ইস্তফার জল্পনার মধ্যে দিল্লি সফরে যাচ্ছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সেই বৈঠকে হাজির থাকতে পারেন মণিপুরের বিজেপি সভানেত্রী শারদা দেবীও। ওই সূত্রের দাবি, বৈঠকে মণিপুরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। পাশাপাশি, কথা হতে পারে গোষ্ঠীহিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও।
সোমবার (২১ অগস্ট) মণিপুর বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন হওয়ার কথা। তবে দুই মন্ত্রী-সহ রাজ্যের ১০ কুকি বিধায়কের কেউই যোগ দেবেন না বলে আগেই জানিয়েছেন। ওই বিধায়কদের মধ্যে সাত জনই বিজেপির। কুকিস জ়ো-সহ জনজাতি গোষ্ঠীগুলির অভিযোগ, গত সাড়ে তিন মাসের গোষ্ঠীহিংসা-পর্বে বীরেনের সরকারের আচরণ পুরোপুরি পক্ষপাতদুষ্ট। জনজাতি অধ্যুষিত পাহাড় অঞ্চলগুলিতে নিরাপত্তার বিষয়টি মণিপুর সরকার অবহেলা করেছে। বীরেন তাঁর ‘স্বজাতি’ মেইতেইদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
ইতিমধ্যেই কুকি জনজাতি অধ্যুষিত পাঁচ জেলায় পৃথক প্রশাসনের দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন ওই ১০ কুকি-জ়ো বিধায়ক। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বীরেনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মেইতেই সংগঠনও। তাদের অভিযোগ, মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালানো কুকি জঙ্গিদের মোকাবিলায় সময়োচিত পদক্ষেপ করা হয়নি। কুকি বনাম মেইতেই সংঘর্ষ গত কয়েক সপ্তাহে সেনাপতি, উখরুলের মতো নাগা অধ্যুষিত জেলাগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে। নাগা জনজাতি গোষ্ঠীর বিধায়কদের একাংশ মেইতেই বিধায়কদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকপত্র দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। এই আবহে ‘শাহি দরবারে’ বীরেনের হাজিরাকে ‘নতুন পদক্ষেপের বার্তা’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
আরও পড়ুন:
এই পরিস্থিতিতে বীরেনকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানো হতে পারে বলে কিছুদিন ধরেই জল্পনা চলছে। কিন্তু দলের একটি অংশের মতে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব তেমন পদক্ষেপ করবেন না। বিজেপির ইতিহাসে বীরেনের সাফল্য ‘ব্যতিক্রমী’। ২০১৬-র অক্টোবরে প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি পদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে শামিল হওয়ার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তা ছাড়া, ২০০২ সালের গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘রাজধর্ম পালনের’ উপদেশ দিলেও তাঁকে সরানো হয়নি। বীরেনের ক্ষেত্রেও বিজেপি ‘ব্যতিক্রমী’ উদাহরণ তৈরি করবে না বলেই ওই অংশের মত।