প্রহরী: এনআরসি সেবা কেন্দ্রের সামনে পাহারায় নিরাপত্তা বাহিনী। সোমবার অসমের বাস্কায়। ছবি: পিটিআই।
গরৈমারির বাসিন্দা মইনুদ্দিন, সোনাউদ্দিনরা গত ৪ অগস্ট নোটিস পান, পরের দিনই সপরিবারে তাঁদের তলব করা হয়েছে গোলাঘাটে। গুয়াহাটিই দূর অস্ত্, উজানি অসমে তো কখনও পা’ই দেননি তাঁরা। দিশাহারা হয়ে আর পাঁচজনের পরামর্শ নিতে গিয়ে শোনেন, আশপাশের শ’য়ে শ’য়ে পরিবারের হাজার হাজার মানুষের কাছে এসেছে সেই নোটিস। মইনুদ্দিনদের একটি পরিবারেই সদস্য সংখ্যা ৩১। বাস ভাড়া করা ভিন্ন উপায় ছিল না। রাতারাতি গরু, গয়না, জমানো ধান বেচে বাসভাড়া করে রাতভর চলে বাস পৌঁছয় গোলাঘাটে। কিন্তু ৩১ অগস্ট সকালে তাঁরা দেখেন গরু, গয়না, চাল তো গেছেই, এনআরসিতেও নাম ওঠেনি।
বাঘবরের নিশানচরের বাসিন্দা, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক আহমেদ হুসেনরা সাত ভাই। তাঁদের ১৫ সন্তান। সব মিলিয়ে পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাক্কা ৫০। বাবা প্রয়াত হারমুজ আলি ভুঁইয়ার ১৯৫১ সালের লিগ্যাসি ডেটা জমা দিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন সকলে। খসড়া তালিকায় এক ভাই আব্দুল বাদে ৪৯ জনের নামই ছিল। আব্দুলকে শুনানিতে ডাকলে তিনি এ বার বাবার ১৯৬৬ সালের লিগ্যাসি ডেটা জমা দেন। দু’রকম লিগ্যাসি জমা পড়ার দায়ে চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পরিবারের ৫০ জনই!
মাঝরটপের আকবর আলিকে ১৩ অগস্ট রঙিয়ায় তলব করা হয়। পরিবারের সদস্য ১৪। খসড়ায় নাম ছিল না শুধু স্ত্রীর। জানতে চাওয়া হয়, ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকায় বাবার নাম জানু শেখ আর ১৯৬০ সালের জমির দলিলে জান মহম্মদ কেন? আকবর বলেন, “আমি বোঝাই, ভোটার তালিকা তৈরির সময়ে ভোটকর্মীরা ডাক নাম লিখে নিয়ে যান। এনআরসি কর্মীরা কি বুঝলেন জানি না, ওই নথির ভিত্তিতে আমার আট ছেলেমেয়ে ও চার নাতি-নাতনির নাম ঢুকে গেল। বাদ পড়েছি আমি!”
লারুয়াজান গ্রামের ৫৫ বছর বয়সি মহিরুন্নেসা ও তাঁর স্বামী জোছন আলি এবং তিন দেওরের নাম বাদ। অথচ প্রথম দু’টি খসড়াতেই তাঁদের নাম ছিল। নাগরিকত্ব বাঁচানোর উপায় খুঁজতে তিনি দৌড়ে এসেছেন হাতিশোলা গ্রামে। সেখানে আইনজীবীদের একটি দলকে নিয়ে হাজির গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী, ‘ঘরের ছেলে’ আমন ওয়াদুদ। হাতিশোলা, মাঝরটপ, সোনতলি, সমরিয়া, গরৈমারি এলাকার বহু গ্রামেই গড়ে ২০ শতাংশ মানুষের নাম তালিকার বাইরে। আমনরা গ্রামে গ্রামে সভা করে মানুষকে বোঝাচ্ছেন, নাম বাদ মানেই তাঁরা দেশহীন হয়ে পড়েননি। পুলিশ কাউকে ধরবে না। রয়েছে আইনি প্রক্রিয়া। তেমনই এক সভাতে মহিরুন্নেসা, মইনুদ্দিন, আকবর আলিদের পাশাপাশি হাজির অসুস্থ মিরচান্নেসা। গ্রামের ৬০ জনকে নিয়ে সভায় এসেছেন তিনি। মিরচানের পরিবারের ৬ জনের নাম বাদ। বাদ ৯ বছরের নাতনিও। তাঁর উদ্বেগ নিজেকে নিয়ে নয়। বলেন, ‘‘নিজের জন্য ভাবি না। কিন্তু আমার ছোট্ট নাতনিটা যেন দেশহীন হয়ে না পড়ে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy