী প্রথম বার ক্ষমতায় এসেই শীলার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর দিল্লি সরকারের হাত থেকে ‘অ্যান্টি করাপশন ব্যুরো’ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আশুতোষ তাই কেন্দ্রের দিকেই বল ঠেলে বলেন, ‘‘শীলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কাজটা এখন মোদী সরকারের। কিন্তু কংগ্রেস- বিজেপি হাতে হাত ধরে রয়েছে, তাই কেন্দ্রও ব্যবস্থা নেয়নি।’’

কেজরীবালকে জবাব দিলেও বিজেপি ভিতরে ভিতরে অস্বস্তিতে। কারণ, সনিয়াকে গ্রেফতার নিয়ে মোদীকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। অথচ বিজেপি জানে, অগুস্তাওয়েস্টল্যান্ড হেলিকপ্টার ঘুষ-কাণ্ডে তদন্তের জাল গোটাতে সময় লাগবে। পর্রীকর যে ‘রাঘববোয়াল’কে গ্রেফতার করার কথা বলছেন, তা সম্ভব হবে ঘুষের টাকা কোন পথে গিয়েছে তার হদিস পেলে। এর জন্য বিদেশি ব্যাঙ্কেও তদন্ত করতে হবে।

বিজেপি নেতাদের এটাও ভাবতে হচ্ছে যে, কংগ্রেসকে আক্রমণ এক বিষয়, কিন্তু ভবিষ্যতে সনিয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলেও তাঁকে গ্রেফতারের আগে দু’বার ভাবতে হবে। কারণ, তাতে গাঁধীরা সহানুভূতি কুড়োনার সুযোগ পাবেন। শক্তি বাড়বে কংগ্রেসেরই। যন্তর-মন্তরে কাল গ্রেফতার বরণ করে সনিয়া তারই বীজ পুঁতে রাখার চেষ্টা করেছেন।

কেজরী যে এখনও শীলার বিরুদ্ধে বা রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলেও বিজেপি যে পদক্ষেপ করেনি— এ সবের পিছনেও রাজনীতির অঙ্ক। বিজেপির সমস্যা কেজরীবাল যে ভাষায় পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করেন, সেই স্তরে গিয়ে তাঁর মোকাবিলা দুষ্কর। দিল্লি বিজেপি সভাপতি সতীশ উপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘তদন্তের মাঝে এমন মন্তব্য করে কেজরী আসলে কংগ্রেস ও সনিয়া গাঁধীরই সুবিধা করতে চান।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kejriwal Sonia Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE