Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মাইনরোধী গাড়ি কম, বোঝাল সুকমা

বাড়ন্ত মাইন নিরোধক গাড়ি। ফলে প্রাণ দিতে হল আধাসেনার ডজনখানেক জওয়ানকে। পরিকাঠামোগত এই অভাবের পাশাপাশি উঠে আসছে গোয়েন্দা-ব্যর্থতার দিকও। যে ভাবে হোলির ঠিক আগে সুকমা তথা দক্ষিণ বস্তারে হামলা চালিয়েছে তাতে অশনিসঙ্কেত দেখছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ০৪:৪৪
Share: Save:

বাড়ন্ত মাইন নিরোধক গাড়ি। ফলে প্রাণ দিতে হল আধাসেনার ডজনখানেক জওয়ানকে। পরিকাঠামোগত এই অভাবের পাশাপাশি উঠে আসছে গোয়েন্দা-ব্যর্থতার দিকও। যে ভাবে হোলির ঠিক আগে সুকমা তথা দক্ষিণ বস্তারে হামলা চালিয়েছে তাতে অশনিসঙ্কেত দেখছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের মতে, গত এক বছরে ওই এলাকায় মাওবাদী হামলা কমে এসেছিল। গোয়েন্দারা মনে করছিলেন, ওই এলাকায় ক্রমশ মাওবাদীরা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহের ওই হামলা চোখে আঙুল দেখিয়ে দিয়েছে গোয়েন্দাদের বিশ্লেষণ আদৌ সঠিক নয়। ফের ওই এলাকায় শক্তি বাড়াতে পেরেছে মাওবাদীরা।

গত শনিবার সকালে সুকমার ভেজ্জি থানা এলাকায় ঘন জঙ্গলের মধ্যে সিআরপিএফের ২১৯ নম্বর ব্যাটালিয়নের রোড ওপেনিং পার্টি-র (আরওপি) উপরে অতর্কিতে হানা দেয় মাওবাদীরা। গোয়েন্দারা জানান, মাইন বিস্ফোরণে কনভয়ের গাড়ি বেসামাল হয়ে যেতেই হামলা চালায় মাওবাদীরা। গুলি বিনিময়ে ঘটনাস্থলেই ১২ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ওই কনভয়ের সঙ্গে কোনও মাইন নিরোধক গাড়ি ছিল না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, ওই গাড়ি থাকলে মাইন বিস্ফোরণের প্রাথমিক ধাক্কা সামলানো যেত। কেন ওই গাড়ি ছিল না তা খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায়, মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলির জন্য বছর দু’য়েক আগে ৩৫০টি মাইন নিরোধক গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু কেনা হয়েছিল ১২২টি। মন্ত্রক সূত্রের দাবি, তার মধ্যে অন্তত কুড়ি শতাংশ গাড়ি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। আর যেগুলি ঠিক রয়েছে সেগুলির অর্ধেকের বেশি গত বছরে কাশ্মীরে অশান্তি বেড়ে যাওয়ায় সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে এখন হাতে গোনা মাইন নিরোধক গাড়ি পড়ে রয়েছে। পুলিশ বা প্রশাসনের কোনও বড় কর্তা উপদ্রুত এলাকায় গেলে তবেই ওই গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে প্রাণ হারাতে হচ্ছে জওয়ানদের।

আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ের সুকমায় মাওবাদী হামলা, মৃত্যু ১২ সিআরপিএফ জওয়ানের

তবে মাওবাদীদের মোকাবিলায় সরকার যে কোনও ভাবে ঢিলে দিতে রাজি নয় তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, গত এক বছরে মাওবাদী দমনে যথেষ্ট সক্রিয়তা দেখিয়েছে কেন্দ্র। বিশেষ করে ছত্তীসগঢ়ে। ২০১৫ সালে দেশে বাহিনীর হাতে ৮৯ জন মাওবাদী খতম হয়েছিল। কিন্তু গত বছরে খতম হয়েছে ২২২ জন মাওবাদী। যার মধ্যে ১৩৫ জন ছত্তীসগঢ়ের। বেড়েছে আত্মসমর্পণের ঘটনাও। ২০১৫ সালে ২২৩৮ জনের পরিবর্তে এ বছর সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৩২৮২-তে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের দাবি, ‘‘মাওবাদীদের গড় দক্ষিণ বস্তারে গত এক বছরে হামলা ২২ শতাংশ কমে এসেছে। ২০১৫ সালে ৩২৬টি মাওবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তা ২০১৬ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২৫২-তে।’’ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা অবশ্য মনে করছেন, নজরদারির অভাবে দক্ষিণ বস্তারে মাওবাদীরা ফের শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ফলে ওই এলাকা আগামী দিনে ফের অশান্ত হয়ে উঠতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mine disposal van Sukma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE