Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Makar Sankranti

ঐক্যের ফসলে মাতল সংক্রান্তি

তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গে যা পৌষ সংক্রান্তি, সেটিই ডিএমকে শাসিত তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল।

এক সূত্রে: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল মহফুজ় আলির আঁকা ছবি।

এক সূত্রে: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল মহফুজ় আলির আঁকা ছবি।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:০৯
Share: Save:

ধর্ম নিয়ে যখন তীব্র মেরুকরণের স্রোত বইছে, মকর সংক্রান্তির উৎসবকে ঘিরে গোটা দেশ মাতল নবান্নের গন্ধে। পৌষের শেষ দিন, রাশিচক্রের বিচারে এই তিথিতে সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে। শুরু হয় উত্তরায়ণ। মাঠ থেকে ঘরে আসে নতুন ধান। সেই নতুন ধান আর গুড়ের পার্বণ আজ। গোটা দিনই এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলল তার উদ্‌যাপন। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে যাওয়া ভারতের মানচিত্রের আজ ক্যাপশন— ‘বহু নাম-এক উৎসব’!

তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গে যা পৌষ সংক্রান্তি, সেটিই ডিএমকে শাসিত তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল। কর্নাটকে যা মকর সংক্রমনা বা ইল্লু বিল্লা, বিজেপির গুজরাতে বা কংগ্রেসশাসিত রাজস্থানে তার নাম উত্তরায়ণ। এনআরসি নিয়ে উত্তাল অসমে তার নাম মাঘ বিহু অথবা ভোগালি বিহু। আবার সদ্য শিবসেনা-কংগ্রেসের জোট সরকার গড়া মহারাষ্ট্রে এই উৎসবের নাম তিলগুল। বিশেষ মর্যাদা খুইয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়া কাশ্মীরেও নতুন ধানের উৎসব আছে। তার নাম সিসুর শায়েন-ক্রাত।

সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর কথায়, ‘‘ভারত সনাতন কাল থেকেই কৃষিভিত্তিক সমাজ। আর এই কৃষির ভিত গোটা দেশের বৈচিত্রের মধ্যে একটি ঐক্যের সুতো বেঁধে রেখেছে। যা আজও অটুট।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শীতের অবসানে বসন্ত যখন আসে, তখন তা গোটা দেশেই আসে। তার আবাহন এবং উৎসব সর্বভারতীয়। গুজরাতে তাকে স্বাগত জানানো হয় ঘুড়ি উড়িয়ে। পঞ্জাবে এই একই উৎসব পালিত হয় লোরির মাধ্যমে আগুন জ্বালিয়ে। এক অর্ন্তনিহিত একাত্মবোধ সব রাজ্য, বর্ণ এবং জাতির মধ্যে বহমান ছিল। আছে এবং থাকবেও।’’

আরও পড়ুন: বিভাজনের বিরুদ্ধেই কবিতা, বলছেন বরুণ

সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, এই উৎসবের আরাধ্য দেবতা হয়তো রাজ্যভেদে পৃথক। কোথাও লক্ষ্মী, কোথাও সরস্বতী আবার কোথাও বা সূর্যদেব। কিন্তু যেহেতু এই উৎসব কৃষিপ্রধান তাই পূজা বা প্রসাদের উপকরণ একই। ফসল। কোথাও পুলি পিঠে, পাটিসাপটা কোথাও পায়সম (তামিলনাড়ু), কোথাও দহিচূড়া তিলকুট (উত্তরপ্রদেশ), কোথাও খিচুড়ি, লিট্টি চোখা (বিহার)। কোথাও বা হালুয়া (পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র)। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব জহর সরকারের কথায়, ‘‘আজকের দিনে এটা বলা খুবই মুশকিল যে আনুষ্ঠানিক হিন্দুত্ববাদ আঞ্চলিক রীতিনীতি থেকে বিভিন্ন আচার-বিচার গ্রহণ করেছে নাকি তার উল্টোটা। তবে এটুকু বলাই যায় যে, শতকের পর শতক আমাদের বহুত্ববাদী সংস্কৃতি অসামান্য বৈচিত্র তৈরি করেছে। তা মূলগতভাবে একটি ঐক্যসাধনই করে চলেছে। কোনও আইন, হুমকি অথবা বল প্রয়োগ না করেও বৈচিত্রের মধ্যে সেই ঐক্যটি টিঁকে রয়েছে যুগ যুগ ধরে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Makar Sankranti Communal Harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy