বিজেপি এ বার আরও বেশি আসন নিয়ে সরকার গঠন করবে, দাবি করলেন রাম মাধব। —ফাইল ছবি
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব। সোমবার যিনি বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, মঙ্গলবার সেই রাম মাধবই বললেন, আগের বারের চেয়েও এ বার বেশি আসনে জিতে সরকার গঠন করবে বিজেপি। এমনকি, কারও সাহায্যের দরকার হবে না বলেও দাবি বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদকের।
সোমবার একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে রাম মাধব বলেছিলেন, ‘‘২৭১টি আসন (ম্যাজিক ফিগার) পেলেই আমরা খুশি হব।’’ সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সাহায্য নিতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন রাম মাধব। কিন্তু মঙ্গলবার একটি জাতীয় টিভি চ্যানেলে তিনিই দাবি করলেন, ‘‘আগের বারের চেয়েও আরও বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। সরকার গঠনের জন্য অন্য কোনও দলের সাহায্যের প্রয়োজন হবে না। যদিও প্রধানমন্ত্রী মোদী সবাইকে সঙ্গে নিয়েই চলবেন।’’
লোকসভা ভোটের পারদ চড়তেই বিরোধী শিবির একজোট হওয়ার চেষ্টায় ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের তোড়জোড় শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, অন্ধ্রে তেলুগু দেশম পার্টি, জম্মু কাশ্মীরে এনসি, উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টির মতো নেতৃত্ব এক ছাতার তলায় আসার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। যদিও কংগ্রেস এই শিবিরে যাওয়া নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত কার্যত ঝুলিয়ে রেখেছে। অন্য দিকে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের (কেসিআর) নেতৃত্বে অকংগ্রেস, অবিজেপি জোট গঠনের চেষ্টাও হয়েছে। যদিও কেসিআর-এর আহ্বানে তেমন সাড়া মেলেনি।
কিন্তু বিজেপি বা কংগ্রেস ছাড়া এই সব জোটের পক্ষে নির্নায়ক শক্তি হিসাবে উঠে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন রাম মাধব। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘চন্দ্রবাবু, কেসিআর-এর মতো নেতারা কিং-মেকার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু আমাদের হাতেই কিং রয়েছে, কিং মেকারের প্রয়োজন পড়বে কেন?’’
আরও পডু়ন: বুথ জ্যাম, রিগিংয়ের চেনা ছবি উধাও, আরামবাগে অন্য ভোট
আরও পড়ুন: রাজ্যে বিজেপিকে ৩২ আসন দিলেন মোদী, দিদি দিলেন গোল্লা
কিন্তু আরও দু’দফা ভোট বাকি থাকতেই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক এত আত্মবিশ্বাস পেলেন কোথায়? রাম মাধবের ব্যাখ্যা, উত্তরের রাজ্যগুলিতে বিজেপি তার ক্ষমতা ধরে রাখবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে আসন বাড়বে। তাঁর দাবি, ‘‘এই সব রাজ্যে মোদীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। কোনও সন্দেহই নেই উত্তর পূর্বের ২৫টির মধ্যে ১৮টি আসনই আমরা পাব।’’
কিন্তু রাম মাধব বললেন না দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের কথা। আগের বার এই রাজ্য থেকে ৭১টি আসন জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এ বার এসপি-বিএসপি জোট করায় সেই সংখ্যাটা অর্ধেকের চেয়েও কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। রাম মাধব উল্লেখ করেননি রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গ। এই তিন রাজ্যে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে যে ধ্বস নামতে পারে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা আগে থেকেই তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছন। ফলে সব মিলিয়ে রাম মাধবের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান পাল্টে ফেললেন দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দলের চাপেই সম্ভবত অবস্থান পাল্টে ফেলেছেন রাম মাধব। কারণ, এখনও দু’দফার ভোট বাকি রয়েছে। দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যেই যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে, তাহলে তার প্রভাব পড়তে পারে পরবর্তী দু’দফার ভোটে। সেই কারণেই দলের পক্ষ থেকে তাঁকে নতুন করে ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের শীর্ষনেতৃত্ব।
দেশাত্মবোধের জিগির তুলে সেনার নামে ভোট চাওয়ার অভিযোগে বার বারই মোদীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে একাধিক অভিযোগও হয়েছে। তার কয়েকটি কমিশন খারিজ করে দিলেও সুপ্রিম কোর্টেও এ নিয়ে মামলা হয়েছে। কিন্তু রাম মাধবের দাবি, ‘‘আমরা এটা বলছি, কারণ আমরাই দেশকে শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তুলতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy