নকল পনির নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে দেশে। বড় বড় নামী সব রেস্তরাঁতেও ‘আয়োডিন টেস্ট’ করে নকল পনির দেওয়া হচ্ছে বলে প্রমাণ করছেন সমাজমাধ্যম প্রভাবীরা। সেই আয়োডিন টেস্টের যথার্থতা নিয়ে যত প্রশ্নই থাকুক, পনিরে যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল মিশিয়ে থাকেন সে বিষয়টি মিথ্যে নয়। খোদ ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই) জানিয়েছে, পনিরে শ্বেতসার, ডিটা্রজেন্ট, এমনকি, ফরম্যালিনের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকও মেশানো হয় ভেজাল হিসাবে। ফলত এত দিন নিরামিষ খাবার দরকার বলে বা ইচ্ছে হলে যাঁরা নির্দ্বিধায় পনির কিনতেন, তাঁরা এখন পনির কিনতে দ্বিধাবোধ করছেন। কিন্তু নিরামিষ খাবার হিসাবে পনির যে প্রোটিনের জোগান দিতে পারে, তা অন্য নিরামিষে মিলবে কী ভাবে। ক্লিনিক্যাল ডায়েটিসিয়ান গরিমা গয়াল জানাচ্ছেন, পনির ছাড়াও বেশ কিছু নিরামিষ খাবার রয়েছে, যা থেকে উপযুক্ত প্রোটিন পাওয়া যেতে পারে। বরং এখন যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই মাংসের মতো প্রাণিজ প্রোটিনে রাশ টানতে বলা হচ্ছে, আমিষাশীরাও বিকল্প প্রোটিন হিসাবে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন এই নিরামিষ প্রোটিনের উৎসগুলি।
নিরামিষ কোন কোন খাবারে উচ্চমাত্রার প্রোটিন আছে?
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (আইসিএমআর)-এর তৈরি ২০১৭ সালের ইন্ডিয়ান ফুড কম্পোজ়িশন তালিকা অনুযায়ী কোন খাবারে কতটা প্রোটিন রয়েছে তা দেওয়া হল। হিসাব রয়েছে প্রতি ১০০ গ্রামের ভিত্তিতে।

ছবি: সংগৃহীত।
১। অড়হর ডাল
ভারতীয় রান্নাঘরে অড়হর ডাল থাকেই। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতীয় রান্নায় এই ডালের ব্যবহার হয়। বাঙালিরাও অড়হর ডাল ভাত-রুটির সঙ্গে খেয়ে থাকেন। আইসিএমআর-এর হিসাব বলছে প্রতি ১০০ গ্রাম অড়হর ডালে রয়েছে ২২.৩ গ্রাম প্রোটিন।
২। মুগ ডাল
ভোগের খিচুড়ি হোক বা অনুষ্ঠান বাড়ি— বাঙালি খাবারে মুগ ডাল হল সব ডালের রাজা। কেউ কাঁচা সোনা মুগ দিয়ে ডাল বানিয়ে খান। কেউ খান ভাজা মুগের ডাল। আবার গোবিন্দভোগ চালের সঙ্গে ডাল মিশিয়ে খিচুড়ি অমৃত সমান লাগে। এ হেন মুগ ডালে প্রোটিনও অন্য ডালের থেকে বেশি। প্রতি ১০০ গ্রামে ২৪.৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে মুগে। পাশাপাশি, মুগ ডালে অ্যালার্জির ঝুঁকি কম, হজম করা সহজ, পেটের স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল মুগ ডাল।

— ফাইল চিত্র।
৩। মুসুর ডাল
ভারতীয় রান্নাঘরে তো বটেই, বাঙালি বাড়িতেও সবচেয়ে বেশি রান্না হয় যে ডাল, তা হল মুসুর ডাল। সেই মুসুর ডালে প্রোটিনের পরিমাণ নেহাত কম নয়। প্রতি ১০০ গ্রামে ২৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে মুসুর ডালে। অনেকেই মুসুর ডাল আর পেঁয়াজ দিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে খান, আবার কেউ কেউ মুসুর ডাল সেদ্ধ করে তা দিয়ে স্যুপ বানিয়েও খান। সহজে হজম হওয়া এই ডাল অন্য পুষ্টিগুণেও ভরপুর। তাই স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত ভাল।
৪। কাবলি ছোলা
কাবলি ছোলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন। তবে তার পাশাপাশিই রয়েছে প্রোটিনও। প্রতি ১০০ গ্রাম কাবলি ছোলায় ১৯.৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে। কাবলি ছোলা দিয়ে চানা মশালা বানান অনেকে। পশ্চিম এশিয়ায় আবার রুটি এবং সব্জির সঙ্গে খাওয়ার হুমুজ়ে দেওয়া হয় কাবলি ছোলা। সুস্বাদু স্যালাড এবং চাটও বানানো হয় কাবলি ছোলা দিয়ে।

— ফাইল চিত্র।
৫। সয়াবিন, সয়াদুধ, টোফু
সয়াবিনের যে দানা সেদ্ধ করে বা বেকড বিনস হিসাবে খাওয়ার চল রয়েছে, তা সেদ্ধ না করে শুকনো কড়াইয়ে ভেজে খেলে প্রতি ১০০ গ্রামে ৪০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। সেদ্ধ করে খেলে প্রোটিনের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২০ গ্রামে। তবে তা-ও খুব কম নয়। এই সয়াবিনের দুধ বা সয়ামিল্কে প্রোটিন থাকে প্রতি ১০০ গ্রামে ৩.৫ গ্রাম। সয়ামিল্ক থেকে তৈরি পনির বা টোফুতে প্রোটিন থাকে প্রতি ১০০ গ্রামে ১০.৫ গ্রাম।
৬। সয়াবড়ি
সয়াবিন থেকেই তৈরি হয় সয়াবড়ি। তবে এতে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। উদ্ভিজ প্রোটিনের সেরা উৎস বলা যায় একে। প্রতি ১০০ গ্রামে থাকে ৫২.৪ গ্রাম প্রোটিন। সয়াবড়ি দিয়ে তরকারি যেমন বানানো যেতে পারে, তেমনই গরম জলে ভিজিয়ে মশলা মাখিয়েও খাওয়া যেতে পারে।

উদ্ভিজ প্রোটিনের সেরা উৎস সয়াবড়ি। — ফাইল চিত্র।
৭। গরুর দুধ এবং তা থেকে তৈরি খাবার
বিশ্বস্ত জায়গা থেকে কিনলে গরুর দুধও প্রোটিনের ভাল উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর দুধে থাকে ৩.২ গ্রাম প্রোটিন। তবে গরুর দুধ থেকে বাড়িতে তৈরি ছানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন থাকে ১৮ গ্রাম। আবার গরুর দুধ থেকে তৈরি দইয়ে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন থাকে ৩.৫ গ্রাম।
৮। অমরন্থ
প্রতি ১০০ গ্রাম অমরন্থে প্রোটিন রয়েছে ১৩.৬ গ্রাম। পুষ্টিবিদ গরিমা বলছেন, অমরন্থে রয়েছে ৯টি জরুরি অ্যামাইনো অ্যাসিড। ফলে একে সম্পূর্ণ প্রোটিন বলা যায়। অমরন্থের আটার রুটি খাওয়া যায়। আবার অমরন্থ দুধে ভিজিয়ে জাউ বানিয়েও খাওয়া যায়।
৯। কিনোয়া
কিনোয়াকেও সম্পূর্ণ প্রোটিন বলছেন গরিমা। তিনি বলছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম কিনোয়ায় ১৩.২ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ইদানীং স্বাস্থ্যসচেতন ভারতীয়দের মধ্যে কিনোয়ার ভাত এমনকি, কিনোয়া দিয়ে তৈরি মিষ্টি খাওয়ার চলও হয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

— ফাইল চিত্র।
এ ছাড়াও বাদাম এবং বীজ শস্যেও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যেমন ১০০ গ্রাম কুমড়োর বীজে রয়েছে ৩০ গ্রাম প্রোটিন। ১০০ গ্রাম বাদাম থেকে ২০ গ্রাম প্রোটিন। তবে পুষ্টিবিদ গরিমা জানাচ্ছেন, এগুলিতে প্রোটিনের পাশাপাশি ফ্যাটও থাকে। ক্যালোরির পরিমাণও বেশি। তা ছাড়া এগুলি প্রোটিনের প্রাথমিক উৎসও নয়। তাই যদি বীজশস্য থেকে প্রোটিন পেতেই হয়, তবে তা প্রোটিনের প্রাথমিক উৎসগুলির সঙ্গে এক সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া উচিত।