Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
সংসদে অমিতের ‘জয় শ্রীরাম’

সংসদে অমিতের ‘জয় শ্রীরাম’: বিরোধী হলেই পাকিস্তানি, পথ মোদী-শাহদের

ওই বিল পাশের সময় অমিত অবশ্য আজ বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ দেশের মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই।

সংসদে অমিত শাহ।

সংসদে অমিত শাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৯
Share: Save:

সেই মেরুকরণ। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের মুখে ফের ‘পাকিস্তান’।

সকালে বন্ধ ঘরে দলের সাংসদদের যা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাতে রাজ্যসভায় তা-ই বললেন তাঁর সেনাপতি অমিত শাহ। তাঁদের দাবি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গতকাল নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করেছেন যে ভাষায়, তা-ই শোনা যাচ্ছে এ দেশের কংগ্রেস নেতাদের মুখে।

ওই বিল পাশের সময় অমিত অবশ্য আজ বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ দেশের মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। কিন্তু পাকিস্তানকে সামনে রেখে মেরুকরণের অস্ত্রে শান দিতে যাতে অসুবিধা না হয়, সেই সব যুক্তি আজ নতুন করে ঝালিয়ে দিলেন তিনি। খেললেন বিজেপির জাতীয়তাবাদের পুরনো তাস। এমনকি, রাজ্যসভায় ‘জয় শ্রীরাম’ও শোনা গেল দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে। তাঁর বক্তব্য, পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা এক হিন্দু শরণার্থী আজ পাকিস্তানে ফোন করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে জানান, প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের বিশাল উপকার করলেন।

কংগ্রেসকে আক্রমণ করে অমিত বলেন, ‘‘গত কাল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নাগরিকত্ব বিল নিয়ে যা বলেছেন, আজ সংসদে কংগ্রেসের নেতাদের কথাও কেমন মিলে যাচ্ছে। এর আগে বায়ুসেনা অভিযানের সময়েও পাকিস্তান ও কংগ্রেসের কথা মিলে গিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের সময়ও। এমনকি রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়েও পাকিস্তান কংগ্রেস নেতার কথা উল্লেখ করেছেন।’’

এর পরেই পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সংখ্যা কত কমেছে, তার খতিয়ান দেওয়া শুরু করেন অমিত। রে-রে করে ওঠে কংগ্রেস শিবির। অমিত ফের বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারি না, পাকিস্তানের নাম শুনলেই কেন এত উতলা হয় কংগ্রেস?’’ পাকিস্তান প্রসঙ্গ তুলে আজ সকালেই বিজেপির সাংসদদের মেরুকরণের অস্ত্র দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেন, ‘‘বিলের বিরোধিতা করে কিছু বিরোধী দল পাকিস্তানের ভাষা বলছে। কমা, পূর্ণচ্ছেদ সহ। বিল পাশই গল্পের শেষ নয়। জনতার কাছে গিয়ে তাঁদের (বিরোধীদের) মুখোশ খুলতে হবে।’’

এই বৈঠকের পর বিজেপি সাংসদেরা এই বার্তাই পেয়েছেন, রাহুল গাঁধীর সঙ্গে পাকিস্তানের মিল আছে— এটাই হবে প্রচারের মুখ। তা মোকাবিলা করতে কংগ্রেস নেতারা পাল্টা আক্রমণও করেন সংসদে। অভিযোগ করেন, জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব ফিরিয়ে আনছে বিজেপিই। বেছে বেছে শুধু মুসলিমদেরই বাদ দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। কপিল সিব্বলেরা এই ভাবনার পিছনে ‘জুরাসিক রিপাবলিক’-এর দুই ‘ডায়নোসরে’র কম্ম দেখছেন। আনন্দ শর্মারা আবার বলছেন, পুনর্জন্মে বিশ্বাস থাকলে বলা যায়, সর্দার পটেল যদি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতেন, রেগে যেতেন। দুঃখ পেতেন গাঁধীও, যাঁর ‘চশমা’ নিয়ে এত প্রচার করেন প্রধানমন্ত্রী।

নাগরিকত্ব বিল পাশের সময় লোকসভায় থাকেননি মোদী। আজও একবারও রাজ্যসভায় আসেননি। কিন্তু দ্বিতীয় বার জিতে আসার পর মাত্র ছ’মাসে এই বিলকেই তৃতীয় বড় সাফল্য (৩৭০ রদ, অযোধ্যা রায়ের পর শান্তি কায়েম আর এখন নাগরিকত্ব বিল) হিসেবেই তুলে ধরছেন। মনের কথা সাংসদদের শুনিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই ঐতিহাসিক বিল সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। এত দিন যে স্বপ্ন নিয়ে বেঁচেছি, সেটিই ৬ মাসে হয়েছে। বিলের মাধ্যমে লক্ষ লোকের জীবন বদল শুরু হবে। তিন প্রতিবেশী দেশে ধর্মের ভিত্তিতে অত্যাচারের শিকার হয়ে যাঁরা পালিয়ে এসেছেন, তাঁদের পাকাপাকি সুরাহা হবে।’’

কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘মোদী সরকারের পরিকল্পনা বিফল হলে নেহরুর দোষ হয়, আর বিরোধীদের আক্রমণ করতে হলে পাকিস্তানকে টেনে আনতে হয়। পাকিস্তানকে সামনে রেখেই লোকসভা ভোট হয়েছে। মেরুকরণের সেই চেনা ছকে হাঁটছেন মোদী-শাহ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Citizenship Amendment Bill Narendra Modi Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy