Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ভোটে ব্রাত্য নন রূপান্তরকামীরা

লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্র থেকে নির্বাচন কমিশনের শুভেচ্ছা দূত হচ্ছেন রূপান্তরকামী সমাজকর্মী শ্রী গৌরী সবন্ত। 

নির্বাচন কমিশনের শুভেচ্ছা-দূত গৌরী সবন্ত

নির্বাচন কমিশনের শুভেচ্ছা-দূত গৌরী সবন্ত

চৈতালি বিশ্বাস 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৬
Share: Save:

প্রথম বারের জন্য ভোটে দাঁড়াচ্ছেন কোনও রূপান্তরকামী প্রার্থী। আম আদমি পার্টি-র (আপ) টিকিটে প্রয়োগরাজ থেকে লড়বেন উত্তরপ্রদেশের চিরপি ভবানী। অন্য দিকে, লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্র থেকে নির্বাচন কমিশনের শুভেচ্ছা দূত হচ্ছেন রূপান্তরকামী সমাজকর্মী শ্রী গৌরী সবন্ত।

নিজস্ব গোষ্ঠীর মানুষদের জন্য কাজ করতে উৎসাহী চিরপি। আপ ছাড়া এর আগে অন্য কেউ রূপান্তরকামীদের এই সুযোগ দেয়নি বলে তিনি জানান। একই সঙ্গে দরাজ গলায় নিজের দলকে তাঁর সার্টিফিকেট— ‘‘আপ সত্যিকারের প্রগতিশীল একটি দল।’’ আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ জানাচ্ছেন, তাঁর দলের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রয়েছে। এবং দলের কাজও সেটাই প্রমাণ করছে। অন্য দিকে, বিল এনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অপমান করা হয়েছে বলে বিজেপির সমালোচনা করেন তিনি।

একটি সাক্ষাৎকারে আপের রূপান্তরকামী ওই প্রার্থী বিজেপির উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘রূপান্তরকামী হয়ে আমরা অনেক কষ্ট ভোগ করেছি। বিজেপি আমাদেরকে ভিখারির চোখে দেখে। কিন্তু অরবিন্দ কেজরীবাল এবং তাঁর দল আমাদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নিবাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রথম বার তারা ভোটারদের কাছে পৌঁছতে কোনও রূপান্তরকামীকে দূত বেছেছে। এ বারের ভোটে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন করবেন গৌরী। তাঁদের উৎসাহিত করবেন বুথে গিয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য। ইতিমধ্যেই সেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের এই রূপান্তরকামী।

গৌরীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া— ‘‘সারা দিন ছুটে বেড়াচ্ছি। এই হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষগুলোকে বুথে পাঠাতে হবে না? এই প্রথম বার ওঁরা ভোট দেবেন!’’

মহারাষ্ট্রে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিচিত মুখ আরও এগারো জনের সঙ্গে গৌরীকে শুভেচ্ছা দূত হিসাবে বেছে নিয়েছে কমিশন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আদায়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছিলাম। এই দেশে আমিই প্রথম রূপান্তরকামীদের সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকারের পক্ষে আইনি লড়াই করেছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। একটি বিজ্ঞাপনের কাজও করেছি। যে কারণে মানুষের কাছে আমার একটা পরিচিতি রয়েছে। সেটাকে যদি তৃতীয় লিঙ্গের উন্নতির জন্য ব্যবহার করতে হয়, কেন নয়?’’ তবে কমিশনের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি শুধু রূপান্তরকামীদের স্বার্থের কথাই ভাবছেন না। গৌরী বলেন, ‘‘আমি যদি রূপান্তরকামী চিকিৎসক হতাম, তা হলে কি শুধু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরই চিকিৎসা করতাম? তা তো নয়।’’ গৌরী জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতি-নিরপেক্ষ ভাবে সামাজিক উন্নয়নে শামিল হতে আগ্রহী। তাই ভবিষ্যতেও কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন না। শোষিত মহিলা, যৌনকর্মী ও হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যই কাজ করতে চান।

তাঁর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য কাজ করে। ২০১৪ সালে এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এক যৌনকর্মীর কন্যা গায়ত্রীকে তিনি দত্তক নিয়েছিলেন। গৌরীর মন্তব্য— ‘‘মনে হয় না কারও মা হওয়ার জন্য শরীরে-মনে মেয়ে হওয়ার দরকার রয়েছে। মাতৃত্ব একটা সত্তা। আমি সেটা অনুভব করতে পারি।’’

গৌরী বলছেন, ‘‘আমার সমাজ এত দিন ভোট দিতে পারছিল না। এখন দেবে। লাইনে দিয়ে দাঁড়াবে! ভোটিং মেশিন অবধি ওদের নিয়ে যেতে পারাই আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। কাকে ভোট দিল, কেন দিল— এ সব পরের কথা!’’

রাস্তায় এখনও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মুখে পড়তে হয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের— মানছেন গৌরী। তার পরেও রাষ্ট্র যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটাধিকার নিয়ে ভাবছে, অবশ্যই তা আশার আলো।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy