প্রতীকী ছবি।
কোনও মহিলা কর্মীকে বলেছেন আপনার সন্তান না হলে আমার বীর্যে অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেন। কাউকে জোর করে জড়িয়ে ধরেছেন। ধর্ষণের অর্থ কী এবং তার পদ্ধতি সম্পর্কে বুঝিয়েছেন। সঙ্গে চলত চাকরি খেয়ে নেওয়া, দেখে নেওয়া, এমনকি, অপহরণের হুমকি পর্যন্ত। এমনই #মিটু ঝড়ে তোলপাড় এ বার অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো। কাঠগড়ায় মধ্যপ্রদেশের শহদল স্টেশনের এক কর্তা।
কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হেনস্থা, যৌন নির্যাতন যে হয়নি, এমন নয়। কিন্তু #মিটু-র আগে হয়তো এত সাহসী ও সংঘবদ্ধ ভাবে হয়নি। বা হলেও নিতান্তই নিচু স্তরের সাধারণ কর্মীর অভিযোগ চাপা পড়ে গিয়েছিল শীর্ষ কর্তাদের ক্ষমতার ভারে। কিন্তু এখন সেই সব অভিযোগই ফের গতি পাচ্ছে। উঠে আসছে শাস্তির বা নতুন করে তদন্তের দাবি। মহিলারাও শেয়ার করছেন তাঁদের সেই দুঃসহ সময়ের অভিজ্ঞতা।
তেমনই বিভিন্ন সময়ের একাধিক যৌন হেনস্থার শিকার অন্তত ৯ জন মহিলা সম্প্রতি সরব হয়েছেন। একটি সর্বভারতীয় নিউজ ওয়েবসাইটের দাবি, অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর শুধুমাত্র শহদল অফিসেই ২০১৭ সালে ন’জন মহিলা কর্মী সেখানকার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের রত্নাকর ভারতীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের কেউ ছিলেন অস্থায়ী ঘোষক, কেউ বা সাধারণ কর্মী।
কিন্তু পদস্থ কর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোয় চাকরি খুইয়েছেন সেই ন’জনই। অথচ অভিযুক্ত সেখান থেকে পদোন্নতি পেয়ে শহদল থেকে বদলি হয়ে চলে যান দিল্লিতে। সে সব ঘটনা কার্যত ধামাচাপাও পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু #মিটু আন্দোলন গতি পাওয়ার পর তাঁদেরই অনেকে ফের প্রকাশ্যে আসছেন।
আরও পড়ুন: ‘ইউনিফর্ম ঠিক করার নামে শরীরের নানা জায়গায় হাত দিতেন পদস্থ কর্তা’
নিউজ ওয়েবসাইট ‘দ্য কুইন্ট’-এ নির্যাতিতা মহিলারা শেয়ার করেছেন তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা। এক অভিযোগকারিণী বলেন, ‘‘বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার বাড়ি থেকে রেডিয়ো স্টেশন বেশ খানিকটা দূরে। অফিসের পথে আমি কিছুটা ভিজে গিয়েছিলাম। অফিসে পৌঁছে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরের ঘরে তাঁকে জানাতে যাই যে, আমি অফিসে এসেছি। এ কথা বলার পরই উনি একটা টাওয়েল নিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং অশোভন ভাবে আমাকে মুছিয়ে দিতে থাকেন।’’
অন্য এক মহিলা কর্মী বলেছেন, ‘‘একদিন রত্নাকর ভারতী সরাসরিই আমাকে বলেন, ম্যাডাম, আপনার সন্তান না হলে আমার বীর্যে মা হতে পারেন। তাতে আপনি সুখীও হবেন। আমি তাঁকে বলি, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তখন উনি আমাকে শাসিয়ে বলেন, সব দিকে আমার হাত আছে, এখান থেকে দিল্লি পর্যন্ত। তাই আমি যা চাই তাই করতে পারি। কিন্তু তুমি আমাকে কিছুই করতে পারবে না। তুমি তোমারই সম্মান হারাবে, আমার কিছুই হবে না।’’
আরও পড়ুন: শাহরুখের দিওয়ালি পার্টিতে কালো শিফনে হিল্লোল সুহানার, কারা এলেন?
আরেক জনের দাবি, ‘‘আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করতেন উনি। বলতেন, নাইট ডিউটি দিয়ে দেবেন। আমাকে অপহরণ করে এমন জায়গায় নিয়ে যাবেন, যে বুঝতেও পারব না। আমার বিয়ে করা নিয়েও প্রশ্ন তুলতেন। বলতেন, কি প্রমাণ আছে যে তুমি অবিবাহিত? আমাকে এসব বলার উনি কে? কেনই বা আমি উত্তর দেব।’’
অবশ্য শুধু শহদলই নয়, অন্য অনেক রাজ্যেও প্রসার ভারতীর পদস্থ কর্তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র, উত্তর প্রদেশের ওবরা, হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালার মতো রেডিয়ো স্টেশন থেকেও একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে সম্প্রতি।
আরও পডু়ন: শাহরুখের দিওয়ালি পার্টিতে কালো শিফনে হিল্লোল সুহানার, কারা এলেন?
২০১৬ সালে ধর্মশালা প্রোগ্রাম হে়ড সুরেশ কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সেখানকার এক অস্থায়ী ঘোষক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান চলাকালীন এক দর্শকের প্রশ্ন রেকর্ড করার সময় স্টুডিয়োর মধ্যেই সুরেশ কুমার তাঁকে চুমু খান। সেই অভিযোগও দায়ের করেন ওই মহিলা। কিন্তু ঠিক ওই সময়েরই সিসিটিভি ফুটেজ উধাও হয়ে গিয়েছে অফিস থেকে।
ওবরা স্টেশনের এক অস্থায়ী মহিলা ঘোষক অভিযোগ করেছেন, তাঁর সামনেই অফিসের মধ্যে পদস্থ এক আধিকারিক পর্নোগ্রাফি দেখতেন এবং মদ খেতেন। অফিসের লাইব্রেরিয়ান তাঁকে অশ্লীল ম্যাগাজিন দেখান বলেও অভিযোগ তাঁর। এ ছাড়াও একাধিক স্টেশনের কর্তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ সম্প্রতি সামনে এসেছে।
প্রসার ভারতী অথবা অভিযুক্তদের তরফে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে #মিটু-র ধাক্কায় এই সব অভিযোগ ঘিরে নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন নির্যাতিতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy