Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ইস্তাহারে প্রতিশ্রুতি, তবু নিশ্চিন্ত নন সমকামীরা

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৩৭৭ ধারা অপরাধের তকমামুক্ত হওয়ার পরে প্রথম ভোটেও কিছুটা ধন্দে গীতালি চক্রবর্তী।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

গত সেপ্টেম্বরে বুকের উপরের পাথরটা সরেছে কিছুটা। কিন্তু নতুন অধ্যায় শুরুর আগে আশঙ্কাও কাজ করছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৩৭৭ ধারা অপরাধের তকমামুক্ত হওয়ার পরে প্রথম ভোটেও কিছুটা ধন্দে গীতালি চক্রবর্তী। তাঁর পুত্র নিউ টাউনের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারে চোখ বুলিয়েও ২৫ বছরের সমকামী ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে মা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন কই?

রূপান্তরকামী তথা ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে বৈষম্যমুক্ত আইন তৈরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কংগ্রেস। তৃতীয় লিঙ্গভুক্ত বা রূপান্তরকামীদের ক্ষমতায়নের উল্লেখ বিজেপি-র ইস্তাহারেও। কিন্তু দেশের বিপুল সংখ্যক সমকামী পুরুষ বা মহিলার স্বাভাবিক ভাবে বাঁচার অধিকার নিয়ে জোরালো কণ্ঠ কোথায়? ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সমলিঙ্গে বিয়েতেও এ বার স্বীকৃতি চান গীতালি। যাতে নির্ভয়ে এক ছাদের নীচে থাকা বা বিষয়-সম্পত্তির মালিকানার আইনি অধিকার পান সমলিঙ্গের যুগলেরা। তাঁর আরও আকুতি, ‘‘আমার ছেলেটা তো সন্তান দত্তক নেওয়ার কথাও ভাবে। সমকামী দম্পতিরা কবে সেই অধিকার পাবেন?’’

‘স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এর আদলে সমলিঙ্গের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে একমাত্র সিপিএমের ইস্তাহারে। সম্পত্তির মালিকানা বা পরে বিবাহ-বিচ্ছেদ, খোরপোষ নিয়ে জটিলতা দূরে হটানোর কথাও রয়েছে। বিজেপি-কংগ্রেসের ইস্তাহারে সমকামীদের কথা তত স্পষ্ট নয়। এ দেশে কয়েক দশক ধরে সমকামী মেয়েদের আন্দোলনের শরিক মীনাক্ষী সান্যালের কথায়, ‘‘রূপান্তরকামীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণের মতোই সমকামীরা নিজেদের শর্তে বাঁচা ও সংসার করার অধিকার প্রত্যাশা করেন।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তবু সামগ্রিক ভাবে সমকামী ও রূপান্তরকামীদের নিয়ে যৌন সংখ্যালঘু সমাজের কথা ভোটের ময়দানে আলোচনা ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখছেন অনেকে। সুপ্রিম কোর্টে ৩৭৭ ধারা নিয়ে রায়ের সময়ে উঠে এসেছিল, এ দেশে সমকামী জনসংখ্যা ১০.৪ কোটি (সব মিলিয়ে আট শতাংশ)। গত কয়েক বছরে একাধিক আন্তর্জাতিক সমীক্ষাও ইঙ্গিত দিয়েছে, ভারতে যৌন সংখ্যালঘুদের প্রতি সহমর্মিতার মাত্রা বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কোনও কর্মীর যৌন পরিচিতি যে চাকরিতে বাধা হতে পারে না, সেই বার্তাটি ছড়িয়ে ন্যাসকম-ও ‘ডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইনক্লুসিভিটি সেল’ গড়েছে। তবু সমকামিতার সার্বিক স্বীকৃতি নিয়ে নিশ্চিন্ত নন অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। সুপ্রিম কোর্ট শবরীমালার মন্দিরে সব বয়সের মেয়েদের প্রবেশাধিকার দিলেও রাজনৈতিক-সামাজিক চাপ সেই অধিকারের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে— মনে করাচ্ছেন তিনি। সমপ্রেমী এক জুটির গল্প নিয়ে তৈরি ‘নগরকীর্তন’ সিনেমায় অন্যতম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করা ঋদ্ধি বলছেন, ‘‘সমকামী ছেলেমেয়েদের ভালবাসা, ঘর বাঁধার আইনি রক্ষাকবচটা এ বার জরুরি।’’

খাস কলকাতাতেও সমকামীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হতাশ অধুনা হায়দরাবাদ নিবাসী যুবক অভিজিৎ কুন্ডু। নিজের সমকামী পরিচয় নিয়ে গত বছর একটি বই লেখেন অভিজিৎ। তখন তিনি শহরের একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যার শিক্ষক। তাঁর অভিযোগ, ওই বইটি বেরোনোর পরেই স্কুল থেকে কার্যত বহিষ্কৃত হতে হয় তাঁকে। এর আট মাস বাদে রুজির টানে শেষে এই শহরই ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। হায়দরাবাদের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন। ‘‘সমকামী বলে কলকাতায় যে বৈষম্যের শিকার হয়েছি, তা ভোলার নয়,’’ বলছেন অভিজিৎ। তাঁর মতে, ‘‘আইন সমকামী সত্তাকে স্বীকৃতি দিলেও লোকের মনের সমকামী-বিদ্বেষ বা হোমোফোবিয়ার মুক্তির রাস্তা সোজা নয়।’’

কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায় অবশ্য দলের ইস্তাহারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলছেন, ‘‘অবশ্যই সমকামীদের পাশে আছি।’’ কিন্তু দমদমের তৃণমূল প্রার্থী, সংসদীয় রাজনীতিতে পোড়খাওয়া সৌগত রায় কোনও ঝুঁকিতে নেই। তাঁর সাফ কথা, ‘‘সমকামীদের অধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যা-ই করুক, এ সব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কিছু বলব না।’’ সমকামিতার কথা মহাভারতে আছে ঠিকই, কিন্তু গত দেড় শতকে সেই প্রাচীন ভারত থেকে সমাজ কিছুটা সরে এসেছে বলেই মনে করেন দমদমের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর পর্যবেক্ষণ: ‘‘মানুষ আইনের জন্য নয়, বরং আইনই মানুষের জন্য! আগামীর চলার পথটাও মানুষ ঠিক করে নেবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy