আর এসপিজি নিরাপত্তা পাবে না গাঁধী পরিবার।
গাঁধী পরিবারের সদস্যদের এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, এ বার থেকে আর স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পাবেন না সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। তার বদলে শুধুমাত্র জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পাবেন তাঁরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে পারে।
রাজনীতিকদের উপর হামলার আশঙ্কার প্রেক্ষিতেই তাঁদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। সম্প্রতি গাঁধী পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখার পরই এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে দিল্লি সূত্রে খবর। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি আধিকারিক বলেন, ‘‘এসপিজি নিরাপত্তার আওতায় যাঁরা রয়েছেন, প্রতিবছরই তাঁদের উপর হামলার আশঙ্কা কতটা রয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা হয়। গাঁধী পরিবারের উপর হামলা আশঙ্কা অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে সম্প্রতি দেখা গিয়েছে। তাই এসপিজি নিরাপত্তার বদলে অন্য বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
এ নিয়ে গাঁধী পরিবার এবং কংগ্রেসের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। সনিয়া-রাহুলদের সরকারের তরফে এ নিয়ে কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি গাঁধী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের। তবে এসপিজি জওয়ানদের ধন্যবাদ জানিয়ে এ দিন সন্ধ্যায় টুইটারে রাহুল গাঁধী লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমার পরিবার এবং আমার নিরাপত্তায় অক্লান্ত পরিশ্রম করার জন্য এসপিজির সব ভাই-বোনদের ধন্যবাদ। এই লম্বা যাত্রাপথে পাশে থাকার জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি। অনেক ভালবাসা পেয়েছি। অনেক কিছু শিখেছি। আমার সৌভাগ্য যে আপনাদের সংসর্গে থাকার সুযোগ পেয়েছি। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল।’
A big thank you to all my brothers & sisters in the SPG who worked tirelessly to protect me & my family over the years. Thank you for your dedication, your constant support & for a journey filled with affection & learning. It has been a privilege. All the best for a great future.
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) November 8, 2019
রাহুলের টুইট।
তবে জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর এক দিকে অমিত শাহের নিরাপত্তা যেখানে বাড়িয়ে জেড প্লাস থেকে জেড স্পেশাল করা হয়েছে, সেখানে সনিয়া-রাহুলদের নিরাপত্তা কেন কমিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল থেকে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিজেপি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল। শুক্রবার নিজের টুইটার হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই দেশের দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করছে বিজেপি।’’
The BJP has descended to the ultimate personal vendetta mechanism, compromising the lives of family members of 2 Former Prime Ministers to acts of terror and violence.
— Ahmed Patel (@ahmedpatel) November 8, 2019
আহমেদ পটেলের টুইট।
আরও পড়ুন: সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ মধ্যরাতেই, ফডণবীসের ইস্তফা, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের সূত্র অধরাই
দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দলের নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘প্রতিশোধের নেশা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তারই প্রতিফলন।’’
LIVE: Congress Party briefing by @rssurjewala, In-charge, Communications, AICC https://t.co/VtrSkbMU60
— Congress Live (@INCIndiaLive) November 8, 2019
কংগ্রেসের সাংবাদিক বৈঠক।
আততায়ীদের হাতে ইন্দিরা গাঁধী খুন হওয়ার পর ১৯৮৫ সালে বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে গঠিত হয় এসপিজি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে। ১৯৯১ সালে গাঁধী পরিবার থেকেই ফের রাজীব গাঁধী খুন হলে বদল আনা হয় ওই আইনে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্যও এসপিজি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। ২০০৩ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে আবার ওই আইনে বদল ঘটিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের ক্ষেত্রে এসপিজি নিরাপত্তার মেয়াদ ১০ থেকে কমিয়ে ১ বছর করা হয়। তবে হামলার আশঙ্কা পর্যালোচনা করে বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা রাখা হয় সেইসময়। এই মুহূর্তে এসপিজি বাহিনীতে ৩০০০ জওয়ান রয়েছেন।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর এত দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও তাঁর পরিবার এসপিজি নিরাপত্তা পেতেন। একই পরিবারের দুই প্রধানমন্ত্রী আততায়ীদের হাতে খুন হওয়ায় গাঁধী পরিবারকেও ওই নিরাপত্তা দেওয়া হতো। কিন্তু গত অগস্ট মাসে প্রথমে মনমোহন সিংহ ও তাঁর পরিবারের এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। তার পরই সনিয়া-রাহুলদের নিরাপত্তা কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হল।
এর আগে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া এবং ভিপি সিংহের এসপিজি নিরাপত্তাও তুলে নেওয়া হয়। তবে গতবছর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এসপিজি নিরাপত্তা পেয়ে এসেছেন বাজপেয়ী।
আরও পড়ুন: বাবুয়ার আবদারে গললেন বুয়া, মুলায়মের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত মায়াবতীর
তবে গাঁধী পরিবারের এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া নিয়ে একাধিক যুক্তি দেখিয়েছেন নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সরকারি আধিকারিকরা। এসপিজি নিরাপত্তা পাওয়া সত্ত্বেও সনিয়া-রাহুলরা একাধিক বার নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ তাঁদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিকদের অভিযোগ, এসপিজি নিরাপত্তা পাওয়া সত্ত্বেও ২০১৫-’১৯-এর মধ্যে প্রায় ৫০ বার দিল্লির মধ্যেই বুলেট প্রতিরোধী গাড়ি ব্যবহার করেননি কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী। আগে ভাগে কিছু না জানিয়ে গত পাঁচ বছরে দেশের মধ্যেই ১৩টি জায়গায় গিয়েছেন তিনি। এমনকি ২০১৫ থেকে ২৪টি বিদেশ সফরের সময় এসপিজি অফিসারদেরও সঙ্গে নেননি।
একই ভাবে ২০১৫-র মে থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দিল্লির বাইরে রাহুল গাঁধী ১৮৯২ বার বুলেট প্রতিরোধী গাড়ি ব্যবহার করেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই আধিকারিকরা। তাঁদের দাবি, ১৯৯১ সাল থেকে ১৫৬ বার বিদেশ সফরে গেলেও, ১৪৩ বারই এসপিজি অফিসারদের সঙ্গে নেননি তিনি। ২০১৫-র মে থেকে এসপিজি অফিসারদের বিরুদ্ধে একাধিক বার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধীও। যদিও এসপিজি-র তরফে বরাবরই তা অস্বীকার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy