মতপার্থক্য দূর করতে ডাকা হয়েছিল বৈঠক। শেষ পর্যন্ত তা রয়েই গেল। আজ দিল্লিতে কমিশন কর্তাদের বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছে, নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙা সংক্রান্ত বৈঠকে বিরোধী মতকে নথিভুক্ত করা হলেও চূড়ান্ত নির্দেশিকায় তার কোনও উল্লেখ থাকবে না। ফলে যে প্রশ্নে কার্যত নির্বাচন কমিশনে বিদ্রোহ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা তা আংশিক মানা হল বলেই মনে করছেন নির্বাচনী বিশেষজ্ঞেরা। খোদ লাভাসার বক্তব্য, ‘‘আমি এখনও বলছি কমিশনের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। সংখ্যালঘু মত নির্দেশে উল্লেখ করা প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হওয়াও প্রয়োজন।’’
ভোট ঘোষণার পর থেকেই নানা প্রশ্নে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল কমিশনের অভ্যন্তরে। কিন্তু শেষ দফা ভোটের আগে তা প্রকাশ্যে এনে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটান নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা। লোকসভা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে যিনি পদমর্যাদায় দ্বিতীয়।
গত সপ্তাহে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে চিঠি লিখে তিনি জানান, বৈঠকে তাঁর বিপরীতধর্মী মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া ও তা নথিভুক্ত না করায় তিনি বৈঠক থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিতর্ক সামনে আসতেই একটি বিবৃতি দিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা জানান, অতীতেও কমিশনারদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। বিষয়টি মেটাতে আজ গোটা বেঞ্চের বৈঠক ডাকে কমিশন।
কমিশনের অভ্যন্তরে লাভাসার সঙ্গে বাকিদের বিরোধ শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কু-কথার অভিযোগ জমা পড়ার পর থেকে। চলতি নির্বাচনে সেনা নিয়ে কোনও প্রচার করা যাবে না বলে নির্দেশিকা জারি করেছিল কমিশন। সেই নির্দেশিকা উপেক্ষা করে একাধিক স্থানে বালাকোট-পুলওয়ামার উল্লেখ করে প্রচার চালান প্রধানমন্ত্রী। সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে কু-কথা বলার অভিযোগ জমা পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে। দু’টি ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন লাভাসা। কিন্তু বাকি দুই নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা ও সুশীল চন্দ্র শাস্তির বিপক্ষে মত দেন। সূত্র বলছে, লাভাসা চূড়ান্ত নির্দেশে তাঁর বিরোধী মত নথিভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধও খারিজ করে দেওয়া হয়। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে এক দিন আগে প্রচার শেষ করে দেওয়ার যে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত কমিশন নিয়েছিল তাতেও মত ছিল না লাভাসার। তারপরেই বিদ্রোহের পথে হাঁটেন লাভাসা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আজ বৈঠকের শেষে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে ওঠা নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার শুনানিতে সেই প্রার্থীর পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা সমস্ত বক্তব্যকে নথিভুক্ত করা হবে। কিন্তু চূড়ান্ত রায়ে সংখ্যালঘু মত স্থান পাবে না। কমিশনের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘ধরা যাক তিন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে দু’জন প্রার্থীর পক্ষে অর্থাৎ তাঁকে ছাড় দেওয়ার পক্ষে ও এক জন প্রার্থীর বিপক্ষে অর্থাৎ শাস্তির পক্ষে মত দিলেন। যিনি বিপক্ষে মত দিয়েছেন তিনি সংখ্যালঘু হওয়ায় ওই প্রার্থীকে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা কমিশনের। এত দিন আলোচনার সময়ে সংখ্যালঘু
মতকে লিপিবদ্ধ করা হত না। এ বার থেকে তাই হবে। এটুকুই নিয়ম বদলাতে পেরেছেন লাভাসা। কিন্তু চূড়ান্ত নির্দেশিকায় এক নির্বাচন কমিশনার যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে মতামত জানিয়েছেন তা সর্বসমক্ষে আনা
হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy