বডনগরের সেই দোকান। নিজস্ব চিত্র
চৌকিদারকে এ বারের ভোটে চা বেচার তেমন সুযোগ দিচ্ছেন না রাহুল গাঁধী। কিন্তু ভোটে যদি ফের ‘চা-ওয়ালা’ হতে হত! তার প্রস্তুতি ছিল পুরোদমে। অন্তত বডনগর স্টেশনে একটি মাত্র চায়ের দোকান তার সাক্ষ্য বইছে। যদিও চা সেখানে মেলে না। একটি ভাঙাচোরা টিনের ‘স্মারক’। তাতে লেখা— ‘নরেন্দ্র মোদীর চায়ের দোকান। আপনি সিসিটিভি-র নজরে।’
মনে আছে, বেশ কয়েক বছর আগে এই স্টেশন চত্বরটিতে থিকথিকে ভিড় হত। সার সার দোকান ছিল চারপাশে। এখন সব উধাও। বছর দুয়েক আগেই খোদ নরেন্দ্র মোদী এসেছিলেন এই স্টেশন চত্বরে। তার আগে তাঁর সংস্কৃতি মন্ত্রক রেল মন্ত্রকের সঙ্গে মিলে ৮ কোটি টাকা খরচ করে গোটা স্টেশনটি নতুন করে সাজায়। কিন্তু ‘মোদী’-র চায়ের দোকানটি ছোঁয়াও হয়নি। সেটি অবিকল পুরনো অবস্থাতেই রাখা হয়েছে।
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে তথ্য জানার অধিকারে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই স্টেশনে নরেন্দ্র মোদী চা বেচেছেন, এমন কোনও প্রমাণ কি আছে? রেল মন্ত্রক উত্তর দিয়েছিল— না। মোদী সরকারের সেই জবাব বিস্তর ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বটে। তবে তাতে প্রমাণ হয় না, মোদী চা বেচেননি। তবে গত লোকসভা ভোটে তো বটেই, সম্প্রতিও কংগ্রেস নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, মোদীর চা বেচাও ‘জুমলা’ নয় তো?
ক’দিন আগেই ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেছেন, “বডনগর স্টেশনটি আজও আছে। কিন্তু সেই কেটলি এখনও পর্যন্ত কেউ দেখেননি, মোদী যাতে চা বেচতেন। আজ পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি, যিনি মোদীর কেটলি থেকে চা খেয়েছেন!” সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রায় চার দশকের ‘বন্ধুত্ব’ ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রাক্তন নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ার। তিনিও বলেছেন, “মোদীকে চা বেচতে কখনও দেখা যায়নি। শুধু সমীহ কাড়তে চা-ওয়ালা ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন!”
সত্যিই কি মোদী কখনও চা বেচেননি? চা বানিয়ে কাউকে খাওয়াননি? এই প্রশ্নের জবাব একমাত্র পুরনো লোকেরাই দিতে পারেন। কিন্তু স্টেশন চত্বরে তেমন লোক কই? গোটা স্টেশন এখন লাল পাথরে সাজছে। ভাঙাচোরা চায়ের দোকানের পাশে পুরনো টিকিট কাউন্টার। সেখানে উঁকি দিতে ক’জন বেরোলেন। কিন্তু তাঁরা ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক। অগত্যা স্টেশনের বাইরে বেরোতে হল। প্রথম যে দোকান পাওয়া গেল, সেটি রমনজি তাখাজির। দুই প্রজন্মের দোকান। রমনজির বয়সও ষাটের উপরে। প্রশ্নটি প্রথম তাঁকেই করলাম, নরেন্দ্র মোদীকে কখনও চা বানিয়ে বেচতে দেখেছেন? জবাব এল— “আমি তো কখনও দেখিনি। আগে দামোদরদাসের (মোদীর বাবা) চায়ের দোকান ছিল স্টেশনের বাইরে। যেখানে এখন চায়ের দোকান সাজিয়ে রাখা হয়েছে, সেখানে ছিল না ওটা। কিন্তু দেখুন, ওই এক চায়ের দোকান সাজানোর জন্য আশপাশের একশো দোকান উচ্ছেদ করে দিয়েছে। সকলে এখন বেকার।”
কিন্তু কেউ কি দেখেছেন? “একটু দূরেই এক বৃদ্ধাশ্রম চালান মোদীর দাদা সোমভাই। সেখানে যান,” হদিস দিলেন প্রবীণ দোকানি। ‘শ্রী সাই ধাম’ বৃদ্ধাশ্রম। ভিতরে ঢুকতেই আরাম কেদারায় জনা তিনেক বৃদ্ধ হাতজোড় করে বললেন, “জয় শ্রীকৃষ্ণ!” তাঁদেরই এক জন প্রজাপতি যাদব। প্রশ্ন একই। উত্তর: “আমরা তো দেখিনি, ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করুন।” ম্যানেজার, সচিন পটেল। বয়সে নবীন। ঘোর বিজেপি সমর্থক। কর গুনে বলে দিলেন, দুটি ছাড়া গুজরাতের সব আসন যাবে বিজেপির ঝুলিতে। সোমভাই শহরে নেই। সচিনের কাছে উত্তরও নেই। কিন্তু উত্তর কে দিতে পারেন, তা নিয়ে ভাবলেন কিছু ক্ষণ। ফোনও করলেন কয়েক জনকে। অবশেষে একটা ঠিকানা দিয়ে বললেন, ‘‘মোদীর স্কুলের সহপাঠীর কাছে যান। জাসুদ খান, ইনি পাঠান।’’ ঠিকানা ধরে ধরে মসজিদের নীচে এক দোকানে পাওয়া গেল জাসুদ খানকে। মোদীর সঙ্গে স্কুলে পড়েছেন দশ বছর। দু’বছর আগে মোদী যখন বডনগরে এসেছিলেন, তখন দেখাও হয়েছে। মোবাইলে সে ছবিও দেখালেন। ব্যাঙ্ক থেকে অবসর নিয়ে এখন ছোট দোকান চালান। “আপনি দেখেছেন নরেন্দ্র মোদীকে চা বানাতে?” জাসুদ বললেন, “চা তো ও বানাত না! তার জন্য অন্য লোক ছিল। কিন্তু স্টেশনের পাশেই আমাদের বি এন হাইস্কুল। কচ্চিৎ-কদাচিৎ ছুটির পরে সময় পেলে বাবা-কাকাকে সাহায্য করতে যেত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy