Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
National news

ওই একটা দিনেই অন্ধকার ঘনিয়েছিল জীবনে, পোড়া মুখ নিয়ে তিনিই এখন অন্যদের ভরসা

কেউ কল্পনাতেও আনতে পারেননি, পরদিন তাঁর ভাগ্য এ ভাবে বদলে যাবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:০৭
Share: Save:
০১ ১০
২০০৫ সাল। দিল্লিতে দিওয়ালির দিন পরিবারের সঙ্গে ভীষণ আনন্দ করছিলেন মোহিনী কুমার। পরের দিনই তাঁর জয়পুর রওনা দেওয়ার কথা। নতুন চাকরিতে যোগ দিতে। কেউ কল্পনাতেও আনতে পারেননি, পরদিন তাঁর ভাগ্য এ ভাবে বদলে যাবে।

২০০৫ সাল। দিল্লিতে দিওয়ালির দিন পরিবারের সঙ্গে ভীষণ আনন্দ করছিলেন মোহিনী কুমার। পরের দিনই তাঁর জয়পুর রওনা দেওয়ার কথা। নতুন চাকরিতে যোগ দিতে। কেউ কল্পনাতেও আনতে পারেননি, পরদিন তাঁর ভাগ্য এ ভাবে বদলে যাবে।

০২ ১০
সে দিন ছিল রবিবার, দিওয়ালির পরদিন হওয়ায় রাস্তা বেশ ফাঁকাই ছিল। জয়পুরের ট্রেন ধরার জন্য বাবার সঙ্গে স্টেশনের দিকেই হেঁটে যাচ্ছিলেন মোহিনী। হঠাৎই একটা পরিচিত মুখ তিনি দেখতে পান। উল্টোদিক থেকে অটোরিক্সায় বসে তাঁদের দিকেই এগিয়ে আসছিল।

সে দিন ছিল রবিবার, দিওয়ালির পরদিন হওয়ায় রাস্তা বেশ ফাঁকাই ছিল। জয়পুরের ট্রেন ধরার জন্য বাবার সঙ্গে স্টেশনের দিকেই হেঁটে যাচ্ছিলেন মোহিনী। হঠাৎই একটা পরিচিত মুখ তিনি দেখতে পান। উল্টোদিক থেকে অটোরিক্সায় বসে তাঁদের দিকেই এগিয়ে আসছিল।

০৩ ১০
এতদিন এই পরিচিত মুখটাই তাঁকে খুব বিরক্ত করত। যেখানেই যেতেন তাঁকে অনুসরণ করত এই মুখটাই। প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু মোহিনী তাতে রাজি ছিলেন না। সেই পরিচিত মুখটাই মোহিনীর জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনল।

এতদিন এই পরিচিত মুখটাই তাঁকে খুব বিরক্ত করত। যেখানেই যেতেন তাঁকে অনুসরণ করত এই মুখটাই। প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু মোহিনী তাতে রাজি ছিলেন না। সেই পরিচিত মুখটাই মোহিনীর জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনল।

০৪ ১০
কিছু বুঝে ওঠার আগেই কী একটা যেন তাঁর মুখে ছুঁড়ে দিয়ে সজোরে বেরিয়ে গেল অটোরিক্সা। মুহূর্তের মধ্যেই পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলেন মোহিনী। মুখে হাত চাপা দিয়ে রাস্তাতেই শুয়ে পড়লেন যন্ত্রণায়।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই কী একটা যেন তাঁর মুখে ছুঁড়ে দিয়ে সজোরে বেরিয়ে গেল অটোরিক্সা। মুহূর্তের মধ্যেই পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলেন মোহিনী। মুখে হাত চাপা দিয়ে রাস্তাতেই শুয়ে পড়লেন যন্ত্রণায়।

০৫ ১০
মোহিনীর পাশে হেঁটে চলা তাঁর বাবাও আর্তনাদ করছিলেন, তবে মোহিনীর থেকে অনেকটাই কম। মোহিনীর গায়ে লেগে কিছুটা অ্যাসিড তাঁর গায়েও লেগেছিল। সে কারণেই তাঁরও শরীরের অনাবৃত অংশের কিছু জায়গায় অ্যাসিডে পুড়ে যায়। মোহিনীর থেকে ক্ষতির পরিমাণ তাঁর অনেকটই কম।

মোহিনীর পাশে হেঁটে চলা তাঁর বাবাও আর্তনাদ করছিলেন, তবে মোহিনীর থেকে অনেকটাই কম। মোহিনীর গায়ে লেগে কিছুটা অ্যাসিড তাঁর গায়েও লেগেছিল। সে কারণেই তাঁরও শরীরের অনাবৃত অংশের কিছু জায়গায় অ্যাসিডে পুড়ে যায়। মোহিনীর থেকে ক্ষতির পরিমাণ তাঁর অনেকটই কম।

০৬ ১০
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তার পাশের এক চায়ের দোকানদার ছুটে আসেন তাঁদের কাছে। মোহিনীর পুড়ে যাওয়া জায়গায় দুধ ঢেলে দেন তিনি। তখনকার সেই দিনের মতো সেটাই ছিল মোহিনীর শেষ স্মৃতি। তারপর সব কিছু অন্ধকার।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তার পাশের এক চায়ের দোকানদার ছুটে আসেন তাঁদের কাছে। মোহিনীর পুড়ে যাওয়া জায়গায় দুধ ঢেলে দেন তিনি। তখনকার সেই দিনের মতো সেটাই ছিল মোহিনীর শেষ স্মৃতি। তারপর সব কিছু অন্ধকার।

০৭ ১০
পরের ১৫ দিন হাসপাতালের আইসিইউ ছিল তাঁর ঠিকানা। মুখের ৩৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল তাঁর। ২৫ বার অস্ত্রোপচার করতে হয় মুখে। ১৫ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন মোহিনী। কিন্তু তার পরবর্তী সময়টা তাঁর কাছে আরও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে।

পরের ১৫ দিন হাসপাতালের আইসিইউ ছিল তাঁর ঠিকানা। মুখের ৩৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল তাঁর। ২৫ বার অস্ত্রোপচার করতে হয় মুখে। ১৫ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন মোহিনী। কিন্তু তার পরবর্তী সময়টা তাঁর কাছে আরও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে।

০৮ ১০
প্রথম লড়াইটা ছিল নিজের সঙ্গে নিজের। মুখের বীভৎসতাকে মানাতে নিজের সঙ্গে তাঁকে অনেক লড়াই চালাতে হয়েছে। দীর্ঘদিন আয়নার সামনে যেতেন না। বাইরে পর্যন্ত বেরতেন না। ঘরের মধ্যেও সারাক্ষণ মুখ ঢেকে রাখতেন।

প্রথম লড়াইটা ছিল নিজের সঙ্গে নিজের। মুখের বীভৎসতাকে মানাতে নিজের সঙ্গে তাঁকে অনেক লড়াই চালাতে হয়েছে। দীর্ঘদিন আয়নার সামনে যেতেন না। বাইরে পর্যন্ত বেরতেন না। ঘরের মধ্যেও সারাক্ষণ মুখ ঢেকে রাখতেন।

০৯ ১০
দ্বিতীয় লড়াই ছিল সমাজের সঙ্গে। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের অনেকে তাঁর দিকেই আঙুল তুলতে শুরু করেছিলেন। কোনও কারণ ছাড়া কী কোনও ছেলে এরকম করে! মোহিনী নিশ্চয় ছেলেটাকে কোনও ভাবে উস্কে দিয়েছিল। এমন আরও অনেক কুকথা শুনতে হয়েছে তাঁকে।

দ্বিতীয় লড়াই ছিল সমাজের সঙ্গে। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনদের অনেকে তাঁর দিকেই আঙুল তুলতে শুরু করেছিলেন। কোনও কারণ ছাড়া কী কোনও ছেলে এরকম করে! মোহিনী নিশ্চয় ছেলেটাকে কোনও ভাবে উস্কে দিয়েছিল। এমন আরও অনেক কুকথা শুনতে হয়েছে তাঁকে।

১০ ১০
দু’বছর পর প্রথম বাড়ির বাইরে পা রাখেন মেহিনী। টেলিমার্কেটিংয়ে একটা চাকরিও হয়ে যায় তাঁর। সেখানেই তাঁর গৌরবের সঙ্গে পরিচয়। স্বামী গৌরব আর এক ছেলেকে নিয়ে ভীষণ সুখী তিনি। মোহিনী বর্তমানে দিল্লি স্টেট লিগাল সার্ভিস অথরিটির সঙ্গে যুক্ত। মোহিনীর এখন বয়স ৩৬ বছর। তাঁর মতোই অ্যাসিড আক্রান্তদের অবিরাম সাহায্য করে চলেছেন তিনি। লজ্জা ভুলে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে দিল্লির অ্যাসিড আক্রান্তদের ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি।

দু’বছর পর প্রথম বাড়ির বাইরে পা রাখেন মেহিনী। টেলিমার্কেটিংয়ে একটা চাকরিও হয়ে যায় তাঁর। সেখানেই তাঁর গৌরবের সঙ্গে পরিচয়। স্বামী গৌরব আর এক ছেলেকে নিয়ে ভীষণ সুখী তিনি। মোহিনী বর্তমানে দিল্লি স্টেট লিগাল সার্ভিস অথরিটির সঙ্গে যুক্ত। মোহিনীর এখন বয়স ৩৬ বছর। তাঁর মতোই অ্যাসিড আক্রান্তদের অবিরাম সাহায্য করে চলেছেন তিনি। লজ্জা ভুলে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে দিল্লির অ্যাসিড আক্রান্তদের ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy