ফাইল চিত্র।
পশ্চিম এশিয়া এবং ভারতের প্রতিবেশী বলয়ে নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক জটিলতার মধ্যেই তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ভোরে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) ওয়াশিংটন ডিসি পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এক দিকে, আমেরিকার সঙ্গে মতান্তরের জায়গাগুলি মেরামত করে মতৈক্যের পরিসর বিস্তৃত করা মোদীর লক্ষ্য। পাশাপাশি, চার দেশের (ভারত, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া) গোষ্ঠী কোয়াড এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সমমনস্ক বন্ধু দেশের সঙ্গে সংযোগ গভীর করাও তাঁর উদ্দেশ্য। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি কণ্টকহীন করা। সর্বোপরি আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস রুখতে আন্তর্জাতিক মতকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করতেও আগামী কয়েক দিন দেখা যাবে তাঁকে।
এ দিন সন্ধ্যায় আমেরিকার প্রথম সারির বিভিন্ন শিল্প সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নরেন্দ্র মোদী। রাতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সেরেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে। সমুদ্রপথে চিনের একাধিপত্য কমানো, মুক্ত ও উদার বাণিজ্যপথ তৈরি করা, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিতে তার সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে কথা হয়েছে। গভীর রাতে বৈঠক হয়েছে আমেরিকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও মোদীর মধ্যেও।
শুক্রবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার সঙ্গে মোদীর বৈঠক রয়েছে। রয়েছে কোয়াড সম্মেলন। তারও পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেনের সঙ্গে এই প্রথম বৈঠক মোদীর। দু’বছর পরে তিনি যখন আমেরিকা এলেন, তখন ভূ-রাজনৈতিক, আর্থিক, বাণিজ্যিক সমীকরণ বদলেছে। প্রতিষেধকের যৌথ উৎপাদন, কোভিড মোকাবিলায় বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক পরিকল্পনা মোদী-বাইডেনের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। গুরুত্ব পেতে চলেছে, দু’দেশের রণকৌশলগত উদ্বেগও। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের মতে, আসন্ন বৈঠককে কাজে লাগিয়ে জাতীয় স্বার্থে আমেরিকার কাছ থেকে কতটা সহযোগিতা মোদী আদায় করে নিতে পারেন, তার উপরে নির্ভর করছে তাঁর সফরের সাফল্য।
প্রথমত, কাবুল থেকে আমেরিকা সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার পরেও ভারতীয় সীমান্তে নিরাপত্তা বহাল রাখার কাজে ওয়াশিংটনকে সংযুক্ত রাখতে চায় নয়াদিল্লি। এ ব্যাপারে পাকিস্তান প্রশ্নে আমেরিকাকে কড়া পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানাবেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে সঙ্গী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার মতে, তিনি পৃথক ভাবে বৈঠক করবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে ‘সহায়তা’ করবেন। সূত্রের মতে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগকে তীক্ষ্ণ ও সুনির্দিষ্ট করতেই ডোভালকে সঙ্গে রাখছেন মোদী।
দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর তরফে চেষ্টা থাকবে রাশিয়া থেকে যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনা সংক্রান্ত আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা (সিএএটিএসএ বা ক্যাটসা) যেন অদূর ভবিষ্যতে তুলে নেন বাইডেন। এই বছরের শেষে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র-ব্যবস্থা কেনার বিষয়টি পাকা হয়ে রয়েছে। নয়াদিল্লি চাইছে, তার আগে হয় নিজেদের আইন সংশোধন করুক আমেরিকা, নয়তো ভারতের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ছাড় দিক। চেষ্টা হবে ইরান-নিষেধাজ্ঞায় ছাড় পেতেও।
তৃতীয়ত, কোয়াড বৈঠকের আগে আলাদা করে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তায় পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত চুক্তি করে বিতর্ক তৈরি করেছে আমেরিকা। এতে কোয়াড গুরুত্বহীন হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মোদী বিষয়টি জানতে চাইবেন বাইডেনের কাছে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এতে ভারতের অখুশি হওয়ার কারণ নেই। কারণ, আমেরিকা-ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়ার পরমাণু প্রযুক্তি সমঝোতা হয়েছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরে চিনকে নিশানা করে। যা ভারতেরও লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে সুবিধাও এই যে, এই নকশায় ভারতের ভূমিকা থাকছে না।
আমেরিকার কাছে দাবি আদায়ের জন্য সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে সমঝোতা বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে সাউথ ব্লক। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, জাপান, ফ্রান্স, রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে, ভারতের ভার বাড়বে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দর কষাকষিতে তা সুবিধার। কূটনৈতিক মহল রোমন্থন করছে, প্রয়াত বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের একটি আপ্তবাক্য। সেটি হল, ‘মহাজনের কাছে ধার চাইতে গেলেও হিরের আংটি পরে যেতে হয়!’ জি-২০, জি৪-এর রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে গত দু’দিন লাগাতার বৈঠক করছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। প্রধানমন্ত্রী নিজেও আলোচনায় বসবেন জাপান, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে। বাইডেনের সঙ্গে স্বার্থ আদায়ের প্রশ্নে এক টেবিলে বসার সময়ে এই বৈঠকগুলি ভারতের ‘প্রোফাইলকে’ কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় রাখবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy