অযোধ্যা। ফাইল চিত্র।
বুকপকেটে হাত দিয়েছি সবে। কলম বার করিনি। আড়চোখে শুধু সেটুকু দেখেই হাতজোড় করে বিদায়ী নমস্কার সেরে ফেললেন মঙ্গল পান্ডে চকের মুসলিম ফল ব্যবসায়ী। শুধু বললেন, “কুছ মত পুছিয়ে। কুছ নেহি বোলনা।” শত অনুরোধেও মুখ খোলেননি তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে প্রশ্ন করলেই কেউ আপেল মুছতে ‘এত ব্যস্ত’, যে তাকাচ্ছেনই না চোখ তুলে। মসজিদ লাগোয়া দোকানে উড়ে এল প্রশ্ন, “সত্যিই সাংবাদিক, নাকি পুলিশের লোক?” এঁরা নিশ্চিত, বেফাঁস বললেই লাটে উঠবে ব্যবসা। অকারণে হেনস্থা করবে পুলিশ। তেমন সত্যিই হবে কি না, বলা শক্ত।
কিন্তু তার থেকেও কঠিন এই বিশ্বাস থেকে তাঁদের টলানো।
বহু ক্ষণ চেষ্টার পরে শাহবুদ্দিন, ইজহার হুসেনের মতো কয়েক জন তবু নাম বললেন। মুখ খুললেন সামান্য। বাকিরা তা-ও না। সোমবার অযোধ্যায় মসজিদের সামনে, মুসলিম মহল্লায়, মুসলিম দোকানে ঢুঁ মেরে মনে হল, ঠিক আতঙ্ক নয়, কিন্তু সর্বত্র বাসা বেঁধে রয়েছে চাপা উদ্বেগ আর আশঙ্কা। যে কারণে রায় ঘোষণার আগেই পরিবারের শিশু, মহিলা এবং বয়স্কদের ‘নিরাপদ’ জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছেন হায়দরগঞ্জ, ক্ষীরওয়ালি গলি, সদর বাজারের মতো এলাকার বহু বাসিন্দা। অনেকে বললেন, “এখন তো পুলিশ আর আধাসেনায় ছয়লাপ। কিন্তু এর পরে? গোলমাল যে হবে না তার নিশ্চয়তা কী?” কেউ বললেন, “এখানে তো মিলেমিশেই থাকি। কিন্তু রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের মতো দূর-দূরান্ত থেকে মাত্র কয়েক দিনে হাজার-হাজার লোক এসে পড়েন। তখন ঝামেলা বাঁধে।” নিজেদের পরবেও এর পরে আর কতটা মন খুলে আনন্দ করা যাবে, সে বিষয়ে সন্দিহান অনেকে।
আরও পড়ুন: বাজারে অমিল মোমবাতিও, অন্ধকারে কাশ্মীর
আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনই আঁচ মিলল ক্ষোভের। শাহবুদ্দিন যেমন বললেন, “সরকারের বারণ সত্ত্বেও রায় ঘোষণার পরে দীপাবলির মতো প্রদীপ জ্বালানো হয়েছে মুসলিম মহল্লার সামনে। পুড়েছে বাজি। পুলিশ দেখেছে শুধু।” ইজহারের প্রশ্ন, “রামমন্দিরের জন্য জমি দেওয়া হল, ভাল কথা। কিন্তু তার পাশেই মসজিদের জমি দেওয়া হল না কেন? এ কি দয়ার ভিক্ষা?” কারও রাগ হিন্দুদের সঙ্গে ‘হাত মেলানো’ মুসলিমদের উপরে। কেউ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন শিয়াদের বিরুদ্ধে। প্রাক্তন সেনা সুবেদার ইত্তকাদ হুসেন অবশ্য বুক বাজিয়ে বললেন, “লিখুন, ১৯৭১-এর যুদ্ধে পাক সেনার গুলি খেয়েছি। কিন্তু এত ব্যথা লাগেনি। মন্দির হচ্ছে বলে আপত্তি নয়, কিন্তু মুসলিমেরা কেমন সিঁটিয়ে আছেন, তা দেখতে পাবেন সর্বত্র।” তাঁর দাবি, আগামী তিন মাস এই ‘অবিচারের’ বিচার চাইবেন তাঁরা। কী ভাবে? উত্তর স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন: ভোটে পড়বে না অযোধ্যা-প্রভাব, দাবি বিরোধীদের
তবে মূল চিন্তা পেটেরই। বহুচর্চিত জমি লাগোয়া এলাকায় ফুল, মালা, হরেক জিনিসপত্র বিক্রি করেন বহু মুসলিম দোকানি। তাঁদের ভয়, এর পরে যখন পেল্লায় মন্দির হবে, তখন কি বসতে দেওয়া হবে তাঁদের? নাকি উচ্ছেদের পরে জায়গা পাবেন শুধু ‘বড়লোক’ দোকানিরা? কী আশ্চর্য! এই একই দুশ্চিন্তা কমবেশি সেখানকার অনেক হিন্দু দোকানদারেরও।
জীবন, জীবিকার থেকে বড় ধর্ম আছে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy