Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
National News

সংবাদ চ্যানেলে নিষেধাজ্ঞায় পিছু হটল কেন্দ্র

জরুরি অবস্থার স্মৃতি ফিরিয়ে এনে যে ভাবে শুক্রবার দু’টি চ্যানেলের উপরে অকস্মাৎ নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাতে সংবাদমহল ক্ষুব্ধ।

ছবি: এপি।

ছবি: এপি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০৩:০০
Share: Save:

গতকাল সন্ধেয় নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল ৪৮ ঘণ্টার জন্য। কেরল তো বটেই, দেশ জুড়ে নাগরিক সমাজ এবং সংবাদমাধ্যমের বড় অংশ মুখর হন প্রতিবাদে। শনিবারই মালয়ালম চ্যানেল এশিয়ানেট নিউজ এবং মিডিয়া ওয়ান-এর সম্প্রচার চালু হল আবার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানাল, গতকাল রাত দেড়টা নাগাদ এশিয়ানেট এবং আজ সকাল সাড়ে ন’টায় মিডিয়া ওয়ানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।

জরুরি অবস্থার স্মৃতি ফিরিয়ে এনে যে ভাবে শুক্রবার দু’টি চ্যানেলের উপরে অকস্মাৎ নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাতে সংবাদমহল ক্ষুব্ধ। এ দিন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে পুণেতে এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর অবশ্য দাবি করলেন, ‘‘মোদী সরকার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি দায়বদ্ধ। তবে সংবাদমাধ্যমকেও স্বাধীনতার ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে।’’ মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সাংবাদিকেরাও নানা ভাবে বোঝাতে চেয়েছেন, মোদী তো বটেই প্রকাশও নাকি এই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না।

নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে জল্পনা ছড়ায়, চ্যানেলগুলির তরফে নতিস্বীকার করা হয়েছে কি না। সে প্রসঙ্গে এশিয়ানেট-এর সম্পাদক এম জি রাধাকৃষ্ণন জানান, নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরে তাঁরা মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন। ‘‘ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন নেই। তবে আমাদের বক্তব্যটা ওঁদের বোঝাতে চেয়েছিলাম।’’ মিডিয়া ওয়ান-এর প্রধান সম্পাদক সি এল টমাসের বক্তব্য, তাঁরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। বরং আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার মধ্যেই কেন্দ্র স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে নিষেধ তুলে নিয়েছে। টমাসের কথায়, ‘‘আমরা যে ভাবে কাজ করছিলাম, সে ভাবেই করে যাব।’’

আরও পড়ুন: স্থায়ী কমিটিতে দেখা মেলে না বহু সাংসদেরই

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় কোপ পড়ার এই ঘটনায় কেন্দ্র যে অস্বস্তিতে, সেটা চাপা থাকেনি জাভড়েকরের কথায়। তাঁর মন্ত্রকই নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ তুলেছিল, সংশ্লিষ্ট চ্যানেল দু’টির প্রতিবেদন ‘পক্ষপাতদুষ্ট, কেননা তারা সিএএ-সমর্থকদের গুন্ডামির উপরে ইচ্ছাকৃত ভাবে বেশি জোর দিচ্ছে। মনে হচ্ছে, তারা দিল্লি পুলিশ এবং আরএসএস-এর সমালোচক।’ জাভড়েকর এখন বলছেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন, প্রয়োজনে নির্দেশ জারি করবেন এবং তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রীও ব্যাপারটি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। জরুরি অবস্থার কথা এ দিন জাভড়েকরই তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘জরুরি অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ নিয়ে আমরাই সরব হয়েছিলাম, জেলে গিয়েছিলাম।’’ ১৯৭৫-১৯৭৭-এর কালপর্বে ইন্দিরা গাঁধীর সেই জমানা এখনও কুখ্যাত হয়ে রয়েছে সংবাদমাধ্যম থেকে শিল্পসাহিত্য— সেন্সরের দাপাদাপিতে। সংবাদপত্রের অফিসে বিদ্যুতের তার কেটে দেওয়ার অভিযোগ, সাদা পাতা ছেপে প্রতিবাদের স্মৃতি মলিন হয়নি আজও।

কিন্তু মোদী জমানায় বিরোধী দল থেকে নাগরিক সমাজের বড় অংশেরই অভিযোগ, এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় যে ভাবে বেড়ি পরানো হচ্ছে, তা ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থাই’। প্রতিবাদের স্বর দেখলেই দেশদ্রোহ, শহুরে নকশাল ইত্যাদি বলে দেগে দেওয়া, জেলে পুরে দেওয়া, মামলা ঠুকে দেওয়ার বিরাম নেই। সংবাদমাধ্যমেও জো হুজুর বৃত্তিরই রমরমা। তবে পদে পদে জরুরি অবস্থার কথা তুলে কংগ্রেসকে তুলোধনা করা বিজেপি শিবিরের পক্ষে খাতায়কলমে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা মুশকিল। আগের মেয়াদেও তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ভুয়ো খবর রোখার ধুয়ো তুলে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। মোদীর হস্তক্ষেপে তা বাতিল করতে হয়। এ বার জাভড়েকরের মন্ত্রককেও পিছু হটতে হল।

কাল রাত থেকেই কেরলে শুরু হয়ে গিয়েছিল রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ। আজ সকালে কংগ্রেস, বাম নিন্দায় সরব হয়। শশী তারুর, সীতারাম ইয়েচুরি, রমেশ চেন্নিথালা, পি চিদম্বরমরা সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। এই পদক্ষেপকে ‘ফাসিস্ত এবং অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দেন তাঁরা। দিল্লিতে সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Kerala Malayalam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy