Advertisement
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
অন্য সুর মমতা ও মায়াবতীর
general-election-2019-national

ফলের আগেই বিরোধীদের নিয়ে বৈঠক চান রাহুল গাঁধী

বড় দলগুলির মধ্যে কংগ্রেস, এনসিপি বা টিডিপি-র এই পরিকল্পনা থাকলেও একই সুরে বাজছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মায়াবতীর মতো নেত্রী। তৃণমূল শিবিরে বলা হচ্ছে, আগে ফল প্রকাশ হোক। কার ঝুলিতে কত ভোট, সেটা স্পষ্ট হোক। তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

রাহুল গাঁধী। ছবি পিটিআই।

রাহুল গাঁধী। ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০৪:৫৬
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শেষ হতে ঠিক দু’সপ্তাহ বাকি। শেষ দফার ভোট ১৯ মে এবং তার চার দিন পরে ফলপ্রকাশ। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা না করে কংগ্রেস-সহ বেশ কিছু বিরোধী দল নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করে দিল। লক্ষ্য, ভোট শেষ হওয়ার পরে এবং ফল প্রকাশের আগে, ২১ তারিখ দিল্লিতে সমস্ত বিরোধী দলকে এক মঞ্চে এনে একটি বৈঠক করা। রাহুল গাঁধী, চন্দ্রবাবু নায়ডু, শরদ পওয়ারের মতো নেতারা মনে করছেন, ফলাফল যা-ই হোক, ১৯ তারিখেই লোকসভা নির্বাচনের ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সে দিন বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রচারিত হবে। তার ভিত্তিতে বিরোধীরা কতটা মজবুত অবস্থানে রয়েছে, তা ঝালিয়ে নেওয়া যাবে। সেই সঙ্গে বিরোধীদের অধিনায়ক কে হবেন, সেটা নিয়েও আলোচনা এগিয়ে রাখা যেতে পারে।

তবে বড় দলগুলির মধ্যে কংগ্রেস, এনসিপি বা টিডিপি-র এই পরিকল্পনা থাকলেও একই সুরে বাজছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মায়াবতীর মতো নেত্রী। তৃণমূল শিবিরে বলা হচ্ছে, আগে ফল প্রকাশ হোক। কার ঝুলিতে কত ভোট, সেটা স্পষ্ট হোক। তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য আহমেদ পটেল ফোন করছেন অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের। চন্দ্রবাবু নায়ডু প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, তিনি ফল প্রকাশের আগে বৈঠকের পক্ষপাতী। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার কথায়, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর বিদায় সুনিশ্চিত। ফল প্রকাশের পরে বিরোধী নেতারা বসে পরের সরকারের অভিন্ন কর্মসূচির রূপরেখা স্থির করে ফেলবেন।’’ গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করতে আজ সন্ধ্যায় কংগ্রেসের কোর কমিটির বৈঠক বসে। কংগ্রেসের এক নেতার মতে, ফলাফলে যদি দেখা যায় বিরোধী শিবিরে সবচেয়ে বড় দল কংগ্রেস, তা হলে রাহুল গাঁধীই হবেন প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী। তবে কিছু দিন আগে পওয়ার বলেছেন, মায়াবতী, মমতা, চন্দ্রবাবুর মধ্যে যে কেউই ভাল প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। রাহুল গাঁধীর নাম কিন্তু তাঁর মুখে শোনা যায়নি। এর আগে প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে অখিলেশ তাঁর বাবা মুলায়ম সিংহ যাদবের নাম ভাসিয়েছিলেন। কিন্তু আজ তিনি জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নেই ‘নেতাজি’। তবে উত্তরপ্রদেশই যে দেশের আগামী প্রধানমন্ত্রী দেবে, সে কথা তিনি ফের জানিয়েছেন। সেই ব্যক্তিটি কে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গোটা বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফল প্রকাশের আগে বৈঠক করা অর্থহীন। এসপি, বিএসপি, তৃণমূলের মতো বেশ কিছু দল নিজেদের রাজ্যে সরাসরি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ২৩ তারিখ বোঝা যাবে, কে কোথায় দাঁড়িয়ে। তৃণমূলের এক নেতা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেন, ‘‘ভারতের রাজধানী দিল্লি হতে পারে। কিন্তু কোনও রাজ্যের রাজধানীও ফল প্রকাশের পরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।’’ দলীয় সূত্রের বক্তব্য, ত্রিশের উপরে আসন পাবে ধরে নিয়ে চন্দ্রবাবু, মায়াবতী, মুলায়মের মতো নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়া এবং প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজেকে সামনে রাখতে চাইছেন। তাই এখনই কংগ্রেসের সঙ্গে বসে, রাহুল গাঁধীকে বিরোধী জোটের নেতা হিসেবে তুলে ধরতে নারাজ তিনি।

আজ রায়বরেলীতে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে প্রশ্ন করা হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিজের নাম এগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে রাহুল গাঁধীর এত সঙ্কোচ কেন? প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘আমার ভাই সঙ্কোচ বোধ করে না। এখন সে নিজের কাজ করছে।’’ আবার আজ মুলায়ম সিংহের ভাইপো তথা এসপি নেতা ধর্মেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কা বলছেন যে বিজেপিকে সাহায্য করার বদলে তিনি মরে যেতেও রাজি। কিন্তু সহারনপুর, বিজনৌর, দেওড়িয়ার মতো কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়ে তিনি আসলে কাকে

সাহায্য করছেন, ভেবে দেখেছেন কি!’’

সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে, মোদীকে পরাস্ত করতে যে-ভাবে সার্বিক ঐক্যের কথা বলা হয়েছিল, তা এখন আর সে ভাবে উজ্জ্বল দেখাচ্ছে না। গোড়ায় যে অভিন্ন কর্মসূচির কথা ভাবা হয়েছিল, সেটাও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। চন্দ্রবাবু নায়ডু অবশ্য প্রত্যেকটি বিরোধী দলের কাছেই আবেদন করছেন, মোদী যাতে সরকার গড়তে না পারে তার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করা উচিত। আগামী সপ্তাহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচার করতে পশ্চিমবঙ্গে যাবেন তিনি। সেখানেও তাঁর কথা হবে মমতার সঙ্গে।

বিজেপির অন্দরমহলে আশঙ্কা, এনডিএ জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসবে না। বিজেডি, টিআরএস, জগনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। পরিকল্পনা রয়েছে ফলাফল প্রকাশিত হলে তড়িঘড়ি নতুন শরিকদের নিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে যাবেন নরেন্দ্র মোদী। এই রামনাথ কোবিন্দ মোদীর জমানাতেই রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। অন্য দিকে, কংগ্রেসের লক্ষ্য, এখন থেকেই ছোট ছোট দল-সহ যত বেশি সংখ্যক বিরোধীদের সমর্থনপত্র সঙ্গে নিয়ে রাখা। যাতে সরকার গড়ার লড়াইয়ে পিছিয়ে না পড়তে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE