কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি।
শুক্রবারের পরে শনিবার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের মুখ খুলে কংগ্রেসের অন্দরের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি। সরাসরি দলের একাংশের দিকে আঙুল তুলে মণীশের অভিযোগ, ঠিক মতো না জেনেই কেউ কেউ মনমোহন সিংহ সরকারকে নিশানা করছেন। মণীশের এমন বিস্ফোরণের পরে তাঁর পাশে দাঁড়ান মনমোহন মন্ত্রিসভার সদস্য শশী তারুর, মিলিন্দ দেওরা, আনন্দ শর্মা। এই পরিস্থিতিতে রাহুল শিবিরের যে নেতার তোলা প্রশ্ন ঘিরে বিতর্কের শুরু, সেই রাজীব সতাভ শনিবার রাতের দিকে কিছুটা পিছু হটার ইঙ্গিত দিলেন। বিতর্কে জল ঢালতে চেয়ে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বের প্রশংসার পাশাপাশি দাবি করলেন, কিছু সংবাদমাধ্যমে তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহের উপস্থিতিতেই কংগ্রেসের বৈঠকে টিম-রাহুলের অন্যতম সদস্য রাজীব দলের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ব্যর্থতার জন্য ঘুরিয়ে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারকে নিশানা করেন। তার পরেই মুখ খুলতে শুরু করেন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের একাধিক মন্ত্রী। অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মের নেতা বলে পরিচিত প্রাক্তন তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ গত কাল বলেন, ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতার জন্যই কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এমনকি ইউপিএ-তে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও উস্কে দিয়েছিলেন তিনি। শনিবার মণীশ টুইটারে লেখেন, বিজেপি ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। কিন্তু তাদের দলের কেউ বাজপেয়ী বা তাঁর সরকারকে নিশানা করেনি। অন্য দিকে কংগ্রেসের একাংশ, যাঁরা সবটা জানেন না, তাঁরা বিজেপি-এনডিএ-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বদলে মনমোহনের নেতৃত্বে ইউপিএ-কে নিশানা করছেন। মণীশের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে পরপর টুইট করেন শশী, মিলিন্দ এবং আনন্দ শর্মা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলী দেওরার ছেলে মিলিন্দ একদা টিম-রাহুলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি মনমোহন মন্ত্রিসভারও সদস্য ছিলেন। মণীশকে সমর্থন করে মিলিন্দ লেখেন, ২০১৪-য় অফিস (প্রধানমন্ত্রীর)ছাড়ার সময় মনমোহন সিংহ বলেছিলেন, ইতিহাস আমার প্রতি আরও সদয় হবে। তিনি কি কখনও ভেবেছিলেন, তাঁর উপস্থিতিতেই তাঁর দলের কিছু লোক দেশের প্রতি তাঁর অবদানকে অস্বীকার করবে এবং তাঁর ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে চাইবে? মণীশ এবং মিলিন্দের বক্তব্যকে সমর্থন করে টুইটারে শশী তারুরের বক্তব্য, ইউপিএ-র দশ বছরের কাজকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। আনন্দ শর্মাও মণীশের বক্তব্যকে সমর্থন করে জানান, নিজেদের ঐতিহ্যকে নিজেদেরই সম্মান জানাতে হবে।
কংগ্রেসের একাংশ বলছেন, মনমোহন একাধিক বার রাহুলকে তাঁর মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে অনুরোধ করলেও রাহুল তা শোনেননি। মন্ত্রিসভার কোনও কাজের অংশীদার না হয়েও এ ভাবে সমালোচনা তো বিরোধীরা করে! তা ছাড়া, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার পরে সচিন পাইলটের বিদ্রোহ বুঝিয়েছে, তথাকথিত নবীন প্রজন্ম তথা টিম-রাহুলের সদস্যদের সঙ্গে দলের অন্য অংশের বিভাজন বেড়েছে। এর পরে রাতেই রাজীব সতাভ জানিয়ে দেন, আধুনিক ভারত গড়তে মনমোহন সিংহের বিপুল অবদান রয়েছে। গোটা বিতর্কে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে যে ভাবে টেনে আনা হয়েছে, তা অনভিপ্রেত বলে জানিয়ে রাজীবের দাবি, তিনি দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে মনমোহন সিংহের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলে যা বলা হচ্ছে, তা মিথ্যা। এর পরেই দলের একাধিক নেতার মন্তব্যের প্রসঙ্গ ছুঁয়ে রাজীব জানান, দলীয় ফোরামের বাইরে এ সব বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করতে চান না।
টুইট-যুদ্ধের শেষে শান্তির ইঙ্গিত দেখা দিলেও প্রশ্ন থাকছে, এটা কত দিন স্থায়ী হবে? কংগ্রেসের অন্দরেই অনেকে বলছেন, এখনই হাল না ধরলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এই অবস্থায় সনিয়া গাঁধী কী করেন, তার দিকেই তাকিয়ে গোটা দল। হয়তো বিরোধীরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy