কেন্দ্রের তিন ভাষা নীতিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তামিলনাড়ুতে এই প্রশ্নে অন্তত মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের সুরেই সুর মেলাচ্ছেন বিরোধী এডিএমকে নেতা পলানীস্বামী। কমল হাসনের এমএনএম-এর অবস্থানও অভিন্ন।
সম্প্রতি স্ট্যালিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে শিক্ষা খাতে আটকে থাকা বরাদ্দ মুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কেন্দ্রের তিন ভাষা নীতির বিরোধিতা করে রাজ্যে জাতীয় শিক্ষা নীতি বলবৎ করেনি তামিলনাড়ু। তার জন্য সমগ্র শিক্ষা অভিযান খাতে দু’হাজার কোটি টাকার কেন্দ্রীয় বরাদ্দও পায়নি বলে অভিযোগ। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান স্ট্যালিনকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন। ধর্মেন্দ্রর দাবি, তিন ভাষা নীতিকে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার নীতি হিসাবে দেখা ঠিক নয়। তাতেই আরও চটেছেন স্ট্যালিন। শুক্রবার রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে বলেছেন, ‘‘মৌচাকে ঢিল ছুড়বেন না। তামিলদের লড়াকু মনকে জাগ্রত করতে যাবেন না। ডিএমকে যত দিন আছে, তামিল ভাষা, তামিলনাড়ু এবং রাজ্যবাসীর বিরুদ্ধে কোনও কাজ বরদাস্ত করা হবে না।’’ শিক্ষামন্ত্রীর দিকে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে স্ট্যালিন বলেছেন, ‘‘তিন ভাষা মানা না হলে বরাদ্দ আটকে রাখার ব্ল্যাকমেল কি রাজনীতি নয়? জাতীয় শিক্ষা নীতির নামে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি নয়? বহুভাষী বহুত্ববাদী দেশকে একভাষী জাতিতে পরিণত করার চেষ্টা রাজনীতি নয়? একটি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ মঞ্জুর করার জন্য অন্য প্রকল্পকে শর্ত হিসাবে হাজির করা রাজনীতি নয়?’’
শনিবার কাড্ডালোরে একটি শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে ফের এই প্রসঙ্গ তুলে স্ট্যালিন বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি শিক্ষা নয়, হিন্দির প্রতিপালনের লক্ষ্যে তৈরি। তিনি আরও বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতির ব্যাপারে শুধু ভাষাগত নয়, অন্যান্য আপত্তিও রয়েছে। সামাজিক ন্যায়ের মাপকাঠিতে এই নীতি আপত্তিকর বলে মনে করেন তিনি। তফসিলি এবং পিছড়ে বর্গের পড়ুয়াদের জন্য অনুদান না দেওয়া, তৃতীয়-চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণির জন্য সরকারি পরীক্ষা চালু করার প্রস্তাব কার্যকর হলে ছাত্রদের মধ্যে বৈষম্য বাড়বে। স্ট্যালিনের দাবি, দু’হাজার কোটির জায়গায় দশ হাজার কোটির বরাদ্দ এলেও তিনি জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করবেন না।
উদয়নিধি আগেই বলেছেন, যদি তামিল জনতার অধিকারে হাত পড়ে, তবে তাঁরা ‘গেটআউটমোদী’ কর্মসূচি শুরু করবেন। পাল্টা রাজ্য বিজেপি শুরু করেছে ‘গেটআউটস্ট্যালিন’ প্রচার। কিন্তু এই লড়াইয়ে প্রধান বিরোধী দল এডিএমকে-কে পাশে পাচ্ছে না তারা। এডিএমকে নেতা পলানীস্বামী শুক্রবার বলেন, তিন ভাষা নীতিকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলেই মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘দুই ভাষা নীতির প্রশ্নে এডিএমকে তার অবস্থানে অনড়। তামিলনাড়ুতে তিন ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ত্যাগ করতে কেন্দ্রকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’’ এমএনএম দলের অষ্টম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কমল হাসনও বলেন, ‘‘তামিলরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে খেলতে যাবেন না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)