প্রতীকী ছবি।
বাজারে আনাজের দামে আগুন। পেট্রল-ডিজেলে হাত ছোঁয়ানো ক্রমশ কঠিন হচ্ছে। এ বার যেন আমজনতার ধৈর্যের আরও বেশি পরীক্ষা নিতেই চলতি মাসে সপ্তাহ দুয়েকেরও কম সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় বার দাম বাড়ল রান্নার গ্যাসের। গৃহস্থের ১৪.২ কেজি (ভর্তুকিহীন) ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ১৯ কেজি, দু’ধরনের সিলিন্ডারেরই। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি জানাল, কলকাতায় আজ থেকে ১৪.২ কেজির সিলিন্ডারের দাম বাড়ছে আরও ৫০ টাকা। এর আগে গত ২ ডিসেম্বরও বেড়েছিল ৫০ টাকা। অর্থাৎ, দু’দফায় মোট ১০০ টাকা। এ বার সাধারণ মানুষকে ভর্তুকিহীন সিলিন্ডার কিনতে হবে ৭২০.৫০ টাকায়। ১৯ কেজির দামও আজ ফের ৩৬ টাকা বেড়েছে। দু’দফায় মোট ৯১.৫০ টাকা। দাঁড়িয়েছে ১৩৮৭.৫০ টাকায়। ফলে হোটেল-রেস্তরাঁর মতো বাণিজ্যিক কাজকর্মের খরচও বাড়বে। মাত্র এক মাসে রান্নার গ্যাসের দাম এতটা বাড়ায় ক্ষোভের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। বিশেষত করোনার জেরে চারপাশে আর্থিক সঙ্কট যখন তীব্র, বহু মানুষের রুজি-রোজগার যখন অনিশ্চিত, শিল্প ও আমজনতা যখন সব ঝড়-ঝাপ্টা সয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
প্রচলিত নিয়মে প্রতি মাসের শেষ দিনে তেল সংস্থাগুলি পরের মাসের রান্নার গ্যাসের দাম জানায় ডিস্ট্রিবিউটরদের। সেই অনুযায়ী গত ৩০ নভেম্বর সংস্থাগুলি জানায়, ডিসেম্বরে কলকাতায় ১৯ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৫৫.৫০ টাকা বাড়লেও, ১৪.২ কেজির ভর্তুকিহীন গ্যাস একই থাকবে (৬২০.৫০ টাকা)। কিন্তু দিন দুয়েক বাদে রাত ২টোর পরে আচমকাই ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে পৌঁছয় তাদের বার্তা, ৫০ টাকা বেড়ে কলকাতায় নতুন দাম হচ্ছে ৬৭০.৫০ টাকা। এই অবস্থায় সিলিন্ডারের দাম বাড়লেও কেন্দ্র তাঁদের প্রাপ্য ভর্তুকির অঙ্ক বাড়ায়নি, এই অভিযোগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে গ্রাহকদের মধ্যে। কলকাতায় যার অঙ্ক মাত্র ১৯.৫৭ টাকা।
এই প্রেক্ষিতে সোমবার যখন ভর্তুকির ভবিষ্যৎ নিয়ে অসন্তোষ আরও চড়ছে সংশ্লিষ্ট মহলের মধ্যে, তখন রাতের দিকে আচমকা দ্বিতীয় বার ডিস্ট্রিবিউটরদের দাম বৃদ্ধির কথা জানায় তেল সংস্থাগুলি। সংস্থা সূত্রের দাবি, বিশ্ব বাজারে রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্যই দেশেও তা বাড়ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, করোনাজনিত আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে এত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে গ্রাহকদের এতখানি ধাক্কা কেন দিল মোদী সরকার? উঠেছে আরও একটি প্রশ্ন, এ বারও কি গ্রাহকদের ভর্তুকি বাড়বে না? প্রথম দফার দাম বৃদ্ধি ঘোষণার পরেও ভর্তুকির অঙ্ক জানায়নি কেন্দ্র বা তেল সংস্থাগুলি। ৫০ টাকা দাম বাড়লেও গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির টাকা জমা পড়ার পরে নজরে আসে গত তিন মাসের নামমাত্র অঙ্কেই তা স্থির হয়ে রয়েছে। এ বার তো আরও ৫০ টাকা বেশি লাগবে ভর্তুকিহীন সিলিন্ডার কিনতে।
আরও পড়ুন: সমন্বয় বাড়ানোর উপরেই জোর দিলেন রাওয়ত
বেশি আয়ের প্রেক্ষিতে উচ্চবিত্তদের ভর্তুকি ছাঁটাই করলেও, কম রোজগেরেদের ক্ষেত্রে তা চালু রেখেছে মোদী সরকার। তবে দ্বিতীয় ইউপিএ আমলের চেয়ে ভর্তুকির সিলিন্ডারের দাম ধাপে ধাপে বাড়িয়ে তার পরিমাণ ছাঁটাইয়ের পথেই যে তারা হাঁটছে, এটা স্পষ্ট। গত অগস্ট থেকে ভর্তুকির সিলিন্ডারের দাম ও ভর্তুকির অঙ্ক ঘোষণা বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রচলিত নিয়মে কর বাদে ভর্তুকিহীন সিলিন্ডারের দামের চেয়ে ভর্তুকির সিলিন্ডারের দামের ফারাকটাই দিত সরকার। কিন্তু ভর্তুকির সিলিন্ডারের দাম ঘোষণা না-করায় সেই হিসেবে গ্রাহকের প্রাপ্য অঙ্কের আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি খোদ তেল মন্ত্রকও জানায়, গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে ভর্তুকিযুক্ত সিলিন্ডারের দাম ৪৯৪.৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫৯৪ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, সেই হিসেবেই একজন গ্রাহকের ভর্তুকির টাকা গত এক বছরে প্রায় ১০০ টাকা কমেই গিয়েছে। এ বার কি বাড়তি ভর্তুকি মিলবে, নাকি অচিরেই পুরোপুরি ভর্তুকি তুলে দেবে মোদী সরকার, প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর জন্য বরাদ্দ হল কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এবং বুলেটপ্রুফ গাড়ি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy