Meet the man who is building hand-made nests for sparrows in the city dgtl
Birdhouse
ও পাখি ফিরে আয়! ১ লক্ষ ২৫ হাজার বাসা বানিয়ে বিশ্বের নজরে দিল্লির রাকেশ
রাকেশ পেশায় আলোকচিত্রী। তবে এখন তাঁকে সবাই চেনেন ভারতের 'নেস্ট ম্যান' বা 'নীড় মানব' হিসেবে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২১ ১৭:২৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
পাখিদের জন্য বাসা বানান দিল্লির বাসিন্দা রাকেশ ক্ষত্রী। এ পর্যন্ত পাখিদের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার বাসা বানিয়েছেন তিনি।
০২২১
ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস-এ নাম উঠেছে তাঁর নাম। লিমকা বুক অফ রেকর্ডস-এও তাঁর কাজের কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা ম্যাকমিলান তাদের প্রকাশিত একটি বইয়ে গোটা একখানি অধ্যায়ই লিখেছে রাকেশ এবং তাঁর কাজ নিয়ে।
০৩২১
রাকেশের কাজকে স্বীকৃতি দিয়েছে তাইওয়ানের সরকারও। এমনকি লন্ডনের হাউস অব কমন্সের পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত সম্মান 'গ্রিন অ্যাপেল' তিনি পেয়েছেন।
০৪২১
রাকেশ পেশায় আলোকচিত্রী। তবে এখন তাঁকে সবাই চেনে ভারতের 'নেস্ট ম্যান' বা 'নীড় মানব' হিসেবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখির বাসা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে ডাকা হয় তাঁকে।
০৫২১
রাকেশ জানিয়েছেন, পাখির বাসা নিয়ে তাঁর এই ভাবনাচিন্তার শুরু হঠাৎ করে। যদিও পাখিদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছোটবেলা থেকেই।
০৬২১
গাছপালা ক্রমশ কমছে শহরে। আধুনিক কাঠামোর বাড়িতেও পাখির বাসা বাঁধার সুযোগ কম। আগে তা ছিল না। রাকেশ জানিয়েছেন, পুরনো বাড়ি ছিল খোলামেলা। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন, বাড়ির বাসিন্দাদের মতো ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধা পাখিরও সমান গুরুত্ব ছিল। এমনকি, পাখির নিরাপত্তার কথা ভেবে যখন তখন সিলিং ফ্যান চালানোরও উপায় ছিল না তাঁদের।
০৭২১
রাকেশের কথায়, ‘‘বাড়িতে পাখির বাসা বাঁধাকে হয়তো শুভ লক্ষণ হিসাবে দেখা হত। আমার এখনও মনে আছে, আমাদের বলা হত, পাখির ডানা কাটলে তোমার কান কেটে নেওয়া হবে।’’ তবে পরে বুঝেছি, বাস্তবেও পরিবেশ রক্ষায় পাখিদের ভাল রাখাটা কতটা জরুরি।
০৮২১
রাকেশ জানিয়েছেন, পাখির বাসা নিয়ে তাঁর ভাবনা চিন্তা শুরু হয় আচমকাই। ঘটনাচক্রে একদিন অফিস যাওয়ার পথে কয়েকজন শ্রমিককে পাখির বাসা ভাঙতে দেখেছিলেন তিনি। সেই ঘটনা তাঁর মনে প্রভাব ফেলে।
০৯২১
দিল্লির অশোক বিহারের বাড়ি থেকে কাজের জায়গায় যাওয়ার পথে নিয়মিত একটি পুরনো বাড়িতে প্রচুর পাখির বাসা দেখতেন তিনি। সেই বাসাই ভাঙা হচ্ছিল। কাজে যাওয়ার বদলে সেদিন ওই বাড়ির মালিকের কাছে চলে যান তিনি। তাঁকে বলেন, পাখিদের বাসা-ছাড়া করলে তিনি এ নিয়ে আদালতে যাবেন।
১০২১
এর পরেই শহরে পাখিদের কমতে থাকা বাসস্থান নিয়ে ভাবতে শুরু করেন তিনি। রাকেশ বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, ওদের যদি বাসা বানিয়ে দেওয়া হয়, তবে কি ওরা সেখানে থাকবে?
১১২১
প্রথমে ডাবের খোলায় কাগজ ভরে আর চট বেঁধে বাসা তৈরি করে ঝুলিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বাসায় পাখি আসেনি। পরে অন্য পদ্ধতিতে বাসা তৈরি করা শুরু করেন। বেতের গোল কাঠামো তৈরি করে তাতে খড় আর চটের আস্তরণ দিয়ে বাসা বানান। এই বাসায় পাখি আসতে থাকে।
১২২১
টানা তিন দিন বাড়ির বাইরে ঝুলিয়ে রাখার পর চতুর্থ দিন রাকেশ দেখেন, পাখি এসেছে বাসায়। 'নেস্ট ম্যান' উৎসাহ পেয়ে যান। আরও বেশ কয়েকটি বাসা বানিয়ে বাড়ির বাইরে রেখে দেখেন, সেখানেও পাখিরা থাকতে শুরু করছে। রাকেশ বুঝতে পারেন, বাসা পছন্দ হয়েছে পাখিদের।
১৩২১
রাকেশকে দেখে উৎসাহ পান পড়শিরাও। তাঁরাও পাখির বাসা বানিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন রাকেশকে। রাকেশ জানিয়েছেন, এক সময় এই প্রতিবেশীরাই তাঁর বাসা বানানো নিয়ে ঠাট্টা করেছিলেন। তবে তাঁদেরই বাসা চাইতে দেখে, বিজয়গর্ব অনুভব করেন রাকেশ।
১৪২১
প্রথমে ২০টি বাসা বানান রাকেশ। অশোক বিহার চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় সেই বাসাগুলি রাখার দিন কয়েকের মধ্যেই দেখা যায়, প্রত্যকটি বাসাতেই কোনও না কোনও পাখির পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
১৫২১
পাখিদের আশ্রয় দিতে পেরে উৎসাহিত রাকেশ ঠিক করেন, তিনি নিজে থেকে যা শিখলেন, তা ছড়িয়ে দেবেন। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পাখির বাসা বানানো শেখাতে শুরু করেন রাকেশ।
১৬২১
এর পর একে একে ডাক আসতে থাকে। কর্পোরেট সংস্থাগুলি বাসা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে ডাকতে শুরু করে। বিভিন্ন আবাসনের আবাসিক কল্যাণ সমিতিগুলিও রাকেশকে ডেকে পাঠাতে শুরু করে পাখির বাসা বানানো প্রশিক্ষণের জন্য। পেশাদার ফোটোগ্রাফার রাকেশ হয়ে ওঠেন 'নীড় মানব'।
১৭২১
৬ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ— সবাই যোগ দিতে শুরু করেন সেই সব কর্মশালায়। এ পর্যন্ত আড়াই লক্ষ মানুষকে বাসা বানাতে শিখিয়েছেন রাকেশ।
১৮২১
প্রতিটি বাসা বানাতে খরচ পড়ে ২৫০ টাকা। আর রাকেশের কর্মশালায় যোগ দিতে হলে মাথা পিছু ৩৫০ টাকা দিতে হয় অংশগ্রহণকারীদের।
১৯২১
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অজস্র প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি করে ফেলেছেন রাকেশ। সব মিলিয়ে বাসা বানিয়েছেন ১ লক্ষ ২৫ হাজার।
২০২১
তবে রাকেশ সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছেন তাঁর প্রয়াস বইয়ের পাতায় জায়গা পাওয়ায়। ছোটদের জন্য প্রকাশিত ম্যাকমিলানের একটি বইয়ে রাখা হয়েছে ওই অধ্যায়টি। রাকেশের কাছে এটাই তাঁর জীবনের সেরা প্রাপ্তি।
২১২১
উৎসাহিত রাকেশ অবশ্য ইদানীং পাখির বাসা তৈরির প্রক্রিয়ায় নানা রকম বদলও আনছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে পরিবেশ বান্ধব বাসাটি হল ফলের রসের ফেলে দেওয়া টেট্রা প্যাক থেকে তৈরি পাখির বাসা। এতে পরিবেশ দূষণও কমানো যাবে বলে মনে করেন তিনি।