চার দিন ঘুরেও প্রাপ্তির ঝুলি কার্যত শূন্য! দিল্লি সফর সেরে খালি হাতেই আজ কলকাতা ফিরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অথচ চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেননি তৃণমূল নেত্রী। জওহরলাল নেহরুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী সম্মেলনে সনিয়া গাঁধী চেয়েছিলেন, মমতা আসুন। ফোনে আহমেদ পটেলের এই বার্তা পেয়ে এক দিন আগেই দিল্লি উড়ে আসেন মমতা। গোটা দেশে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখতে কোনও আঞ্চলিক জোটের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতেই দিল্লি উড়ে আসেন তিনি। ইচ্ছে ছিল সম্মেলনের মাধ্যমে সেই জল মেপে নেওয়া। কিন্তু সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতির গুরুত্ব ততটা নেই বুঝে এবং নেহরু কমিটির আয়োজক হিসেবে মুকুল ওয়াসনিকের মতো নেতাদেরও মঞ্চে বসে থাকতে দেখে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ চেপে রাখেননি মমতা। কংগ্রেসের শীতল মনোভাব আঁচ করতে পেরে প্রথম দিনের প্রথম ঘণ্টার অনুষ্ঠান শেষে সেই যে মমতা সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যান, দু’দিনের অনুষ্ঠানে তার পর আর ওমুখো হননি তিনি। ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, সম্মেলনে লালুপ্রসাদ, নীতীশ কুমার বা মুলায়ম নিজেরা আসেননি। প্রতিনিধি পাঠিয়ে দায়িত্ব সেরেছেন। সেখানে তৃণমূলের দলনেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খোদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেসের উচিত ছিল মমতাকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া। যা তারা করেনি।
এক হাতে কংগ্রেস, অন্য হাতে বিজেপি মমতা চেয়েছিলেন এক সফরে দুই পাখিই মারতে। কংগ্রেসের গা-ছাড়া মনোভাবে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী সনিয়ার দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত না থেকে সোজা চলে যান লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়ি। দেখা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও। মমতার যুক্তি, সাংবিধানিক ও সামাজিক কারণেই ওই সাক্ষাৎকার। তৃণমূলেরও ব্যাখ্যা, কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পর মমতা এই প্রথম দিল্লিতে পা রাখলেন। তাই এক দিকে সাংবিধানিক সম্পর্ক ও অন্য দিকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখতেই তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। যদিও বিরোধীরা তা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, সারদা-খাগড়াগড় নিয়ে জর্জরিত মমতা বিষয়গুলিকে ধামাচাপা দিতেই কংগ্রেসের ডাকে দিল্লি গিয়ে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন!
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব বিশ্লেষণ করে এক তৃণমূল নেতারও মন্তব্য, “এ বারের সফরে মনে হচ্ছে আমও গেল ছালাও গেল!” কংগ্রেস বা বিজেপি কারও কাছেই কার্যত হালে পানি পাননি মমতা। উল্টে বিতর্কে জড়িয়েছেন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে। একটি সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সাক্ষাৎকারের সময় তাঁর মাইক্রোফোন খুলে ফেলা ও মাঝপথে উঠে যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় নতুন করে অস্বস্তিতে জড়িয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ওই তৃণমূল নেতার মূল্যায়ন, “সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে উল্টে নেতিবাচক বার্তা গিয়েছে। গোটা সফরে লাভের লাভ কিছুই হল না।”
অথচ লোকসভা ভোটের পর থেকে রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্তের পরিপ্রেক্ষিতে যে ভাবে সনিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে মমতা দিল্লি এসেছিলেন, তা রাজ্য-রাজনীতিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছিলেন অনেকে। একদা দু’শরিকের মধ্যে দূরত্ব কমবে বলেও মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের বক্তব্য, নেহরুর মঞ্চকে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বৃহত্তর লড়াইয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারত কংগ্রেস। কিন্তু মমতাকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া বা তাঁকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া তো দূর, সবাইকে নিয়ে ছবি তোলার মতো সৌজন্যটুকুও দেখায়নি কংগ্রেস। মমতার প্রতি সনিয়া-রাহুলের ব্যবহার ছিল শীতল। ফলে আগামী দিনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে কংগ্রেসের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ আঞ্চলিক দলগুলির এক জোট হওয়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হতে পারত, তা অঙ্কুরেই বিনাশ হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ কংগ্রেস। তাদের যুক্তি, নেহরুকে নিয়ে মঞ্চ ক্ষুদ্র রাজনীতির জায়গা নয়।
এখন প্রশ্ন, সনিয়া কি আদৌ মমতার হাত ধরার কথা ভাবছেন? পশ্চিমবঙ্গে মমতা-বিরোধী ভোট এক জোট করতে প্রদেশ কংগ্রেস চাইছে বামেদের হাত ধরতে। বামেদের সঙ্গে সমঝোতা করে তৃণমূল বিরোধী কর্মসূচি গ্রহণের দাবিতে সনিয়ার কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের অবস্থান কী হবে, তা এখনও অমীমাংসিত। মমতার বিরুদ্ধে যে ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা থেকেও দূরে থাকতে চাইছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্বের যুক্তি, সব দিক বিবেচনা করেই মমতা প্রশ্নে কিছুটা দূরত্ব রাখার কৌশল নিয়েছেন সনিয়া-রাহুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy