Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

ভোটের বালাই: ‘চায়েওয়ালা’ মোদী হঠাত্ই এখন ‘ইউপিওয়ালা’

ইউপিওয়ালা ঠুমকা লাগাও, হিরো য্যায়সা নাচকে দিখাও.. কমলা নেহরু রোডের মোড়ে রাজুর পানের দোকানে অনর্গল বেজে চলেছে ‘হিরো নম্বর ওয়ান’ সিনেমার গানটি। পান মুখে গোবিন্দা গাইছেন আর ‘ইউপিওয়ালা’ ঠুমকা লাগাচ্ছেন।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
ইলাহাবাদ শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ১৮:১৬
Share: Save:

ইউপিওয়ালা ঠুমকা লাগাও, হিরো য্যায়সা নাচকে দিখাও..

কমলা নেহরু রোডের মোড়ে রাজুর পানের দোকানে অনর্গল বেজে চলেছে ‘হিরো নম্বর ওয়ান’ সিনেমার গানটি। পান মুখে গোবিন্দা গাইছেন আর ‘ইউপিওয়ালা’ ঠুমকা লাগাচ্ছেন।

কাকতলীয়! ঠিক পানের দোকানের উল্টোদিকেই নরেন্দ্র মোদীর বড় পোস্টার। আর তাতে লেখা ‘ম্যায় ইউপিওয়ালা হু’।

সরকারের দু’বছরের জন্মদিনে এই উত্তরপ্রদেশের সহারনপুরে এসেই মোদী প্রথম সুরটি বেঁধে দিয়েছিলেন। আগে বলতেন, “আমি চায়েওয়ালা”। আর এখন “আমি ইউপিওয়ালা”।

লোকসভা ভোটে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে ছুটছেন, সেই সময় গুজরাতের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকেও লড়েছিলেন। পাছে লোকে না বলে গুজরাতের বাইরে মোদীর কোনও অস্তিত্ব নেই। আর উত্তরপ্রদেশের মতো সব থেকে বড় রাজ্যে বাজি না জিতলে ৫৬ ইঞ্চির ছাতিটাও ঠিকঠাক চওড়া হত না। সে কারণে নিজের সব থেকে বিশ্বস্ত সেনাপতি অমিত শাহকে সেই সময় দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের ভার।

বারাণসী জিতে দু’বছর আগেই উত্তরপ্রদেশের সাংসদ হয়েছিলেন। গুজরাতের বদোদরা ছেড়ে পাকাপাকি উত্তরপ্রদেশেরই সাংসদ এখন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এত দিন এ ভাবে ঢাক পিটিয়ে নিজেকে ‘ইউপিওয়ালা’ বলতে হয়নি। এখন হচ্ছে। গরবা ছেড়ে এখন মন দিতে হচ্ছে ইউপিওয়ালা ঠুমকাতেই।

কারণ?

বিজেপি নেতারাই বলছেন, একে তো নীতীশ কুমারের ভূত এখনও পিছু ছাড়েনি। বিহারের ভোটের সময়ও গোটা দল বাজি রেখেছিলেন মোদীর নামেই। কিন্তু নীতীশ কুমার সুকৌশলে লড়াইটি ‘বিহারি’ বনাম ‘বাহারি’ করে দিয়েছিলেন। মোদী সেখানে ছিলেন বাহারি (মানে বহিরাগত) আর বাকি সব লালু-নীতীশ পাক্কা বিহারি। বিহারের হারের জ্বালা এখনও মন থেকে মেটেনি। গোবলয়ের আর একটি রাজ্য, তা-ও আবার সবথেকে বড় যুদ্ধের আগে মোদী নিজেকে আর বহিরাগত রাখতে চান না। তাই বারাণসীর সাংসদ হওয়ার তাসটি খেলেই কতকটা ‘আমি তোমাদেরই লোক’ গোছের গান গেয়ে রাখছেন।

লোকসভায় উত্তরপ্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে ৭৩ টি মোদীর ঝুলিতে পুড়ে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর শিরোপা পেয়েছিলেন অমিত শাহ। আজ তিনিই বললেন, “প্রধানমন্ত্রী একজন ইউপিওয়ালা, এতে অতিশয়োক্তি কোথায়? তিনি এই রাজ্যেরই সাংসদ। এই রাজ্যের জন্যই নিরন্তর কাজ করেন। কিন্তু অখিলেশ সরকার সেই উন্নয়নের কাজে বাধা দিচ্ছে। সে কারণেই এ রাজ্যে বিজেপির সরকার হওয়া উচিত। যতক্ষণ না উত্তরপ্রদেশ জয় হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদীর বিজয় যাত্রাও সম্পূর্ণ হবে না। আর উত্তরপ্রদেশের উন্নয়ন ছাড়াও গোটা ভারতের অগ্রগতি সম্ভব নয়।”

কাল থেকে এই সঙ্গম নগরী ইলাহাবাদেই বসছে মোদীর দলের দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। গত আধা-দশকে এই উত্তরপ্রদেশে কখনও কর্মসমিতির বৈঠক হয়নি। কিন্তু এখন উত্তরপ্রদেশকে পাখির চোখ দেখছেন মোদী-শাহ। এই বৈঠকের পরেই ‘অভিষেক’ ‘ইউপিওয়ালা’ মোদীর। ইতিমধ্যেই দল ছক কষেছে ভোট পর্যন্ত প্রায় একশো সভা করবেন মোদী-অমিত শাহ-রাজনাথ মিলে। কিন্তু প্রধান মুখ হবেন সেই মোদীই। কারণ, এত বড় রাজ্য, এত জাত-পাত, ধর্মের ভেদ। কোনও এক নেতাকে মুখ করে গোটা রাজ্যের বৈতরীণী পার করা বেশ কঠিন কাজ।

দলের কেউ চান, রাজনাথ সিংহকে মুখ করা হোক। এ রাজ্যে বিজেপির শেষ মুখ্যমন্ত্রী তিনিই। কেউ চান, কল্যাণ সিংহকে রাজ্যপালের পদ থেকে ইস্তফা দিইয়ে ফিরিয়ে আনা হোক রাজ্য রাজনীতিতে। কেউ বা চান, যোগী আদিত্যনাথকে দিয়ে হিন্দুত্বের জিগির তুলে বাজি মারুক বিজেপি। কেউ বা আবার ভক্ত স্মৃতি ইরানির। আর বরুণ গাঁধী তো দলছুট হয়ে নিজেই নিজের ভক্তকুল তৈরি করছেন। বিভিন্ন সমীক্ষায় তাঁর মুখ এগিয়ে থাকলেও যে কারণে বিজেপির এই গাঁধীতে খুশি নন দলের নেতারা।

রাজনাথ সিংহ ঘনিষ্ঠ বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী তাই বললেন, “আমাদের দলে সেনাপতির কোনও খামতি নেই। ২০০২ সালে রাজনাথ সিংহ, ২০০৭ সালে কল্যাণ সিংহ, ২০১২ সালে উমা ভারতীকেও মুখ্যমন্ত্রী মুখ করা হয়েছিল। কিন্তু বিজেপিতে মুখ করলেই ভাল ফল হয়েছে, ইতিহাস তা বলে না।” কারণটি স্পষ্ট। এত বড় রাজ্যে এত বিবিধতার মধ্যে জাত-পাতের জটিল সমীকরণে একজনকে মুখ করলে অখুশি হন অন্য জাত-সম্প্রদায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থক। তার উপর যখন মায়াবতী থেকে মুলায়ম সকলেই জাত-পাতের অঙ্ক মেনেই চলছেন। তার উপর সনিয়া গাঁধীও রাহুলকে সঙ্গ দিতে প্রিয়ঙ্কাকে আসরে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিজেপির শিবিরের পর খোদ রাহুল গাঁধীও জুলাইতে ইলাহাবাদে নামছেন নেহরু-গাঁধী পরিবারের জিগির তুলে। ইন্দিরার জন্মভূমিতে সভা করবেন রাহুল। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির একম-অদ্বিতীয়ম তাস একজনই। তাঁর নাম নরেন্দ্র মোদী।

নীচু স্তরে ঘুঁটি যাই হোক, উন্নয়নের মোড়কে সকলকে ধরে রাখার মন্ত্র একমাত্র দিতে পারেন মোদীই। তাই মোদীকেও এখন নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। গত দু’বছরে ‘মোদী-ঝড়’-এ যে ভাটা পড়েছে, তাতে শান দিয়ে ফের মোদী-হাওয়া তোলাই এখন দলের রণনীতি। বিরোধীদের কৌশল বুঝে ভবিষ্যতে এক মুখ না একাধিক মুখ নিয়ে এগোনো হবে, তা স্থির করবেন অমিত শাহ। আপাতত কামাল দেখাতে হবে ‘ইউপিওয়ালা’ মোদীকেই।

আরও খবর...

চামচার দরকার নেই প্রধানমন্ত্রীর! নিহালনিকে কড়া বার্তা সরকারের

অন্য বিষয়গুলি:

Modi Upwala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy